বিজ্ঞাপন

এলাকার উন্নয়নে তৃতীয় দফায় ২০ কোটি টাকা করে পাচ্ছেন এমপিরা

June 18, 2020 | 11:58 pm

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের ২৮০টি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যরা (এমপি) নিজ নিজ এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে তৃতীয়বারের মতো বরাদ্দ পাচ্ছেন। এ দফায় বরাদ্দের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা। এই টাকা দিয়ে তারা এলাকার রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, হাটবাজার ও বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন করতে পারবেন। তবে একবারে নয়, চার ভাগে প্রতিবছর পাঁচ কোটি টাকা করে এই টাকা বরাদ্দ পাবেন তারা। ‘অগ্রাধিকারভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩’ শীর্ষক এই প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৪৭৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, এরই মধ্যে তাদের কাছে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি আগামী রোববার (২১ জুন) প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলেও আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারিত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংসদ সদস্যদের এলাকার উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দের তৃতীয় উদ্যোগ এটি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠনের পর প্রত্যেক এমপি নিজ আসনের অবকাঠামো উন্নয়নে ১৫ কোটি টাকা করে বরাদ্দ পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করলে নিজ নিজ আসনের জন্য এমপিরা আরও ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ পান। এবার তৃতীয়বারের মতো একই উদ্দেশ্যে বরাদ্দ পাচ্ছেন সংসদ সদস্যরা।

দেশে সংসদীয় আসন ৩০০টি হলেও এই প্রকল্পের আওতায় থাকছে ২৮০টি আসন। মূলত দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন এলাকায় যে ২০টি সংসদীয় আসন রয়েছে, সেই আসনগুলোকে এই প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়েছে। এছাড়া সংরক্ষিত নারী এমপিদেরও এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মূলত পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন তো পল্লী এলাকা নয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সিটি করপোরেশন এলাকার সংসদীয় আসনগুলো স্থান পায়নি এই প্রকল্পে।’

সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, সংরক্ষিত মহিলা আসনে যারা সংসদ সদস্য রয়েছেন, তাদের তো নির্দিষ্ট কোনো সংসদীয় আসন নেই। তাছাড়া সিটি করপোরেশনের বাইরে প্রতিটি সংসদীয় আসনের জন্যই বরাদ্দ থাকছে। ফলে সংরক্ষিত নারী এমপিদেরও এই প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় দফার এই প্রকল্পের আওতায় নতুন করে উপজেলা সড়ক নির্মাণ করা হবে ৩০৫ দশমিক ২১ কিলোমিটার। এছাড়া ৩৬০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন, ৫ হাজার ৭৫ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক উন্নয়ন, এক হাজার ৯০ কিলামিটার গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, ৭ হাজার ৯৯২ মিটার গ্রামীণ সড়কে (১০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যের) সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

একনেকের জন্য তৈরি প্রকল্পের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে— এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠনের পর প্রত্যেক এমপি নিজ আসনের অবকাঠামো উন্নয়নে ১৫ কোটি টাকা করে পেয়েছিলেন। সেসময় প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৯২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এটি ২০১০ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালে জুনে শেষ হয়। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদেও এমপিদের ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে ওই প্রকল্প এটি চলমান রয়েছে। ওই প্রকল্পের মেয়াদ আরও একবছর থাকলেও সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদ মাথায় রেখেই চার বছরের জন্য এমপিদের আরও ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ সারাবাংলাকে বলেন, এমপিদের এলাকার উন্নয়নে বরাদ্দ সংক্রান্ত দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটি আগামী বছর জুনে শেষ হয়ে যাবে। এ পর্বের মূল্যায়ন করেছ বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। দুই-তিন মাস আগে প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সাধারণত একটি পর্বের মূল্যায়ন প্রতিবেদন ভালো না এলে আমরা অন্য একটি পর্বের জন্য সুপারিশ করি না। ফলে তৃতীয় পর্বের সুপারিশ করার অর্থই হলো আগের পর্বের মূল্যায়ন ভালো। তাছাড়া প্রকল্পের ওই দুই পর্ব গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ভালো ভূমিকা রেখেছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য আসলাম হোসেন সওদাগর সারাবাংলাকে বলেন, মানুষের মধ্যে অনেক সময় ভুল ধারণা থাকে যে এই টাকা বোধহয় সরাসরি আমাদের হাতে চলে আসে। ফলে আমরা ইচ্ছামতো ব্যয় করে থাকি। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই টাকা আমাদের হাতে আসেই না। বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে (এলজিইডি) আমরা পছন্দমতো প্রকল্পের তালিকা দিতে পারি। তারা সেগুলো বাস্তবায়ন করে দেন এই বরাদ্দ দিয়ে। ফলে আমাদের কাছে এই বরাদ্দ পাওয়ার অর্থ বরাদ্দের টাকা পাওয়া নয়, প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ পাওয়া।

আসলাম হোসেন সওদাগর আরও বলেন, এ ধরনের বরাদ্দের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ থাকাটা খুবই ভালো। কারণ এরকম সুযোগ থাকলে জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করা সহজ হয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন