বিজ্ঞাপন

ইউপি চেয়ারম্যান-ওসিসহ ৭ জনের নামে নির্যাতিতা নারীর মামলা

September 10, 2020 | 12:26 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি শাহ জামান, পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত আশিকুজ্জামান, পার গেন্ডারিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহাদাত হোসেন, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের এমডি তুহিন রেজা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শুভাঢ্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন রুপা (ছদ্মনাম) নামে এক নারী।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৪ এ মামলা দায়ের করেন তিনি। বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) শুনানি শেষে আদেশ দেন আদালত।

মামলার বিবরণে বলা হয়, প্রথমে গণধর্ষণের শিকার হয়ে কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন ওই নারী। তবে মামলা করেও হয়নি কোনো সুরাহা। গণধর্ষন মামলার আসামিদের গ্রেফতার না করে উল্টো আসামিদের পক্ষ নিয়ে তাদের হাতে মামলার বাদী ও ভিক্টিমকে তুলে দিয়ে অপহরণে সহায়তা করা হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুন বিকেলে গণ ধর্ষণের শিকার হন ওই নারী। চাকরির আশ্বাস দিয়ে রুপাকে গণধর্ষণ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে রুপা বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন জনি (৩৪), আইয়ুব আলি (৩৫), তুহিন রেজা (৪০), আব্দুল জব্বার (৪২) ও বিল্লাল (৩৪)। ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।

তবে ঘটনার মোড় নিতে থাকে এরপর থেকেই। মামলার আসামিরা ঘোরাঘুরি করলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে আসামিদের বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ায় আইজিপির কাছে আবেদন করেন ভিকটিম রুপা। এরপর থেকেই ধর্ষণ মামলার আসামিরা মামলাটি তুলে নিতে বাদীকে গুম-খুনের হুমকি দিতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২১ জুলাই সকাল ৯টায় রুপাকে অস্ত্রের মুখে হুমকি দিয়ে তার দুই শিশু কন্যাকে তার নিজ বাসায় তালাবদ্ধ করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন আসামিরা। পরে নগদ ১০ হাজার টাকা দিলেও রুপাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। বিষয়টি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কেরানীগঞ্জ থানার ওসি, ওসি তদন্ত ও ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী অফিসারকে অবগত করেন রুপা। তবে রুপাকে পুলিশি নিরাপত্তা না দিয়ে তাদের সঙ্গে যাওয়ার পরামর্শ দেয় থানা পুলিশ।

সেখান থেকে রুপাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় শুভাঢ্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন কেরানীগঞ্জ থানার তেলঘাট এলাকায় একটি অফিসে। তারপর ইকবালের নির্দেশে রাহাত ডাকাত নামের এক ব্যক্তিসহ অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা একটি গাড়িতে তুলে পল্টন থানা এলাকার বিজয় নগর সাইমন স্কাইভিউ টাওয়ারের ৭ তলার একটি অফিস কক্ষে প্রায় ৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। সেখানে ইকবাল চেয়ারম্যান, জি এম সরোয়ার, রাহাত ও তুহিন রেজা রুপাকে দিয়ে তাদের মিথ্যা শিখানো কিছু কথাবার্তা ভিডিও ধারন করে এবং মামলা তুলে না নিলে রুপাসহ সাক্ষীদের নামে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

এরপর ২৩ জুলাই একইভাবে আবারও ইকবাল চেয়ারম্যানের হুকুমে রুপাকে তুলে নিয়ে যায় মামলার আসামিরা। রুপাকে এবার নেওয়া হয় সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণীর আকরাম টাওয়ারের ৭ তলায় একটি কক্ষে। এরপর সেখান থেকে বেশ কয়েক জায়গায স্থান বদল করে রুপাকে নিয়ে যাওয়া হয় রমনা থানা এলাকায় তুহিন রেজার একটি মদের আখড়ায় এবং রুপাকে মামলা তুলে নিতে আদালতে যেতে যেতে বলে ধর্ষণ মামলার আসামিরা। এবং ২২ ধারায় আদালতে আসামিদের পক্ষে জবানবন্দী দিতে চাপ প্রয়োগ করে ইকবাল চেয়ারম্যান, তুহিন রেজা, জি এম সরোয়ার। তাদের কথামতো কাজ না করলে রুপার শিশু সন্তানদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

এরপর ২৬ জুলাই কেরানীগঞ্জ থানার ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী অফিসার ইন্সপেক্টর শাহাদাত হোসেন রুপার বাসায় গিয়ে রুপাকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেন আদালতে নেওয়ার জন্য। পরে রুপাকে আদালতে নিয়ে বেশ কিছু কাগজে সই নিয়ে এ বিষয়ে কাউকে কিছু বললে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বাসায় পৌঁছে দেয় এবং তারা জানায় রুপার ধর্ষণ মামালা তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

এ বিষয়ে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ জামান বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) সারাবাংলাকে বলেন, ‘দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানায় রুপা (ছদ্মনাম) গণধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন। সেই মামলার এক আসামিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তবে পুলিশের নামে কোনো মামলা হয়েছে কিনা তা জানা নেই।

মামলার আইনজীবী জাকির হোসেন হাওলাদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘৭ সেপ্টেম্বর মামলার আবেদন করলেও আজ শুনানি হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাকেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন