বিজ্ঞাপন

ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে পিএসজি

August 19, 2020 | 2:54 am

স্পোর্টস ডেস্ক

২৫ বছর পর ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় পিএসজি। আর এবারেই আরবি লেইপজিগকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে জায়গা করে নেয় প্যারিস সেইন্ট জার্মেই। বুধবার (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় রাত একটায় প্রথম সেমিফাইনালে আরবি লেইপজিগের মুখোমুখি হয় পিএসজি। আর নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে ৩-০ গোলের জয় নিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নেয় ফাইনালে।

বিজ্ঞাপন

১৯৯৫ সালে প্রথমবারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল খেলেছিল প্যারিস সেইন্ট জার্মেই। এরপর নেইমার জুনিয়র, কিলিয়ান এমবাপেদের মতো হেভিওয়েট ফুটবলারদের দলে ভেড়ালেও সাফল্য মেলেনি। তবে এবার সব বাধা পেরিয়ে ২৫ বছর পর জায়গা করে নেয় সেমিতে। অন্যদিকে ২০০৯ সালে জার্মানিতে নতুন ক্লাব আরবি লেইপজিগের জন্ম। আর এর মাত্র ১১ বছর পর নিজেদের ইতিহাসের প্রথমবার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠে আসে তারা।

ফাইনালের লক্ষ্যে দলের সেরা মধ্যমাঠের খেলোয়াড় মার্কো ভেরাত্তি এবং নিয়মিত গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে ছাড়াই মাঠে নামে পিএসজি। দুইজনই ইনজুরির কারণে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যান। তবে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এদিন দলে ফেরেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। আর ফিরেই দলের জয়ে রেখেছেন বড় ভূমিকা। নেইমার জুনিয়র এবং কিলিয়ান এমবাপে সঙ্গে গড়েন দুর্দান্ত আক্রমণ ত্রয়ী। আর ম্যাচের শুরু থেকেই খেলার নিয়ন্ত্রণ নেয় পিএসজি।

বিজ্ঞাপন

দুর্দান্ত আক্রমণের সঙ্গে মধ্যমাঠও বেশ পরিপূর্ণ। আর দুর্দান্ত শুরুতে গোলের জন্য পিএসজিকে অপেক্ষা করতে হয় মাত্র ১৩ মিনিট। ম্যাচের ১২তম মিনিটে নেইমারকে ডি বক্সের বাইরে ফাউল করায় ফ্রিকিক পায় পিএসজি। আর সেখান থেকে নেওয়া ফ্রিকিক নেন ডি মারিয়া, আর তার দুর্দান্ত বলে ডি বক্সের ভেতরে মাথা ছোঁয়ান পিএসজির ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মার্কুইনেস। আর ১৩ মিনিটেই ১-০’তে এগিয়ে যায় পিএসজি।

এগিয়ে গিয়ে আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয় ফ্রান্সের ক্লাবটি। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে লেইপজিগের রক্ষণকে ব্যস্ত রাখে পিএসজির আক্রমণের ভাগের খেলোয়াড়রা। দুর্দান্ত আক্রমণের পরও গোলের দেখা মিলছিল না প্যারিসের ক্লাবটির। এদিন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দৌড়ে নামেন। ২০১৫ সালে পিএসজির হয়ে অভিষেকের পর ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগে ডি মারিয়ার (৮৯টি) থেকে কেবল বেশি অ্যাসিস্ট করেছেন লিওনেল মেসি (১০১টি)।

ম্যাচের প্রথমার্ধে আরও বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করে পিএসজি, তবে গোলের দেখা কিছুতেই মিলছিল না। তবে প্রথমার্ধ শেষের মিনিট তিনেক আগে নেইমারের ব্যাক ফ্লিপ থেকে ডি বক্সের ভেতরে পাওয়া বল জালে জড়ান ডি মারিয়া। আর পিএসজি ম্যাচের ৪২ মিনিটে এগিয়ে যায় ২-০ গোলের ব্যবধানে। এদিকে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের দুর্দন্ত ফর্ম ধরে রাখেন নেইমার। ২০১৩ সালে নেইমারের অভিষেকের পর চ্যাম্পিয়নস লিগে তার (২৩) থেকে বেশি অ্যাসিস্ট করতে পারেননি কেউই। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের রাজা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (২১)।

বিজ্ঞাপন

বিরতি থেকে ফিরে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে পিএসজি। দুই গোলে এগিয়ে থেকেও যেন সন্তুষ্ট হতে পারছিল না নেইমার এমবাপে ডি মারিয়ারা। তাই তো দ্বিতীয়ার্ধের ৫৬ মিনিটে বাঁ-প্রান্ত থেকে ডি মারিয়ার ক্রস থেকে ডি বক্সের ভেতর থেকে দুর্দান্ত ফিনিশ করেন হুয়ান বার্নাট। আর সেই সঙ্গে পিএসজি এগিয়ে যায় ৩-০ গোলের ব্যবধানে। আর তখনই নিশ্চিত হয়ে যায় পিএসজির প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল। ডি মারিয়া পেয়ে যান ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় অ্যাসিস্ট।

শেষ দিকে দুই দলই গোলের জয় মরিয়া হয়ে ওঠে। বেশ কিছু সুযোগ হাতছাড়া করে দুই দলই। তবে শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল না হওয়ায় প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ৩-০ গোলে আরবি লেইপজিগকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসের প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ওঠে।

লাইপজিগের রুপকথা লেখা হলো না ৩৩ বছর বয়সী কোচ উলিয়ান নাগেলসমানকে নিয়ে। কাতারি মালিকানার পিএসজি আর রেডবুলের লাইপজিগ- চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল অন্যরকম এক পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করিয়েছিল। লাইপজিগের তারুণ্য তাতে হার মেনেছে অভিজ্ঞ আর বিশ্বমানের খেলোয়াড়ে ঠাসা পিএসজির কাছে। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, নেইমার, কিলিয়ান এমবাপে- আক্রমণভাগের বাঘা বাঘা নামগুলো সব জ্বলে উঠলেন এক রাতে। তাতে পুড়ে ছারখার নাগেলসম্যান। আর হারটাও যে নাগেলসম্যানের নিজের কোচিং গুরুর কাছেই।

বিজ্ঞাপন

এর আগে টানা সাত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে পিএসজিকে। যার মধ্যে প্রথম চার মৌসুম কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে আর শেষ তিন মৌসুম রাউন্ড অব ১৬ থেকেই। যদিও এই সময়ের মধ্যে ফ্রান্সের লিগ শিরোপা হাতছাড়া না করে সিংহাসন গড়ে বসেছে পিএসজি। তবুও অধরা চ্যাম্পিয়নস লিগ। তাই তো বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ করে ইব্রাহিমোভিচ থেকে নেইমার আর এরপর এমবাপেকে দলে ভিড়িয়েছে পারসিয়ানরা। তবে ইউরোপিয়ান সাফল্য আর আসেনি কাতারি মালিকানাধীন ক্লাবটির। সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ওই ঘরোয়া সাফল্য নিয়েই। তবে সব ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে অবশেষে সে খরা কাটলো। ক্লাব প্রতিষ্ঠার পঞ্চাশতম বর্ষে এসে। এই তো এ মাসের ১২ তারিখ ক্লাবের ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকি পূর্ণ হলো। আর এবছরেই মিললো স্বপ্নের ফাইনালের দেখা।

সারাবাংলা/এসএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন