বিজ্ঞাপন

‘আমরা করেছি জয়’

December 9, 2017 | 9:27 pm

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

কুমিল্লার দেবীদ্বারের রতন চন্দ্র সূত্রধর প্রতিবন্ধিতা জয় করে এ বছর এইচএসসিতে অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছেন। তিনি এখন স্থানীয় এক কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি সিআরপি থেকে প্রশিক্ষণ নেন কম্পিউটার বিষয়ে। এখন তিনি কম্পিউটার অপারেটর।

শনিবার বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে আনুষ্ঠানিক নিয়োগপত্র পেয়েছেন। সিদ্ধিরগঞ্জ ইপিজেডে ঊর্মি গ্রুপের কারখানায় কর্মস্থল হতে যাচ্ছে জানিয়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে রতন চন্দ্র সারাবাংলাকে বলেন, ‘পা না থাকলেও আমি এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। বিজিএমই-এর মাধ্যমে চাকরি হওয়ায় আমি খুব খুশি। খুব ভালো লাগছে। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশের নয়।’

প্রতিবন্ধিতা জয়ের কাহিনী শুনিয়ে রতন চন্দ্র বলেন, ‘গ্রামের মানুষেরা আমাকে যথেষ্ঠ ভালোবাসে। আমি একটা কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতা করতাম। আমার পড়ানোর স্টাইল দেখে ছাত্ররা মুগ্ধ হতো। সবাই আমাকে শ্রদ্ধা করত। অন্যান্য শিক্ষকরাও ভালোবাসতেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকতার পাশাপাশি আমি কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ নেই। এমএস ওয়ার্ড, এমএস এক্সেল ও গ্রাফিক্সের কাজ শিখি। বিজিএমইএ-এর সহায়তায় এখন আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। চাকরি পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। তারা খুব উপকার করেছেন।’

রতন বলেন, ‘অনেক ভবনে র‌্যাম্প থাকে না। এতে চলাচলে সমস্যা হয়। আবার সহজে বাসেও উঠা যায় না। প্রতিনিয়ত এসব সমস্যায় পড়তে হয়। কাজ করতে কোনো সমস্যা নেই। সব কাজই করতে পারি। তবে যখন আমি হাঁটুগেড়ে হাঁটি তখন নিজেকে খুব ছোট মনে হয়।’

বাংলাদেশ বিজনেস ডিজঅ্যাবিলিটি নেটওয়ার্ক (বিবিডিএন) ও বিজিএমইএ-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘জব ফেয়ার পারসন উইথ ডিজএবিলিটস’তে শুধু রতনের নয়, কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ১০০ জনের।

বিজ্ঞাপন

রতনের মতো আরও একজন মাগুরার কাজী বিল্লাল। মাগুরা সদরের একটি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র তিনি। জানতে চাইলে সারাবাংলাকে এই তরুণ বলেন, ২০১৪ সালে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে স্পাইনাল কর্ডে ইঞ্জুরি দেখা দেয়। তখন ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা চলছিল। ৪টি পরীক্ষা দিতে পেরেছিলাম। তখন সিআরপিতে নিয়ে আসা হয়। প্রচণ্ড ভেঙে পড়ি। সেখানে আমাকে নানাভাবে বুঝানো হয়, আমার দ্বারাও সম্ভব। আজ আমি পেরেছি। চাকরি পেয়ে উচ্ছ্বসিত বিল্লাল বলেন, ‘আমি যে ভেঙে পড়েছিলাম, চাকরি পাওয়ার সেই হতাশা দূর হলো।’

তার মতে, ‘সাহায্য নয়, সমাজের সর্বক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের প্রয়োজন সহযোগিতা। তার ভাষ্যে- সাহায্য নয়, সহযোগিতা করলে আমরা আরও বেশি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব। নতুবা সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে আবারও হতাশ হতে হবে।’

মেলায় সিভি জমা দিতে এসেছিলেন তরুণী সীমা ইকবাল। দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা জয় করে তিনি ব্যারিস্টারি পাস করেছেন। কথা বলে জানা গেছে, তিনি ইউনিভার্সিটি অব দ্য ওয়েস্ট অব ইংল্যান্ড ব্রিস্টল থেকে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরেছেন। গ্রামীণফোন ও ব্র্যাক ইন বাংলাদেশ-এর স্টলে সিভি জমা দেওয়ার কথা জানিয়ে সারাবাংলাকে সীমা বলেন, ‘আমার যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। তখন আমি ও লেভেল পরীক্ষা দিই। প্রতিবন্ধী হিসেবে আমিই প্রথম ও লেভেল পরীক্ষা দিয়েছি। তারপর এ লেভেল। ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে বার অ্যাট ‘ল পড়তে দেশের বাইরে যাই। তারপর সেখান থেকে লেখাপড়া শেষে দেশে ফিরে আসি।’

সমস্যা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রতিনিয়ত যে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তা আমার প্রতিবন্ধিতা। পুরো বিশ্বকে বলতে চাই, বাংলাদেশকে বলতে চাই, এখানে যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তাদেরকে বলতে চাই, যেহেতু বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, ডিজিটাল দেশ যদি প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন করে দেওয়া না হয়, তাদের কর্মক্ষেত্র তৈরি করা না হয়, তাহলে বাংলাদেশ কী উন্নত হল, হল না!’

বিজ্ঞাপন

মেলায় চাকরি খুঁজতে সাভারের সিআরপিতে থেকে এসেছেন পপি আক্তার। ময়মনসিংহের ভালুকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে ২০১৫ সালে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বয়স যখন দেড় বছর তখন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবন্ধিতার শিকার হই। আমরা যেন উপযুক্ত কাজটিই পাই সরকার যেন সে ব্যবস্থা করে। আমাদের যেন কোনো ক্ষেত্রে অবহেলার শিকার হতে না হই।’

মেলা ঘুরে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মতো আরও অনেকেই প্রতিবন্ধিতা জয় করেছে। স্বপ্নপূরণে কারো কারো হয়েছে কর্মক্ষেত্রও। তবে বেশিরভাগই রয়েছেন অপেক্ষায়।

সারাবাংলা/ইএইচটিি/এমআই/এসআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন