বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে ‘ট্রিপল হ্যাটট্রিক’ ফুটবলার ময়না

June 12, 2020 | 11:47 pm

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: ঢাকার ফুটবলে এক ম্যাচে নয় গোল করে ট্রিপল হ্যাটট্রিক গড়া ইতিহাসের একমাত্র ফুটবলার ওয়াহিদুজ্জামান ময়না আর নেই। শুক্রবার ভোররাতে না ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনি। কয়েকদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সুস্থ হয়ে একদিন আগে বাসায় এসে শুক্রবার মধ্যরাতে অসুস্থ হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন এই ফুটবলার।

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আরামবাগ বাসী ও মেরিনার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাসান উল্লাহ খান রানা।

তিনি তার স্মৃতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে জানান, ‘ সাবেক কৃতি এক ফুটবলার। ঢাকার মাঠে সম্ভবত এখনও তিনিই একমাত্র ফুটবলার, যার দখলে এখনও আছে ত্রিপল হ্যাটট্রিকের এক অনন্য রেকর্ড। ১৯৭৫ সাল। আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ বনাম বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাবের ম্যাচ।সেসময় দ্বিতীয় বিভাগের মাচ হতো আউটার স্টেডিয়ামে। সাদা-কালোর শার্টওয়ালা জার্সির আরামবাগের তুখোড় স্টাইকার ময়না ভাই। লিগে নিয়মিত গোল পাচ্ছিলেন তিনি।’

স্মৃতিচারণ করে তিনি লিখেন, ‘আরামবাগে আমরা দুই পারিবারের বসবাস পাশাপাশি দুই বাড়িতে। আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। ত্রৈমাসিক পরীক্ষা শেষ। ময়না ভাইকে বললাম খেলা দেখতে নিয়ে যেতে। আম্মার অনুমতি পেতেই তিনি রাজি হলেন। পরের দিন বাংলাদেশ স্পোর্টিংয়ের সাথে ম্যাচ দেখতে তার হাত ধরেই বাসা থেকে হেঁটে রওয়ানা স্টেডিয়ামে। খেলা শুরু। একে একে নয় নয়টি গোল দিলো আমাদের সাদা কালোর আরামবাগ। আর সবগুলোই আবার ময়না ভাইয়ের দেওয়া গোল। ৯ গোলের বড় জয় সাথে বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন রেকর্ড। খোজ মেজাজে সবাই। তবে ম্যাচ জিতে বরাবরের মতো মিছিল করে আরামবাগ ফেরার লক্ষণ দেখলাম না কারও মাঝেই। সবার গন্তব্য ঢাকা স্টেডিয়াম।’

বিজ্ঞাপন

‘কেন? ময়না ভাই বললেন, আবাহনী-মোহামেডানের বড় ম্যাচ। সেটি দেখে তারা বাসায় যাবেন। আমিও রাজি হলাম। ২১ নম্বর গেট দিয়ে জীবনে প্রথমবারের মতো ঢুকলাম সেসময়ের ঢাকা স্টেডিয়ামে। ২১ নম্বর গেট দিয়ে সোজা দোতলার নির্ধারিত প্লেয়ার্স গ্যালারিতে। সেসময় ভিআইপি’র সাথে গ্যালারির ওই জায়গাটুকুই শুধু দোতলা। আর পুরো স্টেডিয়াম এক তলা। ম্যাচের এক ঘণ্টা আগেই পুরো স্টেডিয়াম পূর্ণ। আর সবাই যেন মোহামেডানের সমর্থক। আজকের শিল্প ভবনের সামনের কিছু অংশে আবাহনীর সমর্থকরা বসেন। এর বাইরে পুরো স্টেডিয়ামের ৯০ ভাগ জায়গাই সাদা কালোর দখলে। আরামবাগের ফুটবলাররা ভাল জায়গা পেতে জার্সি না পাল্টেই গ্যালারিতে।’ যোগ করেন তিনি।

একসঙ্গে মোহামেডান ও আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সমর্থক বনে যাওয়ার গল্প বললেন তিনি, ‘কিছুক্ষণ পর একই রকম জার্সি পড়ে মাঠে নামলো মোহামেডান। পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে শ্লোগান একটাই মোহামেডান-মোহামেডান। নিজের অজান্তে আমার মুখ থেকেও মোহামেডান—মোহামেডান। এরই মধ্যে আবাহনীর ফুটবলরার মাঠে নামলেন। এরপর ম্যাচ….. ঐতিহাসিক ম্যাচ। ৪-০ গোলের বড় ব্যবধানে আবাহনীর পরাজয়। নানা নাটক। আমি তো রীতিমতো আপ্লুত। সাদা কালোর দুই দল। দুই দলই জিতেছে। বাসায় এসে আমার খুশি দেখে কে! বনে গেলাম আরামবাগ আর মোহামেডানের সমর্থক। পরের দিন সকালে পত্রিকায় ময়না ভাইয়ে পাসপোর্ট আকারের ছবিসমেত খবর। তখনই আমার কাছে দেশসেরা ক্লাব মোহামেডান আর দেশসেরা ফুটবলার ময়না ভাই।’

ফুটবল ছেড়ে ফুটবলার ময়নার নতুন জীবনের কথা উল্লেখ করেন তিনি, ‘পরে দিন যতই গড়িয়েছে ততই সব বদলে গেছে। ময়না ভাই, মাঠের ফুটবল ছেড়ে কাজ করেছেন সাইড লাইনে। ছিলেন ডাক সাইটের ক্লাব কর্মকর্তা। একবয়সে এসে সবকিছু ছেড়ে আল্লাহ’র পথে হেটেছেন। আরামবাগের মতিঝিলস্থ ঝিলপাড় জামে মসজিদ ম্যানেজমেন্টে ছিলেন দীর্ঘদিন। সম্প্রতি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছিলেন নিপুনতার সাথে।’

বিজ্ঞাপন

সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই ফুটবলার। সেই স্মৃতিটাও জানালেন, ‘রাতে আমার ঘর থেকে শুনলাম হেঁটে হেঁটে অ্যাম্বুলেন্সের দিকে যাচ্ছেন আর বলছেন দরজাটা বন্ধ করে দাও। হ্যা। ময়না ভাই গেছেন, দরজা বন্ধই আছে। ময়না ভাই আর বলবেন না দরজাটা খোল। বাসার ছাদে ফুল গাছে পানি দিতেও দেখবো না ময়না ভাইকে। ময়না ভাই যে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।’

সারাবাংলা/জেএইচ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন