বিজ্ঞাপন

ঢাকার বাতাস এখন ‘শুদ্ধপ্রায়’

July 21, 2020 | 8:04 pm

তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘এমন দিনে তারে বলা যায়/এমন ঘনঘোর বরিষায়’— শ্রাবণে এমনটাই তো হওয়ার কথা। অতীতেও হয়েছে এরকম। মাঝে বৃক্ষনিধন থেকে শুরু করে নানাধরনের প্রযুক্তিগত অত্যাচারে অতিষ্ঠ প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছিল। বলতে গেলে আষাঢ়-শ্রাবণে বৃষ্টি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তখন সবুজ গাছপালায় লেগে থাকতো ধূসরতা। গরম বাতাসে মিশে থাকতো বিষ। তবে এবার শ্রাবণ ফিরেছে বর্ষার মহিমায়। টানা বর্ষণ ঢাকার বেশিরভাগ পথঘাটকে জলাবদ্ধতায় ডুবিয়ে দিলেও বিষাক্ত বাতাসকে করে তুলছে বিশুদ্ধ। করোনাকালে বেশিরভাগ মানুষের ঘরবাস আর বর্ষার আশীর্বাদে ঢাকার বাতাস এখন বিশুদ্ধতার খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। সূচক আর মাত্র পাঁচ পয়েন্ট কমলেই ঢাকা হয়ে উঠবে বিশুদ্ধ বাতাসের নগরী।

বিজ্ঞাপন

গত কয়েকদিনে ঢাকার বাতাসের মানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। সোমবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীতে বাতাসের দূষণ সূচক ছিল ৫৬। এই অঙ্কে বাতাসের মানকে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা হয়। বিষাক্ত বাতাসের নগরীর তালিকায় এই সময় ঢাকার অবস্থান ছিল ৪০-এরও পরে; যেখানে চীনের উহান সূচকের প্রথমে অবস্থান করছিল।

 

 

বিজ্ঞাপন

এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) সূচক ও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সোমবার রাতের মধ্যেই ঢাকার বায়ুমান ৫০ এরও নিচে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী দুদিন মোটামুটি বৃষ্টি হলেও বায়ুমান ৪০ এর ঘরে নামবে, যা বাতাসের পুরোপুরি বিশুদ্ধতা নির্দেশ করে।

এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে ইরানের তেহরান (১৩০) এবং সৌদি আরবের রিয়াদ (১১৪) নগরী দুষণে দুই ও তিনে অবস্থান করছিল। চারে অবস্থান করছিল ফিলিস্তিনের রাজধানী জেরুসালেম। আব্রাহামিক তিন ধর্মের পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ এই শহরের দূষণমানও ছিল ১১৪। এছাড়াও ভারতের দিল্লি শহর ৬৯ দূষণমান নিয়ে তালিকার ২৩ এবং পাকিস্তানের লাহোরের (৬২) অবস্থান ছিল ৩২ নম্বরে।

বিজ্ঞাপন

একিউআই সূচকে ৫০-এর নিচে স্কোর থাকার অর্থ হলো বাতাসের মান ভালো। এ সূচকে ৫১ থেকে ১০০ স্কোরের মধ্যে থাকলে বাতাসের মান গ্রহণযোগ্য বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ১৫০ হলে নগরবাসী বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

দূষণমান ২০১ থেকে ৩০০ হলে স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ তা জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। একিউআই স্কোর ৩০১ থেকে ৫০০ বা তারও বেশি হলে বাতাসের মান মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরণকে ভিত্তি করে। এর মধ্যে রয়েছে বস্তুকণা পিএম১০ ও পিএম২.৫, এনও২, সিও, এসও২ এবং ওজোন (ও৩)। মৌসুমি জলবায়ুর কারণে বর্ষাকালে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতায় বৈচিত্র্য দেখা যায়। এসময় স্বাভাবিক নিয়মেই দূষণ কমে আসে। কিন্তু শীত ও গ্রীষ্মে বাড়তে বাড়তে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। এ সময় নির্মাণ কাজের নিয়ন্ত্রণহীন ধুলা, যানবাহনের ধোঁয়া এবং ইটভাটা দূষণকে দেয় নতুন মাত্রা। তবে জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাতাসের মান স্বাস্থ্যকর থাকে।

বিজ্ঞাপন

পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক রফিক আহমদ বলেন, ‘বায়ু দূষণ কমাতে সারাবছর ধরেই আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাই। ইটভাটা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি এমনকি মেট্রোরেল প্রোজেক্টকে পর্যন্ত এবার জরিমানা করা হয়েছে। তবে বর্ষায় প্রাকৃতিক নিয়মেই দূষণ কমতে থাকে। এরপরও আমরা নিজেরা যদি সচেতন থাকি এবং দেশের প্রতি যত্নবান হই তাহলে দূষণ কমবে।’

ঢাকার বায়ু দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে এর চারপাশে অবস্থিত ইটভাটা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির কালো ধোঁয়াকেই দায়ী করেন তিনি।

এদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল এবং বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় অবস্থায় বিরাজ করছে মৌসুমি বায়ু। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বৃষ্টিপাতের এ ধারা আগামী তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এ কারণে দেশের চার সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

সারাবাংলা/টিএস/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন