বিজ্ঞাপন

সরকারের ব্যর্থতায় মৃত্যু আতঙ্কে মানুষ— ফখরুল

July 22, 2020 | 6:49 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকারের ব্যর্থতায় গোটা দেশের মানুয মৃত্যু আতঙ্কে ভুগছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২২ জুলাই) দুপুরে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল স্মরণ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। সদ্য প্রয়াত শাহজাহান সিরাজের স্মরণে এ ভার্চুয়াল সভা আয়োজন করে বিএনপি কমিউনিকেশন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গোটা দেশের মানুষ এখন মৃত্যু আতঙ্কে ভুগছে, জীবিকার চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। মানুষের মৌলিক অধিকার, ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন, পার্লামেন্ট নির্বাচন, সরকার নির্বাচনের অধিকার হরণ করা হয়েছে।’

‘কী দুর্ভাগ্য আমাদের, যারা ক্ষমতায় বসে আছে, যারা বলে তারা স্বাধীনতা চেতনা ধারণ করে, তারাই আজ সচেতনভাবে এ দেশের মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার, মৌলিক অধিকার হরণ করে নিয়ে গেছে। আজ শাহজাহান সিরাজের এই স্মরণসভায় যারা আছেন, তারা এই বাংলাদেশ দেখতে চাননি। তারা একটা সুখী, সমৃদ্ধ, সাধারণ মানুষ যাতে বেঁচে থাকতে পারেন, সেই বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন। আজকে আমরা কী দেখছি?,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘শাহজাহান সিরাজের প্রতি আমরা তখনই শ্রদ্ধা জানাতে পারব যখন তার আরাধ্য বাংলাদেশ আমরা বিনির্মাণ করতে পারব। তিনি যে বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন, সেই বাংলাদেশকে যদি আমরা নির্মাণ করতে চাই তাহলে আবার আমাদের ১৯৭১ সালের মতো জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’

‘এই ঐক্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ওই সময়কার সত্যিকার অর্থে যে চেতনা সেই চেতনাকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারব। সেটাই হবে শাহজাহান সিরাজের প্রতি সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধা জানানো,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আমি শাহজাহান সিরাজকে কেবল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই না, আমার মনে হয় দেশের মানুষও দেখতে চায় না। তাকে সবাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন নায়ক হিসেবে দেখতে চায়।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শাহজাহান সিরাজের সারাটা জীবনই দেশের জন্য সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেছে। আমরা দেখেছি তার স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা থেকে শুরু করে, মুক্তিযুদ্ধের অংশ নিয়েছেন এবং পরবর্তীকালে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা খুব কষ্ট পাই, দুঃখ পাই যখন দেখি স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর যোদ্ধা, বীর সংগ্রামী যারা তাদের জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন তাদের অবদানকে খাটো করে দেখার চেষ্টা করা হয়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি খুব কষ্ট পেয়েছি কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের তথাকথিত কয়েকজন বুদ্ধিজীবী কিছু লেখা লিখেছেন শাহজাহান সিরাজ সম্পর্কে। আমি তাদের নাম বলতে চাই না। শুধু এটুকু বলতে চাই, একজন মানুষকে তার যেটুকু পাওনা সেটুকু দেওয়া প্রত্যেকটা রাজনৈতিক নেতা, প্রত্যেকটা সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীসহ সকলের দায়িত্ব।’

শাহজাহান সিরাজ চার দলীয় জোট সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রী থাকাকালে পরিবেশ দূষণ রোধে পলিথিনের ব্যবহার ও থ্রি হুইলার স্কুটার নিষিদ্ধ, সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির যুগান্তকারী পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন জোট সরকারের কৃষি প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি, জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, “১৯৬২ সালে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের গঠনের মধ্যে দিয়ে প্রত্যেকটা আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। ওই সময়ে সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে নিউক্লিয়াসের সদস্যরা ছাড়া কেউই পৃথিবীতে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নই দেখে নাই। আমি ও শাহজাহান সিরাজ বাষট্টি সালে নিউক্লিয়াসের সদস্য। আমরা কোনোদিন স্বায়ত্বশাসনের জন্য আন্দোলন করি নাই। একটা কথা বলে দিলে আজকে সবাই বুঝতে পারবেন— ‘পাকিস্তানে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘৬ দফা না ১ দফা’, ‘জিন্নাহ মিয়ার পাকিস্তান, আজিপুরের গোরস্থান’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’— আমরা এসব স্লোগান দিয়েছি।”

তিনি বলেন, ‘শাহজাহান সিরাজ সারাজীবন কী কাজ করেছেন, আমি জানি না। তবে একটি জিনিসের জন্য তিনি বাংলাদেশে বেঁচে থাকবেন যতদিন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মাটি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা থাকবে— সেটি হলো তেসরা মার্চ। সারা বাংলাদেশে সেদিন স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়েছিল, যেটা দোসরা মার্চ আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তোলন করেছিলাম এবং বলা হয়েছিল— তেসরা মার্চ পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দিয়ে সারাদেশে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করতে হবে। সেদিন বঙ্গবন্ধুকে সামনে রেখে সিরাজুল আলম খানের নির্দেশে শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতা ইশতেহার পাঠ করেছিলেন। আজ ৫০ বছর পরে ৭ মার্চ ঐতিহাসিক দিবস উদযাপন করার সিদ্ধান্ত হয়। কেন এই ৫০ বছর কী হয়েছে?’

স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘ছাত্রলীগের মধ্যে আমরা যারা গণতান্ত্রিক বলে পরিচিত ছিলাম, আমরা সবসময় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতাম। আমরা বিশ্বাস করতাম, একটা জাতীয় ম্যান্ডেট প্রয়োজন। স্বাধীনতার ডাক বঙ্গবন্ধুও যদি দেয়, তাহলেও এটা বিচ্ছিন্নতাবাদে পরিণত হবে যদি একটি নির্বাচনের ম্যান্ডেট আমরা গ্রহণ করতে না পারি।’

তিনি বলেন, ‘কথাটাকে টুইস্ট করে বললে অবিচার হবে, ইতিহাস বিকৃত হবে। আমরা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম মানুষের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে, সমস্ত জাতির ঐক্যের মাধ্যমে। সত্তরের ম্যান্ডেন্ট পাওয়ার আগে যদি আমরা স্বাধীনতার স্লোগান দিতাম, ম্যান্ডেট পাওয়ার আগে যদি আমরা স্বাধীনতা প্রথম পরিক্রমায় অংশ নিতাম, তাহলে জনগণও আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবত।’

বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের টেবিলে আলোচনায় স্বাধীনতা আসে নাই। এটা ছিল জনযুদ্ধ। ফলে জনযুদ্ধে জনগণের যে ভূমিকা, সেটা বাদ দিলে সেই ইতিহাস কখনো সম্পূর্ণ ইতিহাস হয় না। আমরা তিনটি বিষয়ের কথা বলে সেই যুদ্ধ করেছি— সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার। স্বাধীনতা উত্তরকালে সংবিধানে বলা হয়েছিল— গণতন্ত্র, শোষণহীন সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও স্বাধীন জাতীয় বিকাশে জাতীয়তাবাদ।’

‘এখন গণতন্ত্রের হাল কী? গণতন্ত্র তো দূরে থাক, ভোটতন্ত্রও নাই। পার্লামেন্ট থেকে ইউনিয়ন কাউন্সিল পর্যন্ত প্রায় ৬৬ হাজার কথিত জনপ্রতিনিধি রাতের ভোট, টাকার জোরে বাহু বলে ভোট, শাসন ক্ষমতার দাপটে-আনুকূল্যে, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কারসাজিতে নির্বাচিত হয়ে যান,’— বলেন খালেকুজ্জামান।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য জহিরউদ্দিন স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী।

ফাইল ছবি

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন