বিজ্ঞাপন

ভালো নেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা

July 5, 2020 | 10:20 am

তুহিন সাইফুল

ঢাকা: মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় ভালো ফল করেও ভালো নেই শিক্ষার্থীরা। এক মাসেরও আগে এই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। তবে এখনো একাদশে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এতে মুষড়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ঘুরেফিরে সবার মনেই জাগছে সেশনজটের শঙ্কা।

বিজ্ঞাপন

ভিকারুননেসা থেকে এবার মাধ্যমিক পাস করেছেন সাদিয়া মৌটুসী। করোনাকাল শুরু হওয়ার পর থেকেই স্বেচ্ছায় ঘরকুনো হয়েছেন। এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন। এমন চমক জাগানিয়া ফলাফল করেও তিনি খুশি হতে পারছেন না। কারণ ফল ঘোষণা হয়েছে ঠিকই কিন্তু কোথাও ভর্তি হতে পারছেন না।

সারাবাংলাকে সাদিয়া বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম অনলাইনে ভর্তি করে ভিডিও কলিংয়ে হয়তো ক্লাসও শুরু হয়ে যাবে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চলছে। আমার বড় বোনও ভিডিও কলে ক্লাস করছেন। কিন্তু আমরা পড়ে গেলাম সেশনজটে। এখন যদি এক বছর ক্ষতি হয়?’

একই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নুমায়েরও। ধানমণ্ডি গভঃমেন্ট বয়েজ থেকে সাধারণ জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছেন। এরপর থেকে প্রতিদিন কলেজে ভর্তির জন্য অপেক্ষা করছেন। কলেজ নিয়ে অনেক ফ্যান্টাসিও রয়েছে তার। তবে এখন তিনি ধারণা করছেন একাদশে হয়তো এবছরেই ভর্তি সম্ভব হবে না।

বিজ্ঞাপন

নুমায়ের বলেন, ‘প্রথম বছরটা হয়তো পড়াই হবে না। সরাসরি দ্বাদশে ভর্তি হতে হবে। সেক্ষেত্রে পড়াশোনার চাপ থাকবে বেশি। এই চাপ পড়বে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এবং ক্যারিয়ারে। জানি না কি হবে!’

তবে শিক্ষার্থীরা এমন শঙ্কা প্রকাশ করলেও আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড সাব কমিটি প্রধান মু. জিয়াউল হক বলেছেন, ‘এবারের এসএসসি উত্তীর্ণরা যথা সময়েই এইচএসসিও শেষ করতে পারবেন। তাদের জন্য সেভাবেই পরিকল্পনাও সাজানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, এটা সত্য যে দেরি হচ্ছে। এই দেরিটা আমরা ইচ্ছা করে করছি না। করোনার উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। সময় ঠিক থাকলে এতোদিনে হয়তো ক্লাস শুরু হয়ে যেত। এখন সেটি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সময়ের ঘাটতি পূরণ করতে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একটি সূত্র বলছে, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম জুলাই মাসের মাঝামাঝি কিংবা শেষ দিকে শুরু হতে পারে। সেক্ষেত্রে পুরো আবেদন প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হবে অনলাইনে। এমনকি স্কুল ফি কিংবা ভর্তি ফি-ও জমা নেওয়া হবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে।

ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা অনলাইনে কমপক্ষে ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করতে পারবে। এবার ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার কোটা ছাড়া অন্য কোটা থাকছে না। তবে প্রতিবন্ধী, বিকেএসপির শিক্ষার্থী, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী এবং প্রবাসীর সন্তানদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ সুবিধা পেতে তাদের সনাতন পদ্ধতিতে সরাসরি শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করতে হবে। কলেজে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা এবং আবেদনকারীর অন্যান্য বিষয় যাচাই-বাছাই করে তাদের ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে।

সেক্ষেত্রে একাদশের ক্লাস শুরুর সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে ১ সেপ্টেম্বর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা শিক্ষার্থীদের জন্যই কাজ করি। এই পরিবেশে স্বাভাবিক ক্লাস শুরু করা না গেলেও অনলাইন ক্লাস ঠিকই শুরু হবে। এই পরিকল্পনা ধরেই সিদ্ধান্তে আসবে বোর্ড। সেক্ষেত্রে টেলিভিশন ও ইউটিউবে পরিচালিত হতে পারে শ্রেণী কার্যক্রম। শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটেও ভিডিও দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সময়ের কারণে চাইলেও অনেক কিছু করা সম্ভব হয়ে উঠে না। আমরা চাইছি শিক্ষাঙ্গনগুলো শিক্ষার্থীদের কোলাহলে আবারও মুখর হয়ে উঠুক। কিন্তু সেটি করতে পারছি না। করোনার কারণে যতটুকু ক্ষতি হয়েছে সেটি পুষিয়ে নেওয়া হবে। খুব শিগগিরই এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মন খারাপ করলে চলবে না। তাদেরকে পরিস্থিতি বুঝতে হবে। আমরা তাদেরকে কোন বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারি না। তাদের যে সময়টা চলে যাচ্ছে সেই ঘাটতি পূরণ করা হবে। এখন বরং তারা বাসায় বসে অধ্যয়ন করুক। মন খারাপ করে থাকাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। শিক্ষার্থীরা থাকবে সদা প্রফুল্ল।’

উল্লেখ্য, গত ৩১ মে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এ বছর এই পরীক্ষায় ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ গড়ে অর্থাৎ ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। এতে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন পরীক্ষার্থী।

সাধারণত অন্যান্য বছর ফলপ্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও এবার করোনার কারণে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।

সারাবাংলা/টিএস/টিসি

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন