বিজ্ঞাপন

একগাদা ওষুধ নয়, ‘মনের জোরেই’ করোনামুক্ত সিএমপি কমিশনার

June 22, 2020 | 4:58 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ১৮ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান। তিনি জানিয়েছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার চেষ্টা হলেও তিনি রাজি হননি। কোনো হাসপাতালেও ভর্তি হননি। বাসায় থেকে চট্টগ্রামের চিকিৎসকদের পরামর্শে ‘হালকা ওষুধ’ নিয়েই তিনি সেরে উঠেছেন। মূলত ‘মনে জোর থাকা’য় করোনা তাকে কাবু করতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

গতকাল রোববার নমুনা পরীক্ষার দ্বিতীয় প্রতিবেদনে সিএমপি কমিশনারের শরীরে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। সোমবার (২২ জুন) নগর পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার।

সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান জানিয়েছেন, গত ৪ জুন তার শরীরে জ্বর আসে। ৬ জুন পর্যন্ত জ্বর ও শরীর ব্যাথা ছিল। এর মধ্যে নমুনা দেওয়া হয়। ৯ জুন রাতে করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই তিনি আর অফিসে যাননি। চট্টগ্রামে সরকারি বাসায় একটি কক্ষেই তার বিচরণ এখনও।

চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার যখন জ্বর আসে, তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই চিকিৎসা আমি চট্টগ্রামেই নেব। আমি কোথাও যাব না। আইজিপি স্যার বলেছেন, তুমি ঢাকায় চলে আস। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলেছি- স্যার আমি চট্টগ্রামেই চিকিৎসা নেবো এবং সুস্থ হব, এই আত্মবিশ্বাস আমার আছে। আমার ট্রলি-ব্যাগ সব রেডি করা ছিল। কিন্তু আমি যাইনি। আমি আস্থা রেখেছি আমাদের পুলিশ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তারদের ওপর। ইনশল্লাহ তাদের পরামর্শে আমি সুস্থ হয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে, আত্মবিশ্বাসটাই এবং মনের জোরটাই হচ্ছে সুস্থ হওয়ার প্রধান পথ। আমাকে খুব বেশি, একগাদা ওষুধ খেতে হয়নি। চিকিৎসকদের পরামর্শে শুধু নরমাল অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েছি। তাতেই সুস্থ হয়েছি। করোনা আমাকে কাবু করতে পারেনি, কারণ আমার মানসিক শক্তি ঠিক ছিল।’ বলেন সিএমপি কমিশনার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এবং পত্রিকায় ও টিভিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং মারা যাওয়ার খবরে বরং মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়েছিল, এমনটাই জানালেন সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান।

‘একটা ঘরে একা একা থাকা, একাকীত্বের কারণে মন খারাপ হয়েছে মাঝে মাঝে। জানালায় তাকিয়ে দেখছি, আমার সন্তানেরা আমার জন্য দু’হাত তুলে দোয়া করছে। কষ্ট লেগেছে, খুব স্বাভাবিক। সারাদিন কিছু করার নেই। সেজন্য ফেসবুকে, অনলাইনে খবর পড়ে এবং টিভি দেখে সময় কাটাতে হয়েছে এবং হচ্ছে। চারদিকে খারাপ খবর দেখে মন খারাপ হয়েছে। নিজে অসুস্থ হওয়া নিয়ে কোনো মন খারাপ ছিল না, মানুষের মৃত্যুর খবর দেখে দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। তবে সাময়িকভাবে কষ্ট পেলেও মনোবল হারাইনি’, বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

তবে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. আবু বক্কর সিদ্দিক সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, আইসোলেশনে থেকেও কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান নিয়মিত অধঃস্তনদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। নিজ থেকে সবার খবর নিয়েছেন। সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন খবর দেখে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিয়েছেন।

জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বিভিন্ন ডিসিশন আমি নিজ থেকেই দিয়েছি। আমার অফিসাররা আমাকে কোনো ডিস্টার্ব করতে চাননি। আমিই তাদের ফোন করে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়েছি এবং ডিসিশন দিয়েছি।’

দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে ‘ঘরবন্দি’ হয়ে থাকা মানুষের মাঝে ত্রাণ পৌঁছানো, ডাক্তারদের হাসপাতালে আনা-নেওয়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে কাঁচাবাজার তৈরি, টেলিমেডিসিন সেবা চালুসহ বিভিন্ন মানবিক উদ্যোগ নিয়ে প্রশংসিত হয়েছে সিএমপি। এসব মানবিক উদ্যোগের প্রধান উদ্যোক্তা কমিশনার মাহাবুবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর নতুন উদ্যম আর নতুনভাবে প্রাণ ফিরে পেলাম। এটা মানুষের জন্য কাজে লাগাবো।’

আরও কয়েকদিন আইসোলেশনে থেকে পূর্ণোদ্যমে কাজে যোগ দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি করোনায় আক্রান্তদের জন্য প্লাজমা দেওয়ার আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাওয়া হয়েছিল বন্দরনগরীর মানুষের জন্য তার কোনো পরামর্শ আছে কি না। সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মানুষকে বলবো করোনাকে ভয় পাবেন না, আতঙ্কিত হবেন না। মনে জোর রাখুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। তাহলে করোনা আপনাকে ভয় পাবে।’

সারাবাংলা/আরডি/এমও

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন