‘সিনহা হত্যা নিয়ে অনেকে বিশেষ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কক্সবাজারের টেকনাফে সাবেক সেনা কর্মকর্তা হত্যার ঘটনায় একটি পক্ষ ‘অন্যায্য বিশেষ সুযোগ’ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। এরকম একটি ঘটনা নিয়ে ‘অন্যকিছু করার চেষ্টা’ কাঙ্ক্ষিত নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে রেজিমেন্টাল কালার প্যারেড শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে সেনাবাহিনী প্রধান এসব কথা বলেন।

গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় ওঠে। সিনহা হত্যার বিচার দাবির পাশাপাশি বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের জন্য সোচ্চার হন নাগরিকরা। অভিযোগ আছে, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর উসকানি দেওয়া হয়। উদ্ভূত পরিস্থতিতে সেনাপ্রধান ও পুলিশপ্রধান কক্সবাজার সফর করেন। এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ১০ পুলিশসহ ১৩ জন কারাগারে আছেন। মামলার তদন্ত করছে র‌্যাব।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা হত্যার একমাস পর চট্টগ্রাম সেনানিবাসে এই অনুষ্ঠানে এসে সেই ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

এক প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান জানান, তিনি আশা করেন ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীতে কর্মরত এবং অবসরপ্রাপ্ত কারও সঙ্গেই এই ধরনের ঘটনা ঘটবে না।

জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আমি বলব, এটা একটা নৃশংস এবং অত্যন্ত জঘন্যতম ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত হচ্ছে। আমি সেনাপ্রধান হিসেবে আশা করতে চাই যে, তদন্তটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে। যারা প্রকৃত ক্রিমিনাল (অপরাধী) তাদের উপযুক্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে- যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের কোনো ঘটনা সেনাবাহিনীতে কর্মরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত আর কারও সঙ্গে না হয়।’

এ ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার তদন্তে সন্তুষ্ট কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত হচ্ছে, তদন্তনাধীন বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তদন্তে সন্তুষ্ট কি না এটা এখন বলা যাবে না। এটুকু বলতে পারি, অত্যন্ত জঘন্যতম ঘটনা ঘটেছে, এটার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে। তদন্তে কি বেরিয়ে আসে সেটা দেখি এবং সাজাটা যখন হবে, তখনই সন্তুষ্টির বিষয়টা আসবে। তার আগে সন্তুষ্টির বিষয়ে বলার কোনো সুযোগ নেই।’

সিনহা হত্যার ঘটনায় একটি পক্ষ বিশেষ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল মন্তব্য করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি যে, একটা ঘটনা ঘটলে কেউ না কেউ একটা অন্যায্য বিশেষ সুযোগ নিতে চায়। এবারও অনেকে চেষ্টা করেছিল। হয়তো এখনও করছে। এই ধরনের ঘটনা চলতেই থাকবে, তবে সচেতন মানুষ এগুলো বোঝে। একটা ঘটনা ঘটেছে, অবশ্যই অত্যন্ত নৃশংস, ন্যাক্কারজনক ঘটনা। সেটা শুধু সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেই ঘৃণা জানানো হয়নি, পুলিশপ্রধানও এসেছিলেন, তারাও ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সকলেই এই ঘটনার জন্য মর্মাহত।’

‘এরকম একটা ঘটনা নিয়ে কেউ যদি অন্য কিছু করার চেষ্টা করে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক হবে, সেটা কাঙ্ক্ষিত নয়’- স্পষ্ট বক্তব্য সেনাপ্রধানের।

সিনহা হত্যাকাণ্ডের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো সুপারিশ করা হবে কি না? এমন প্রশ্ন ছিল সাংবাদিকদের। জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সরকারকে কোনো সুপারিশ দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কারণ এই ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে একটা যৌথ তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমের প্রতি সেনাবাহিনী এবং আমি নিশ্চিত পুলিশবাহিনীরও সমর্থন আছে। এই তদন্ত দল যেটা উপযুক্ত মনে করবে, তারাই সুপারিশ করবে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো সুপারিশ করার সুযোগ আছে বলে মনে করি না।’

এই ঘটনায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যের অস্বাভাবিক কিছু যদি হয়, সেটা আমাদের অভ্যন্তরে তদন্ত হয়। এটা তদন্তের নির্দেশ আমরা দিয়েছিলাম, এটা হচ্ছে।’

এর আগে, চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর ছয়টি ইউনিটকে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পতাকা তুলে দেন সেনাপ্রধান। এ সময় তিনি কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের পাশাপাশি সালাম গ্রহণ করেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম