বিজ্ঞাপন

নানা চ্যালেঞ্জে মহাসড়কের লাইফটাইম

June 27, 2020 | 11:37 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে সাতটি চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া সড়কের লাইফটামের ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা না হওয়ায় এ দেশে সড়কের লাইফ টাইম কম হচ্ছে। সড়ক সংক্রান্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রশ্নের মুখে পড়ে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ‘মহাসড়কের লাইফ টাইম: চ্যালেঞ্জ ও করনীয়’ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে এর কারণ ও প্রতিকার।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এটি তৈরি করেন তখনকার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (রোড ডিজাইন অ্যান্ড সেফটি সার্কেল) এ কে মোহাম্মদ ফজলুল করিম।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একাধিকবার বলেছেন, এখন নতুন সড়ক নির্মাণের পক্ষে নয় সরকার। এমনকি প্রধানমন্ত্রীও চান না যেন নতুন সড়ক তৈরি হোক। কেননা এরইমধ্যে দেশে বিশাল সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপন হয়েছে। এখন যেটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে বিদ্যমান সড়কগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, প্রশস্তকরণ, সংরক্ষণ এবং সংস্কার। এ জন্য গত কয়েকবছরে সড়ক উন্নয়নের ব্যাপক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে চার লেন সড়ক নির্মাণ এবং জেলা সড়ক, উপজেলা সড়ক ও ইউনিয়ন সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

মহাসড়ক নির্মাণের চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে মাটি ভারবহন সক্ষমতা কম, গ্রাউন্ড ইমপ্রুভমেন্ট কম, হাই ইমব্যাঙ্কমেন্টের ওপর রাস্তা নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম কম, সীমিত ড্রেইনেজ অবকাঠামো,অধিক জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং স্থানীয় নির্মাণ সামগ্রীর অপ্রতুলতা। এ সব কারণে সড়কের লাইফটাইম কমে যায় এবং সড়ক নির্মাণও ব্যয়বহুল হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়কের লাইফ টাইম নিশ্চিত করার আরও চ্যালেঞ্জগুলো হলো সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, ওভারলোড নিয়ন্ত্রণ, নির্মাণ কাজের গুণতম মান রক্ষা এবং পানি নিষ্কাশন।

লোড নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ শতাংশ ওভার লোডের কারণে সড়কের ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে ২২ শতাংশ। অর্থাৎ সড়কের লাইফটাইম হ্রাস পাবে ১৮ শতাংশ। এ ছাড়া ১০ শতাংশ ওভারলোডের কারণে ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে ৪৬ শতাংশ আর সড়কের লাইফটাইম কমবে ৩২ শতাংশ। এই ওভার লোড নিয়ন্ত্রণে ওভারলোড সংক্রান্ত নীতি বিধান এর পূর্ণ প্রয়োগ প্রয়োজন বলে মত দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সমন্বিত প্রয়াস এবং সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ। এ সমস্যা সমাধানে এরইমধ্যে দেশের ২১টি স্থানে ২৮টি এক্সেল লোড কন্টোল সিস্টেম স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

নির্মাণকাজের মান নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ: নির্মাণের কাজের গুণগত মানের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে, মানসম্মত নির্মাণ সামগ্রীর নিশ্চিতকরণের অভাব, বিটিুমিনের মান নিয়ন্ত্রণ, জনবলের স্বল্পতা এবং কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির মান ও দক্ষতা। নির্মাণ কাজের গুণগত মানের জন্য করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ দিয়ে বলা হয়েছে, সড়ক বিভাগ পর্যায়ে মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার স্থাপন, বিটুমিনের গ্রেডিং সিস্টেমের পরিবর্তন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রস্তাবিত সাংগঠনিক কাঠামো দ্রুত অনুমোদন, নির্মাণ শিল্পের সার্বিক মানোন্নয়ন এবং মান নিয়ন্ত্রণে দক্ষজনবল তৈরি করা প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

অপ্রতুল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা: সড়ক নির্মাণে অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে সড়কের পাশে গর্ত সষ্টি হয়। এ ছাড়া ভূমির যথেচ্ছ ব্যবহার এবং অনেক সময় যে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকে সেটিও অকার্যকর হয়। বলা হয়েছে-সাব বেইজ এর নিচে এক মিটার ফ্রি বোয়ার্ড বিবেচনা করতে হবে। অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে বিশেষত খনন কাজ, স্থাপনা তৈরিসহ নানা কারণে বিদ্যমান সড়কের ফ্রি বোয়ার্ড থাকে না। ফলে বর্ষাকালে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, পেভমেন্ট ডিজাইনের সঙ্গে ড্রেইনেজ ডিজাইন করা, বাজার এলাকায় রিজিড পেভমেন্টের ব্যবহার, ভূমির পরিকল্পিত ব্যবহার এবং হাইওয়ে অ্যাক্টের প্রয়োগ করা জরুরী। হাইওয়ে অ্যাক্ট অনুযায়ী সড়কের দুই পাশে ১০ মিটার জায়গায় যে কোনো স্থাপনা বা খনন কাজের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের পূর্বানুমতি প্রয়োজন।

সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে অপ্রতুল বরাদ্দ: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে নিরাপদ সড়ক নেটওয়ার্কো জন্য সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য হচ্ছে দুটি। একটি উপযোগী সড়ক নেটওয়ার্ক এবং অন্যটি টেকসই সড়ক নেটওয়ার্ক। এ ক্ষেত্রে রুটিন মেইনটেনেন্স এবং পিরিওডিক মেইনটেনেন্স প্রয়োজন। সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে-অপর্যাপ্ত বরাদ্দ, প্রলম্বিত বর্ষাকাল, অপর্যাপ্ত জনবল,অবৈধ দখল এবং অপর্যাপ্ত মেরামত সরঞ্জাম।

সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে অপ্রতুল বরাদ্দের উদাহরণ দিতে গিয়ে গত কয়েক অর্থবছরের চাহিদা ও বরাদ্দের তুলনামূল চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে-এইচডিএম নিডস রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বরাদ্দের চাহিদা দেওয়া হয় ১১ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যায় ২ হাজার ৩৩৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। নিডস রিপোর্ট পাওয়া না গেলেও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে চাহিদা ছিল ৯ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা, বরাদ্দ মেলে এক হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা, বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয় এক হাজার ৪৬৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নিডস রিপোর্ট পাওয়া যায়নি, তবে বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৪৪৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চাহিদা ছিল তিন হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা, বরাদ্দ পাওয়া যায় এক হাজার ১৩৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

২০১২-১৩ অর্থবছরে চাহিদা ছিল তিন হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা, বরাদ্দ আসে এক হাজার ১৩৫ কোটি টাকা।

২০১১-১২ অর্থবছরে তিন হাজার ৮৫১ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ মেলে ৭০৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

২০১০-১১ অর্থবছরে তিন হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা চাহিদা বিপরীতে বরাদ্দ পাওয়া যায় ৬৬৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরে চাহিদা ছিল দুই হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যায় ৬১০ কোটি টাকা।

সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে আগামী ৪ বছরে চাহিদা ৫৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা: প্রতিবেদনে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে চাহিদা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। এর সঙ্গে ছয় শতাংশ মূল্যস্ফীতি যোগ করে ২০২১-২২ অর্থবছরের চাহিদা প্রস্তাব করা হয়েছে ১৪ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। এর সঙ্গে ছয় শতাংশ মূল্যস্ফীতি যোগ করে ২০২২-২৩ অর্থবছরের চাহিদা হচ্ছে ১৫ হাজার পাঁচ কোটি টাকা এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য চাহিদা হচ্ছে ১৫ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা।

সারাবাংলা/জেজে/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন