বিজ্ঞাপন

‘রাজস্ব কর্মকর্তার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনেও ব্যবসায় প্রভাব পড়বে না’

June 22, 2020 | 7:38 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কমিশনারের অনুমতি ছাড়াই রাজস্ব কর্মকর্তাদের যেকোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। ব্যবসায়ী সংগঠন ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে রাজস্ব কর্মকর্তারা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন। তাতে ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এনবিআর বলছে, এতে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হবেন না। বরং ব্যবসায়ীদের সমস্যা দ্রুততম সময়ে সমাধান হবে। আর এই আইনের অপব্যবহার হলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনবিআর বিষয়টি মনিটরিং করবে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২২ জুন) বিকেলে সারাবাংলা ফোকাস অনুষ্ঠানে ‘এবারের বাজেটে ভ্যাট-ট্যাক্স কতটা জনবান্ধব’ বিষয়ক আলোচনায় আলোচকরা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সারাবাংলা ডটনেটের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এমএকে জিলানী। আলোচনায় অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. মাসুদ সাদিক, স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোং পার্টনার স্নেহাশীষ বড়ুয়া এফসিএ এবং গোদরেজ বাংলাদেশের সিএফও সন্দিপ হালদার।

আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. মাসুদ সাদিক বলেন, এবারের বাজেটে যেসব পরিবর্তন এসেছে, সবগুলো দেশের অর্থনীতিতে ভালো ফল আনবে। আমাদের শতভাগ ব্যবসা কাঠামো অনলাইনে নেই। এই সমস্যা সরকারের একার নয়। ব্যবসায়ীরা যদি সবকিছু অনলাইনে না করেন, তাহলে কিছুই হবে না। একইসঙ্গ জনগণকেও অনলাইনবান্ধব হতে হবে। অর্থাৎ সবকিছুই অটোমেশনের দিকে নিতে হবে।

বাজেটে কিছু আইন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে— এ প্রসঙ্গে এনবিআরের এই সদস্য বলেন, রেয়াতের দিক থেকে আমরা বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনছি। তবে এটি যদি ব্যবসায় সমস্যা তৈরি করে, তাহলে এটি বাতিল করা হবে। এটি আমাদের বিবেচনায় আছে। মানুষকে স্বস্তি দেয়, এমন কিছু করা হবে।  ব্যাংক হিসাবে আবগারী শুল্কে পরিবর্তন এসেছে, ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন নেই। যারা বেশি রাজস্ব দিতে সক্ষম, তাদের আকর্ষণ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে বিরক্ত করা হয়নি। এছাড়া কেন্দ্রীয় রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সেন্ট্রাল রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা প্রয়োজন, সেটি এখনো সম্ভব হচ্ছে না। তবে বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য আমাদের কিছু চিন্তা ভাবনা আছে, এগুলো সামনে বাস্তবায়ন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

বাজেটে রাজস্ব কর্মকর্তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযানে যাওয়ার ক্ষমতা প্রদান বিষয়ে মাসুদ সাদিক বলেন, একটি কমিশনারেটে ৭০ বা ৮০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন থাকে। রাজস্ব কর্মকর্তাদের এসব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে অনুমতি দেওয়ায় কাজ সহজ হবে। তবে কোনো কর্মকর্তা যদি দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনবিআর বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফলে এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হবে— এমন অভিযোগ সঠিক নয়। অন্যদিকে, অন্যান্য বিভাগে যেহেতু কর্মকর্তাদের অভিযানের ক্ষমতা আছে, তাই রাজস্ব কর্মকর্তাদেরও এই ক্ষমতা থাকা উচিত।

স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোং পার্টনার স্নেহাশীষ বড়ুয়া এফসিএ বলেন, দেশের বর্তমান অবস্থায় এই বাজেট দেওয়া ছিল চ্যালেঞ্জ। করপোরেট ট্যাক্স ২০১৪ সালের পর আর কমেনি। কিন্তু এবার কমলো। এটি সরকারের সাহসী সিদ্ধান্ত। একজন ব্যবসায়ী আগে ১০০ টাকায় ৩৫ টাকা ট্যাক্স দিতেন, এখন ৩২ টাকা ৫০ পয়সা দেবেন। এটা ভালো হয়েছে। এছাড়া আমাদের এবার ফাইন্যান্স মিলে ৩৩টি পরিবর্তন এসেছে। কিছু আইন নিয়ে সমস্যা আছে। রেয়াতের ব্যবস্থা ১৯৯১ সাল থেকে চলে আসছে। এটা নিয়ে আরও কাজ করা উচিত। ইনক্যাম ট্যাক্স নিয়ে গত ৫ বছর আমরা হাহাকার করছি। এবারে পরিবর্তন এসেছে। গার্মেন্টসের উৎসে কর নিয়ে কথা হচ্ছে। এটা আরও কমালে ভালো হতো।

তিনি আরও বলেন, ভ্যাট ব্যবস্থার আধুনিকায়ন হচ্ছে। সেন্ট্রাল রেজিস্ট্রেশনে আমরা কিছু পরিবর্তন চেয়েছিলাম, সেটা হয়নি। ৭৩ ও ৮৩ ধারায় রাজস্ব কর্মকর্তাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। একজন রাজস্ব কর্মকর্তা যেকোনো সময় যেকোনো প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালাতে পারবেন। বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার। ক্ষমতায়নটা ধীরে ধীরে করাটা উচিত ছিল। এছাড়া কোম্পানিকে সেবা দিলে সেটা উৎসে কর্তনে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো এটার জন্য প্রস্তুত না। সব কোম্পানি সময় মতো সেবার অর্থ পরিশোধ করে না। ফলে বিষয়গুলো নিয়ে আরও ভাবা উচিত।

বিজ্ঞাপন

গোদরেজ বাংলাদেশের সিএফও সন্দিপ হালদার বলেন, এই বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত সীমা বাড়ানোটা ভালো সিদ্ধান্ত। এই পরিস্থিতিতে এটি একটি জনবান্ধব সিদ্ধান্ত। তবে মধ্যম শ্রেণির করদাতাদের ওপর ভালো প্রভাব পড়েনি। ফলে মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়বে। এদিকে আরও একটু নজর দেওয়া উচিত। মধ্যবিত্তরা করের সুবিধা পায়নি। ব্যাংকে টাকা রাখলে ট্যাক্স রেট বাড়ানো হয়েছে। এটা যারা ব্যাংকে টাকা রাখবেন, তাদের ওপর বেশি চাপ পড়বে। একজন ট্যাক্সপেয়ার এখানে বিপদগ্রস্ত হবেন। আর উচ্চ শ্রেণি সুবিধা পাবে।

সারাবাংলা/এসজে/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন