বিজ্ঞাপন

৭৮৬ কোটি থেকে বাজেট ছাড়াল সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা

June 11, 2020 | 2:58 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয় ১৯৯৭২ সালের ৩০ জুন। ওই সময়কার আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের ঘোষণা করা সেই বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। ৪৯ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে দেশের ৫০তম বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই বাজটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে গত ৪৯ বছরের ব্যবধানে দেশের বাজেটের আকার বাড়ছে ৭২২ গুণ!

বিজ্ঞাপন

এদিকে, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার এ বছর টানা দ্বাদশ বাজেট উত্থাপন করতে যাচ্ছে। এর শুরুটা হয়েছিল ২০০৯ সালে। এরপর ১২ বছরের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বাজেটের আকার বেড়েছে চার গুণ!

আরও পড়ুন- ‘বড়’ ঘাটতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট

২০০৯ সালের ১১ জুন দেশের ৩৯তম বাজেট সংসদে উত্থাপন করেছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সেটি ছিল এক লাখ কোটি টাকা ছাড়ানো দেশের প্রথম বাজেট। ২০০৯-১০ অর্থবছরের ওই বাজেটের চূড়ান্ত আকার ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। এরপর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ লাখ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪ লাখ কোটি টাকা ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ লাখ কোটি টাকার সীমা ছাড়িয়ে যায় জাতীয় বাজেট।

বিজ্ঞাপন

বাজেটের আকার বৃদ্ধির এই হারকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১১ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে। তার অর্থ— বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বাড়ছে। অর্থনীতির আকার বাড়লে বাজেটের আকারও বাড়বে— এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়লেও বাস্তবায়নের হার ক্রমান্বয়ে কমছে। অর্থবছরের শুরুতে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়, বছর শেষে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাজেটের আকার বৃদ্ধিও কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়লেও বাজেটের বাস্তবায়নের হার কমছে। তাই বাজেটের আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়নের হার বাড়াতে হবে। বাজেটের গুণগত মান ও বাস্তবায়নের হার না বাড়লে এসব বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বাজেট বলা যায়।

কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাজেট

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩০ জুন (১৯৭২-৭৩ অর্থবছর) দেশের প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয়। ওই বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। একবছর পরই ১৯৭৪ সালের ১৯ জুন প্রস্তাবিত বাজেট পেরিয়ে যায় এক হাজার কোটি টাকার সীমা। ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরের বাজেটটির আকার ছিল এক হাজার ৮৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ১৯৮১ সালের ৬ জুন ঘোষণা করা হয় দশম বাজেট, আকার ছিল ৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন – কমছে না করপোরেট কর, বহাল থাকছে ব্যক্তি আয়কর সীমা

১৯৯১ সালের ১২ জুন ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে ২০তম বাজেট ছিল ১৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকার। ২০০০ সালের ৮ জুন ২০০০-০১ অর্থবছরে ৩০তম বাজেটের আকার ছিল ৩৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। ২০১০ সালের ১০ জুন ২০১০-১১ অর্থবছরের জন্য দেশের ৪০তম বাজেট ঘোষণা করা হয়। এর আকার ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। এবারে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য আজ ঘোষণা করা হচ্ছে ৫০তম বাজেট, যার আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।

আওয়ামী লীগের টানা ১২ বাজেট

২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তিন মেয়াদে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এরই মধ্যে ২০০৯ সাল থেকে তারা ১১টি বাজেট ঘোষণা করেছে। আজ ঘোষণা হবে আওয়ামী লীগের টানা দ্বাদশ বাজেট। স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো দল এর আগে টানা ১২টি বাজেট উত্থাপনের নজির গড়তে পারেনি।

এদিকে, তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর সরকারের দ্বিতীয় বাজেট এটি। সার্বিকভাবে এটি আওয়ামী লীগের ২২তম বাজেট।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- করোনা সংকট: কেমন বাজেট চান অর্থনীতিবিদরা?

কোন অর্থমন্ত্রী কয়টি বাজেট দিয়েছেন

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৪৯টি বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। এই ৪৯টি বাজেট উত্থাপন করেছেন ১২ জন ব্যক্তি। তাদের মধ্যে একজন রাষ্ট্রপতি, ৯ জন অর্থমন্ত্রী ও দু’জন অর্থ উপদেষ্টা। ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ১২টি করে বাজেট উত্থাপন করেছেন বিএনপি সরকারের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ ও এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর মধ্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত আওয়ামী লীগের হয়ে ১০টি ও জাতীয় পার্টির হয়ে দুইটি বাজেট উত্থান করেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগের অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ছয়টি; এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান চারটি; বাংলাদেশর প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তিনটি করে এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্ট ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ও এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী এম এ মুনিম দুইটি করে বাজেট পেশ করেন। অন্যদিকে ড. মীর্জা নুরুল হুদা, ডক্টর এ আর মল্লিক, ড. ওয়াহিদুল হক, ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রত্যেকে একটি করে বাজেট দিয়েছেন। এর মধ্যে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। আর আজ দ্বিতীয় বাজেট দিতে যাচ্ছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আরও পড়ুন- বাজেট ২০২০-২১: সামাজিক সুরক্ষা আওতায় আসছে ১ কোটি মানুষ

কোন সরকারের বাজেট কয়টি

২০১৯ সাল পর্যন্ত  ঘোষিত ৪৯টি বাজেটের মধ্যে চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের চার জন অর্থমন্ত্রী ২১টি বাজেট দিয়েছেন। এরা হলেন— তাজউদ্দিন আহমেদ, ড. এ আর মল্লিক, এ এম এস কিবরিয়া, আবুল মাল আবদুল মুহিত ও আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিএনপির তিন মেয়াদের শাসনামলে তিন জন ১৬টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এরা হলেন— সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, ড. মীর্জা নুরুল হুদা ও এম সাইফুর রহমান।

জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে ৯টি বাজেট উত্থাপন করেছেন চার জন অর্থমন্ত্রী। এদের মধ্যে রয়েছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, এম সাইদুজ্জামান, এম এ মুনিম ও ড. ওয়াহিদুল হক। অন্যদিকে তিনটি বাজেট দিয়েছে সাবেক দুই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু’জন অর্থ উপদেষ্টা। তারা হলেন— ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

আরও পড়ুন-

অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট ১৪ লাখ কোটি টাকার

আগামী বাজেটে ‘কালো টাকা সাদা’ করার বিপক্ষে অর্থনীতিবিদরা

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন