বিজ্ঞাপন

যা বললেন মেসি

September 5, 2020 | 12:23 am

আতিকুল ইসলাম ইমন

ব্যুরোফ্যাক্সে বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষকে ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর যেনো গোটা ক্রীড়াবিশ্বে তাণ্ডব বয়ে গেছে। হবেই বা না কেন, তিনি যে সময়ের সেরা তারকা। ব্যুরোফেক্স পাঠিয়ে অবশ্য পূর্ণ নীরবতা পালন করেন মেসি— আর টু শব্দটিও করেননি। তবে তার নীরবতায় কথা কমেনি বরং আরও বেড়েছে। নানা জল্পনাকল্পনা,তত্ত্ব ও তথ্য মিলে টানা ১০ দিন সরব ছিলো ক্রীড়াবিশ্ব।

বিজ্ঞাপন

ওদিকে ম্যানচেস্টার সিটি মেসিকে পেতে বড় অংকের টাকা প্রস্তাবেরও এক ঘোষণা দেয় বলে খবর রটে মিডিয়াপাড়ায়। এসব খবরে যতটা হৃদয় ভাঙ্গে বার্সেলোনা সমর্থকদের ঠিক ততটাই চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে সিটিজেনদের। মেসির মতো তারকা তাদের ডেরায় আসবেন এর চেয়ে বড় খবর আর কী হতে পারে? তবে বাস্তবতা ভিন্ন। বার্সেলোনার প্রেসিডেন্ট জোসেফ মারিয়া বার্তেমেউ শুরুতেই জানিয়ে দেন, মেসি ক্লাবের ইতিহাসের সেরা কিংবদন্তী, এতো সহজে স্পেন ছাড়া হতে দেওয়া যাবে না তাকে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ আইনি ধারা দেখিয়ে জানিয়ে দেয়, দলবদল করতে হলে গুণতে হবে ৭০০ মিলিয়ন ইউরো। ৭০০ মিলিয়ন ইউরো মানে টাকায় ৭০ হাজার কোটি। ভাবা যায়? এত বড় অংকের টাকা খরচের সাধ থাকলেও সাধ্য আছে কয়জনার? তাই মেসিকে শেষ পর্যন্ত থাকতে হলো ক্লাবে।

মেসিও কম যাননি, তার তরফ থেকে যেসব বার্তা দেওয়া হয় তা হলো, আইনের আশ্রয় নিলে জয় হবে তারই, কেননা মৌসুম শেষে ফ্রিতে ক্লাব ছাড়ার ধারা রয়েছে চুক্তিতে।

এসব দেনদরবার ও জল্পনার পর শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) মুখ খুললেন মেসি নিজে। এর মধ্যে অবশ্য তার বাবা ও এজেন্ট জর্জ মেসি বৈঠকে বসেন ক্লাব প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। সেখানেও ক্লাব প্রেসিডেন্টের স্পষ্ট ও শক্ত জবাব, ক্লাব ছাড়তে হলে পুরো ৭০০ মিলিয়ন পরিশোধ করতেই হবে। শুক্রবার মেসি নিজে জানালেন আসলে কী হয়েছিলো এতদিন।

বিজ্ঞাপন

ক্রীড়ামাধ্যম গোলডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, ‘আমি বার্সায় খেলা চালিয়ে যাব কারণ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ক্লাব ছাড়ার একমাত্র উপায় হলো ৭০০ মিলিয়ন ইউরোর রিলিজ ক্লোজ পরিশোধ করা। এটা অসম্ভব’।

আর এই অসম্ভবও যে আইনের আশ্রয় নিলে সম্ভব তা আবারও দাবী করলেন মেসি। তবে প্রিয় ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্কে যেনো আদালতের মাধ্যমে ছিন্ন না হয় তার উপরই জোর দিয়েছেন তিনি। মেসি বলেন,  ‘আমি বার্সেলোনাকে নিয়ে কখনই আদালতে যেতে চাই না, কারণ এটি আমার ভালোবাসার ক্লাব। এটিই (আদালতে যাওয়া) যদি একমাত্র উপায় হয়, তবে আমি ক্লাব ছাড়তে চাইনা’।

যে ক্লাবে তার শৈশব-কৈশরের বেড়ে উঠা, ছোট্ট মেসি থেকে সুপারস্টার মেসি হয়ে ওঠা সেই ক্লাব ছেড়ে অন্য কোথায়ও মেসিকে সমর্থকরা যেমন ভাবতে পারেন না, তেমনই তার পরিবারের সদস্যরাও পারেন না। মেসি বলেন, ‘আমি যখন ক্লাব ছাড়ার কথা আমার পরিবারের সদস্যদের জানালাম, সেটা এক করুণ চিত্র ছিলো। পরিবারের প্রত্যেকে কান্নাকাটি শুরু করল, আমার বাচ্চারা বার্সেলোনা ছাড়তে চায়না, তারা তাদের স্কুল পরিবর্তন করতে রাজি নয়’।

বিজ্ঞাপন

তবুও কেন এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলো ? মেসি জবাব দিলেন সে প্রশ্নের। বলেন, ‘আমি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েছি, আমি সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই, ট্রফি জিততে চাই, চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। আপনি হয়ত এটি জিতবেন বা হারবেন, কারণ এই প্রতিযোগিতা খুবই কঠিন, কিন্তু আপনাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে’।

মেসি মন থেকে চেয়েছিলেন, কিন্তু চাইতে হবে বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষকেও। এমনি এমনি তো আর এত বড় অংকের রিলিজ ক্লোজের অর্থ ধরা হয়নি। ক্লাবের সেরা তারকাকে যাতে কেউ বাগীয়ে নিতে না পারে সেজন্যই অবিশ্বাস্য এই সংখ্যা বসানো হয় চুক্তিতে। আর সে সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করে ক্লাব। মেসি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এবং নিশ্চিত ছিলাম যে আমি ফ্রিতে বার্সেলোনা ছাড়তে পারব, প্রেসিডেন্ট সবসময় বলতেন, মৌসুম শেষে আমি থাকব কি না সে সিদ্ধান্ত নিতে পারব’।

‘এখন তারা বলছে আমি ১০ জুনের আগে তাদের জানাইনি। গত ১০ জুনে আমরা করোনাভাইরাসের কারণে লা লিগার মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। এই রোগটি পুরো মৌসুম উলটপালট করে দিয়েছে’—  বলেন হতাশ মেসি।

বার্সেলোনা ছাড়ার কথা শুনে বাচ্চাদেরও হৃদয় ভেঙেছে। এসব কথা অবশ্য মেসি যদি না বলতেন তবুও বুঝতে অসুবিধা হতোনা, কারণ কে না জানে, এই বার্সেলোনা আর মেসি মানে এক ও অভিন্ন।

বিজ্ঞাপন

মেসি বলেন, ‘মাতেও এখনও ছোট এখান থেকে অন্য কোনো জায়গায় যাওয়া ও সেখানে কয়েক বছর কাটানোর অর্থ কী তা সে বুঝার মতো হয়নি। থিয়াগো কিছুটা বড় সে টেলিভিশনে খবর দেখেছে ও আমাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছে। সে আমার কাছে কান্নাকাটি করে এবং বলে, ‘চলো আমরা যেনো না যাই’।

আরও আছে। বার্সেলোনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, তার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে কাজ করেছে ক্লাব পরিচালনায় বোর্ডের ব্যর্থতা। মেসি বলেন,  ‘আমি সুখী নই, আমি ক্লাব ছেড়ে যেতে চাই। কিন্তু ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার কোনো উপায়ই আমাকে দেওয়া হলো না। বার্তামউ এর নেতৃত্বে ক্লাবের এই ব্যবস্থা পরিষদ একটি ধ্বংসস্তুপ’।

এখন দেখার পালা বার্সেলোনায় এ বছর আর কী কী হতে যাচ্ছে। মেসির মতো তারকা দল ছাড়ার স্পষ্ট ঘোষণা ও বোর্ডকে ব্যর্থ বললে তা এমনি এমনি শেষ হয়ে যাওয়ার কথা নয়।

সারাবাংলা/আইই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন