বিজ্ঞাপন

ধোনিকে মনে রাখবে ক্রিকেট দুনিয়া

August 16, 2020 | 3:39 pm

শামিম হোসেন শিশির, নিউজরুম এডিটর

বিদায় বেলাতেও নিজস্ব ধাঁচটা রেখে গেলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। গতকাল (শনিবার ১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় হঠাৎ ইনস্টাগ্রামে দুই লাইনে জানিয়ে দিয়েছেন আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন না। অথচ তার অবসর নিয়ে চারিদিকে কতো শোরগোল। দু’তিন বছর ধরেই ধোনির অবসর নিয়ে কথা হচ্ছে। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর সেটা বেড়েছে কয়েকগুন। বিদায় বলছেন না বলে সমালোচকরা ছেঁকে ধরেছিল। বিদায় বেলায় সেসব গায়েই মাখালেন না। আবেগী বক্তব্য, বিদায়ী মঞ্চ, সংবাদ সম্মেলন বা ফুলের তোড়া এসবের ধারও ধারলেন না। নির্লিপ্তে ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘সন্ধ্যা ৭টা ২৯ থেকে আমাকে অবসরপ্রাপ্ত ধরে নিন।’

বিজ্ঞাপন

সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন মিনিট চারেকের একটা ভিডিও। ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দি করে ভিডিওতে লাগিয়ে দিয়েছেন অমিতাভ বচ্চনের ‘কাভি কাভি’ সিনেমার মুকেশের গাওয়া গান ‘মে পাল দো পাল শায়ের হু’। গানটার বাংলা অর্থ দাঁড়ায়, ‘আমি দু’এক মুহূর্তের কবি, আমার গল্প কেবল দু’এক মুহূর্তের জন্যেই।’ আসলেই কী? ধোনির গল্প দুই এক মুহূর্তের জন্যেই?

পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিটিইর চাকরী করতেন। ঝাড়খণ্ডের ‘মাহি’র সেখান থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উঠে আসাটা সিনেমাটিক। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘ভদ্র ছেলে’ ছিলেন না কখনোই। মোটরবাইকের প্রতি প্রবল ঝোঁক, ঘাড় পর্যন্ত নেমে আসা ঝাকড়া চুলের ধোনিকে ক্যারিয়ারের শুরুতে ‘পাড়ার বখাটে ছেলে’ই মনে করত একটা পক্ষ। ২০০৭ সালে বিপাকে পড়ে ভারতীয় ক্রিকেট তাকে অধিনায়কের সিংহাসনে বসালে একটা সময় ‘ক্যাপ্টেন কুল’ উপাধী পেয়েছেন তবে ‘ভদ্র’ হতে চাননি ধোনি।

বিজ্ঞাপন

উপমহাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতির খুব একটা তোয়াক্কা করেননি। প্রয়োজনে কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের ছেঁটে ফেলতে জিদ ধরেছেন, সেটা করেছেনও। যা দরকার মনে করেছেন কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে সেটা কেড়ে নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা অবস্থাতেই বায়োপিক বানিয়েছেন। সংস্কৃতির তোয়াক্কা না করে নাম দিয়েছিলেন ‘এমএস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’। খড়গপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে যেভাবে ভারতীয় দলে এসেছিলেন তেমন জিদ ছিল পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই। তবু এই ধোনির সাফল্যগুলো একবার ঘেঁটে দেখুন।

বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে ২০০৭ সালে বিভিষিকাময় হয়ে পড়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট। সেই বছরই নেতৃত্ব পেয়ে ভারতকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতালেন। কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারকে ছেঁটে ফেলে দল সাজিয়ে ২০১১ সালে দেশের মাটিতে ভারতকে স্বপ্নের ওয়ানডে বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিয়েছেন। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র অধিনায়ক ধোনি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন, ভারতকে টেস্টে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষেও তুলেছেন। তার অধিনেই সর্বোচ্চ ২৭ টেস্ট জিতেছে ভারত। ওয়ানডেতে ২০০ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ভারতকে ৫৫ শতাংশ ম্যাচ জিতিয়েছেন। অসাধারণ বরফ শীতল এক ক্রিকেট মস্তিস্ক আর কতোগুলো কার্যকরি সিদ্ধান্তই এই সাফল্যের বড় কারণ।

বিজ্ঞাপন

অধিনায়কত্ব স্বত্তায় কিংবদন্তি হয়েছেন। ব্যাট হাতে এবং উইকেটের পেছনেও কিন্তু দুর্দান্ত সফল ধোনি। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় পাঁচ-ছয়ে ব্যাটিং করা ধোনি ওয়ানডেতে ৫০.৫৭ গড়ে ১০ হাজার ৭৭৩ রান করেছেন। সেঞ্চুরি ১০টি, হাফ সেঞ্চুরি ৭৩টি। ৯০ টেস্ট ম্যাচ খেলে ছয় সেঞ্চুরি, ৩৩ হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৪ হাজার ৮৭৬ রান, গড় ৩৮.০৯। ৯৮ টি-টোয়েন্টিতে ৩৭.৬০ গড়ে ৬১৭ রান করেছেন। সব ফরম্যাট মিলিয়ে উইকেটের পেছনে ধোনির ডিসমিসাল ৮২৯টি। তার চেয়ে বেশি ডিসমিসাল আছে কেবল মার্ক বাউচার আর অ্যাডাম গিলক্রিস্টের। এতো এতো অর্জনের মালিক ধোনির গল্প নিশ্চয় দুই এক মুহূর্তে শেষ হবার নয়। তবু বিদায় বেলায় কেন অমন গান শোনালেন সেটা ধোনিই ভালো বলতে পারবেন।

৩৯ বছর বয়সী কিংবদন্তির আগের বিদায়গুলোও ছিল এমন নির্লিপ্তে। ২০১৪ সালে সিরিজের মাঝখানে হঠাৎ জানিয়ে দিয়েছিলেন আর টেস্ট খেলবেন না। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তার নেতৃত্বেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার কথা ছিল ভারতের। কিন্তু সিরিজ শুরুর দিন দশেক আগে হঠাৎ জানিয়ে দিয়েছিলেন আর অধিনায়কত্ব করবেন না। এবারের আন্তর্জাতিক বিদায়টাও তেমনই হলো।

আরেকটা জায়গায় মিল থেকে গেল ধোনির। ২০০৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর অভিষেক ম্যাচে রান আউট হয়েছিলেন। বাংলাদেশের তাপস বৈশ্যর ছুড়ে দেওয়া বলে ধোনির স্ট্যাম্প ভেঙে দিয়েছিলেন উইকেটরক্ষক খালেদ মাসুদ পাইলট। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ওল্ড ট্রাফোর্ডে মার্টিন গাপটিলের থ্রোতে ধোনি আউট হয়েছিলেন সেই কিপার প্রান্তেই। সেটাই হয়ে থাকল তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শেষ ম্যাচ। রান আউটে শুরু, রান আউটে শেষ।

বিজ্ঞাপন

ধোনি হয়তো আউট হলেন না, ক্রিকেটে অপরাজিতই থেকে গেলেন। ক্রিকেট চিরকালই মনে রাখবে ভারতীয় কিংবদন্তিকে।

সারাবাংলা/এসএইচএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন