বিজ্ঞাপন

সারাবাংলায় রিপোর্ট: ২ প্রকল্প থেকে বাংলো নির্মাণের প্রস্তাব বাদ

August 18, 2020 | 4:26 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সারাবাংলায় রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ায় সেতু নির্মাণ এবং সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের দুটি পরিদর্শন বাংলো নির্মাণের প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। এজন্য সরকারের প্রায় ছয় কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও দুটি প্রকল্পে বাংলো নির্মাণ প্রস্তাব নিয়ে গত ৮ ও ১৭ আগস্ট দুটি সংবাদ প্রকাশ করে সারাবাংলা ডটনেট। এতে বিষয়টি নজরে আসে পরিকল্পনা কমিশনের। মঙ্গলবার (১৮ আগষ্ট) অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বিষয়টি নজরে আনলে প্রকল্প দুটি থেকে বাংলো নির্মাণের প্রস্তাব কেটে দেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একনেকের বৈঠক শেষে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বিজ্ঞাপন

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বাংলোর বিষয়ে বলেছেন, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সারাদেশে অনেক বাংলো রয়েছে। কাজেই কোনো প্রকল্পের আওতায় নতুন করে বাংলো নির্মাণ যুক্ত না করে প্রয়োজনে সড়ক ও জনপথের বাংলোগুলো সংস্কার বা উন্নয়নের জন্য আলাদা প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে। এতে প্রকল্পের ব্যয় কমবে।’

এম এ মান্নান বলেন, ‘কেন বৃটিশরা বাংলো বানাতো? সেসময় রাস্তাঘাট ছিল না। নৌকা বা যেকোনোভাবে কোথাও গেলে সেখানে তাদের থাকতো হতো। কিন্তু এখনতো অনেক উন্নতি হয়েছে। কোথাও গেলে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় কাজ শেষ করে ফিরে আসা যায়। তাহলে বাংলোর প্রয়োজন কি?।

এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সারাবাংলায় রিপোর্ট প্রকাশ করায় অনেক ধন্যবাদ। এরকম রিপোর্ট বেশি বেশি প্রকাশ করতে হবে। প্রয়োজনে আমাকেও অবহিত করতে পারেন।’

বিজ্ঞাপন

গত ১৭ আগস্ট সারাবাবাংলায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা না মেনেই উন্নয়ন প্রকল্পে একের পর এক বাংলো নির্মাণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এর আগে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পর এবার সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পে তৈরি করা হবে পরিদর্শন বাংলো। এতে খরচ হবে ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। ‘বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পে ঘটছে এমন ঘটনা। যদিও এর আগে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর একনেক সভায় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তাদের জন্য বাসভবন বা পরিদর্শন বাংলো ইত্যাদি নির্মাণ পরিহারের অনুশাসন দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রিপোর্টে জানানো হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৬৭ কোটি ১২ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ থেকে ৫৮১ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রফতানি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটির ব্যয় বিভাজন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ‘বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ’ প্রকল্পের আওতায় ৮৪০ বর্গমিটারের একটি পরিদর্শন বাংলো নির্মাণের জন্য ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এর আগে গত ৮ আগস্ট সারাবাংলা প্রকাশিত আরেকটি রিপোর্টে উঠে আসে, ‘খুলনা সড়ক জোনের আওতাধীন মহাসড়কে বিদ্যমান সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন কংক্রিট সেতু বা বেইলি সেতুর স্থলে কংক্রিট সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে পরিদর্শন বাংলো নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেসময় পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর একনেক সভায় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তাদের জন্য বাসভবন বা পরিদর্শন বাংলো ইত্যাদি নির্মাণ পরিহারের অনুশাসন দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অনুশাসন দেওয়ার আগেই গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ফলে সেসময় প্রকল্পের আওতায় পরিদর্শন বাংলো নির্মাণের বিষয়টি রাখা হয়েছিল। তবে খুলনা জোনের পরিদর্শন বাংলোটি অনেক পুরনো ও জরাজীর্ণ হওয়ায় সওজ’র নিজস্ব জমিতে পাঁচ হাজার বর্গমিটার এই পরিদর্শন বাংলোর সংস্থান রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পে বাংলো নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, মঙ্গলবার একনেকে বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেগুলো হচ্ছে- টোল ফ্রি সড়ক তৈরি না করে এখন থেকে সামান্য হলেও সড়কে টোল নেওয়ার ব্যবস্থা করা। তবে এক্ষেত্রে টোল যাতে দ্রুত নেওয়া হয় সে ব্যবস্থা করতে বলেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা রাস্তা তৈরি করব, উন্নয়ন করব আর সংস্কারও করব। এজন্য অনেক টাকা ব্যয় হয়। টোল নিলে খারাপ হবে না।’ এছাড়া নদীর পারে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণে ভাবতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী; যাতে নদীভাঙনে সেগুলো বিলীন হয়ে না যায়। প্রয়োজনে এমনভাবে অবকাঠামো তৈরি করতে হবে যাতে নদী ভাঙ্গনের সময় অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বন্যা শুধু বিপদ নয়, সম্পদও। তাই বন্যার সঙ্গে শত্রুতা নয়, এর সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে চলতে হবে। অপর এক প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্লুইসগেট নিয়ে একটা স্টাডি করতে হবে। সার্ভে করেও দেখতে হবে কোথায়, কতগুলো স্লুইস গেট রয়েছে এবং সেগুলো কার্যকর আছে কি না। তবে নতুন করে স্লুইসগেট তৈরি করা যাবে না।

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন