বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের নারীরা পারে আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী

March 8, 2018 | 11:23 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নত-সভ্য দেশ যা পারে না বাংলাদেশের নারীরা তা পারে। সেটাই আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৮ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ৫জন নারীর হাতে ‘জয়িতা’ পুরষ্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে মেয়েরা পিছিয়ে নেই। আমাদের মেয়েরা তো এখন এভারেস্টে চলে যাচ্ছে। সুযোগ পেলে তারা করতে পারে দেখাতে পারে এটা আজকে প্রমাণিত সত্য।

বিজ্ঞাপন

মা-সন্তান ধারণ করে। লালন পালন করে অথচ সন্তানের পরিচয়ে সবার বাবার ছিল। মায়ের নাম ছিল না। আমি সেখানে মায়ের নাম সংযুক্ত করে দিয়েছি। ইসলাম ধর্মে বলে যে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। আর মায়ের নামেই যদি না থাকে তাহলে কি করে বেহেশত হবে সেটাও তো একটা কথা! বলেন প্রধানমন্ত্রী।

নারীর উন্নয়নে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ‍ও নীতিমালাগুলো তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষায় বৃত্তি দিচ্ছি। সেখান থেকে ৭৫ভাগই বৃত্তি আমাদের মেয়েরা পায়। এটা আজকে বললাম। ছেলেরা শুনে যেন মনে কষ্ট না পায়। ছেলেরাও পাচ্ছে তবে মেয়েদের বেশী দিচ্ছি।

একাদশ জাতীয় সংসদে নারীদের শক্তিশালী অবস্থানের কথা তুলে ধরে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, সংসদে ৫০জন সংক্ষরিত (এমপি) আছে। আর ২২ জন সরাসরি নির্বাচিত। আর প্রধান স্পীকার, সংসদ নেতা হিসেবে আমি আছি, রওশন এরশাদ (বিরোধী দলীয় নেতা) এবং বেগম সাজেদা চৌধুরী উপনেতা (সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী)-জাতীয় সংসদের চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদ; সবই নারীরা দখল করে আছে।

বিজ্ঞাপন

সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিয়ে দিলেই মেয়ের দায়িত্ব চলে যায় না। বরং দায়িত্ব আরো বাড়ে। কিন্তু মেয়েটি যদি লেখাপড়া শিখে, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে তাহলে সেটাই আমার মনে হয় সমাজের জন্য সবচেয়ে ভাল। এটা পরিবারের জন্য সুরক্ষা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ বাবা-মা বৃদ্ধ হয়ে গেলে ছেলের বউ যতটা না দেখে মেয়েরা তার চেয়ে বেশী দেখে। এটাও বাবা-মাকে মনে রাখতে হবে, বাবা-মার চিন্তা করা উচিত। আমি খুব বাস্তব কথাটাই বললাম। আর মেয়েরাই তো কারো ছেলের বউ হয়। সেটাও ঠিক। তাই বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুরি সকলের প্রতি সমানভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিত বলে মত দেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এইটুকু বলতে পারি বাংলাদেশের মেয়েরা কিন্তু পিছিয়ে নেই। যে বাধা আমাদের ছিল তা অতিক্রম করে এখন এগিয়ে যাচ্ছি। মেয়েরা এখন বিমান বা হেলিকাপ্টার চালানো শুরু করে দিয়েছে। এখন আমাদের রেলে সেখানেও মেয়ে ড্রাইভার আছে। গাড়িচালক আছে। সকল জায়গায় মেয়েরা জায়গা করে নিয়েছে।

শেখ হাসিনা, “আমি মনে করি, মেয়েরা খুব ভালভাবেই কাজ করে। তাদের দক্ষতা অনেক বেশী আছে এটা নিয়ে সন্দেহ নাই। এমনকি আমার অফিসে এডিসিসহ লোকজন ছেলে ছিল। আমি বললাম আমার একজন মেয়ে এডিসিও দরকার। আমি একজন মেয়ে এডিসিও নিয়ে এসেছি এবং সে খুব ভাল কাজ করে যাচ্ছে।

আমরা যেখানেই দেখছি মেয়েদের দায়িত্ব দেওয়া যায়। সেখানেই আমরা দায়িত্ব দিচ্ছি এবং তাদের দক্ষতার পরিচয় তারা রেখে যাচ্ছে।সেজন্য আমি আমার বোনদের নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত করি।

বিজ্ঞাপন

মেয়েরা খেলাধুলায় খুব ভাল করছে বলেও গর্ববোধ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে, এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এই স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে। প্রতিটি ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে হবে। মানুষের মতো মানুষ হবে। বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলবে এবং বিশ্ব প্রতিযোগিতার সাথে সমানভাবে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। সেইভাবে আমরা আমাদের ছেলে-মেয়ে সবাইকে গড়ে তুলতে চাই।

“সমাজের নারী যদি পড়ে থাকে তাহলে এই সমাজ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। সেই জন্য নারীদের অধিকার সুরক্ষিত করে তাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া এবং সকল ক্ষেত্রে তাদের বিচরণ যেন নিশ্চিত হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। উন্নত দেশ-সভ্য দেশ যা পারে না বাংলাদেশের মেয়েরা তা পারে। সেটাও আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি।”

নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে মর্যাদা নিয়ে আপনারা চলবেন। আর পরিবারের প্রতি দায়িত্ব, সেই দায়িত্বটাও যথাযথভাবে পালন করবেন। আর কথাই তো আছে, সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। এই কথাটাও ভুলে যাবেন না, এটাও মনে রাখতে হবে। আর আপনাদের যে মেধা বিকাশের সুযোগ সেটা তো আমরা করে যাচ্ছি।

বক্তব্যের শুরুতে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল নারীর প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্য শেষে নারী দিবসের শুভ উদ্ধোধন ঘোষণা করেন তিনি। এছাড়াও নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়েরও প্রশংসা করেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

 

 

সারাবাংলা/এনআর/এমআই

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন