বিজ্ঞাপন

‘তিনি বীরাঙ্গনা বলতে শিখিয়েছেন’

March 8, 2018 | 8:38 pm

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: প্রিয়ভাষিণীকে বহন করা কফিনটি তখন মাত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ভীড় তখনো কিছুমাত্র কম নয়, বরং তারা আসছেন। কারো হাতে ফুল, কেউবা এসেছেন ফুল ছাড়াই। তবে, এত ভিড়ে দৃষ্টি কেড়ে নেন একজন মানুষ। মাথার চুল একটাও কালো নেই, মুখে, হাঁটা-চলায় বয়সের ভার স্পষ্ট। কিন্তু দৃপ্ত পায়ে তিনি এগিয়ে এলেন প্রিয়ভাষিণীর কফিন রাখা স্থানে। যদিও সে স্থানটা তখন শূন্য ছিল, পড়ে ছিল কিছু ফুল…!

তিনি এসে খুঁজলেন প্রিয়ভাষিণীকে। না পেয়ে কেঁদে ফেললেন। কাছে থাকা মানুষদের জড়িয়ে ধরছিলেন তিনি। আর সে সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি। দীপু মনি তাকে জড়িয়ে ধরলেন, পরম মমতায় বুকে টেনে নেন। দীপু মনিকে পেয়ে যেন মাথা গোঁজার ঠাঁই হলো এই নারীর। আর তাতে করে যেন কান্না আরও সংক্রমিত হলো। এ সময় তাকে সান্ত্বনা দেন দীপু মনি।  তখন সেখানে উপস্থিত কবি কাজী রোজী এমপি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস।

কথা বলে জানা গেল, সিরাজগঞ্জ থেকে আসা এই নারীর নাম রাহেলা খাতুন। তিনি একজন বীরাঙ্গনা। এ সময় তিনি বলেন, ‘তিনি (ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী) বীরাঙ্গনা বলতে শিখিয়েছেন, লজ্জা করতে না করেছেন।’ বলেই আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন রাহেলা খাতুন। দীপু মনিকে জড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই তিনি বলতে থাকেন, ‘উনি আমাদের নিয়মিত খোঁজ নিতেন, আমাদের কাছে ছুটে যেতেন।’

বিজ্ঞাপন

কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীও আমার বোন। তাকে দোয়া করতে বলব আমার বোনের (প্রিয়ভাষিণী) জন্য। ফেরদৌসী বোনের জন্য প্রধানমন্ত্রী বোনকে আপনারাও দোয়া করতে বলবেন, যেন তিনি বেহেস্ত পান।’

আক্ষেপ করে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘আজ অনেক বীরাঙ্গনা নেই, মারা গেছেন। তিনিও আজ নেই, তাহলে আমরা যারা আছি, তাদের খোঁজ কে নেবে?’

 

বিজ্ঞাপন

এ সময় তাকে জড়িয়ে ধরেন ডা. দীপু মনি । তিনি বলেন, ‘আমাকে ফোন দেবেন প্রয়োজন হলে। আমি খোঁজ নেব। সব সময় ফোন দেবেন।’ এ সময় রাহেলা খাতুনের ফোনে নিজের ফোন নাম্বারটি সেভ করে দেন সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস এ সময় সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনি খুব বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছেন, বয়স হয়েছে। অনেক কিছু গুছিয়ে বলতে পারেন না, কিন্তু স্বজনের মৃত্যুতে ছুটে এসেছেন।  এই মানুষগুলোই আমাদের সাহস যুগিয়েছেন, প্রেরণা দিয়েছেন।’

অপরদিকে, শ্রদ্ধা জানাতে আসা মুক্তিযোদ্ধা রেখা রাণী গুণ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই যে উনি (প্রিয়ভাষিণী) চলে চলে তাকে তো আর পাব না। মুক্তিযোদ্ধারা আর পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে চলে যাবে, আর তারা থাকবেন না। এই প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তোলে এটাই আমাদের চাওয়া। কারণ, এখন জঙ্গিবাদের যে উত্থান দেখছি— সেটা আমাদের আশঙ্কিত করে। ভবিষ্যতে যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুনপ্রজন্ম এগিয়ে আসে এবং বাংলাদেশকে রক্ষায় যেন তারা হাত বাড়িয়ে দেন— আমরা মরে যাবার আগে এটাই যেন দেখে যেতে পারি।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেএ/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন