বিজ্ঞাপন

ভার্চুয়ালে সচল বিএনপির রাজনীতি

July 21, 2020 | 5:06 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সক্রিয় থাকলেও বিএনপির মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কোনো ফেসবুক আইডি নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সজিব ওয়াজেদ জয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থাকলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফেসবুক ব্যবহার করেন না। এমনকি দলটির সবচেয়ে সক্রিয় নেতা রুহুল কবির রিজভীরও নেই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট।

বিজ্ঞাপন

সূত্রমতে, টানা ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নেতারা ‘সামাজিক নিরাপত্তার’ স্বার্থেই ‘সামাজিক যোগাযোগ’ মাধ্যম এড়িয়ে চলেন। তারপরও তাদের নামে ডজন ডজন ‘ভুয়া’ আইডি খুলে নানা ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালানো হয় বিভিন্ন সময়। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতারা মাঝে মধ্যেই থানায় দৌড়ান সাধারণ ডায়রির (জিডি) জন্য।

কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপি সব পর্যায়ের নেতারা এখন তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। দলটির রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের ৯০ ভাগই এখন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, গত চার মাসে অন্তত অর্ধশত ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম করেছে বিএনপি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতি সপ্তাহে একটি করে প্রাসঙ্গিক সংলাপ, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিষয়ভিত্তিক ১২টি ভার্চুয়াল সেমিনার, একটি স্মরণ সভা, ‘করোনা মোকাবিলায় করণীয় শীর্ষক’ একাধিক সেমিনার, প্রবাসী আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর সেমিনার, সদ্যপ্রয়াত শাহজাহান সিরাজ ও অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের স্মরণসভা, নানা বিষয়ের ওপর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ডজন খানেক ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্স ইত্যাদি।

জানা গেছে, দলের ভার্চুয়াল এই কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে। এর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনের (বিএনআরসি)-এর একটি উইং। এটি মূলত ‘বিএনপি কমিউনিকেশন’ নামে পরিচিতি। এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা জহিরুদ্দীন স্বপন।

দলীয় সূত্রমতে, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে দলের ভার্চুয়াল কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির প্রবীণ নেতারা শুরুর দিকে কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলেন। তবে সময়ের ব্যবধানে তারাও বিষয়টিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। দলের স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টর মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরুদ্দীন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর— যারা কোনোদিন ফেসবুক ব্যবহার করেননি, তারাও এখন স্বাচ্ছন্দ্যে জুম মিটিংয়ে যুক্ত হচ্ছেন, সাবলীলভাবে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছ, এ কাজে দলের প্রবীণ নেতাদের সহযোগিতা করছেন পরিবারের তরুণ সদস্যরা। তারাই মূলত ভার্চুয়াল সভাগুলোতে প্রবীণদের যুক্ত করে দিচ্ছেন। কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেটি দ্রুত সমাধান করছেন। অবশ্য সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানসহ আরও কয়েকজন প্রবীণ নেতা রয়েছেন, যারা বহু বছর ধরে ফেসবুক-টুইটার ব্যবহার করে আসছেন।

প্রথম জুম মিটিংয়ে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে সম্প্রতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি এখন জুম মিটিং করতে শিখে গেছি। জুমে বসে নাতি-নাতনীদের সঙ্গে কথা বলছি। এই বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে প্রযুক্তির এই ধরনের ব্যবহার সবাইকে শিখতে হবে।’

শুধু ঢাকার সভা-সেমিনার নয়, ঢাকার বাইরে বড় শহরগুলোতে বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে, সেগুলোতেও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছেন। জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে বক্তব্য এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এমনকি কমিটি পুনর্গঠনের কাজও ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে চালু রাখার নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি কমিউনিকেশনের প্রধান জহিরুদ্দীন স্বপন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী ২০১৭ সালে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনআরসি)’ তৈরি করেন বেগম খালেদা জিয়া। হোটেল সোনারগাঁওয়ে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। এই বিএনআরসি’র একটি উইংস হচ্ছে ‘বিএনপি কমিউনিকেশন।’

“এতদিন ‘বিএনপি কমিউনিকেশন’ বিষয়ভিত্তিক বা প্রাসঙ্গিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতো। করোনা ক্রাইসিস সেটাকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে,”— বলেন জহিরুদ্দীন স্বপন।

বিষয়টির সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন মোটামুটি সবাই স্বাচ্ছন্দ্যেই ভার্চুয়াল সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছেন। শুরুর দিকে পরিবারের ইয়াং সদস্যদের হেল্প নিতে হতো, এখন আর সেটাও নিতে হচ্ছে না।’

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন