March 11, 2018 | 12:22 pm
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
মাসখানেক আগের কথা। মাত্রই চট্টগ্রাম টেস্ট খেলে ফিরেছে দল। মুশফিকুর রহিম অবশ্য তার আগেই খবর পেয়ে গেছেন, ঘর আলো করে এসেছে নতুন অতিথি। এরপর ঢাকা টেস্ট, টি-টোয়েন্টি, নবজাতককে সময় দেওয়ার ফুরসতই পাননি মুশফিক। এরপর তো কয়েক দিনের বিরতির পর চলে আসতে হলো নিদাহাস ট্রফিতেই। কাল ৩৫ বলে ৭২ রানের মহাকাব্যিক ওই ইনিংসটা মুশফিক উৎসর্গ করলেন ছেলেকেই।
মহাকাব্যিক শব্দটা আসলে বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। তবে কাল অন্তত মুশফিকের জন্য খুব একটা বাড়িয়ে বলা হবে না। যখন ক্রিজে এসেছিলেন, ঠিক ১০০ রানে ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। তখনও জয়ের জন্য করতে হবে আরও ১১৫ রান, বল আছে ৬৩টি। মুখোমুখি তৃতীয় বলেই চার মেরে রিভার্স সুইপ করে চার মারলেন। যেন জানান দিলেন, দুস্তর পারাবার পাড়ি দিতে তিনি প্রস্তুত।
কিন্তু এমন শুরু তো অনেকবারই হয়েছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে মনে রাখার মতো কিছু কি সেভাবে ছিল? টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় ফিফটি পেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মাসখানেক আগে, সেটার পেছনেও হয়তো পুত্র সৌভাগ্য আছে। তবে সেই ম্যাচটা হেরে যাওয়ায় ৬৬ রানের ইনিংসটা অনেক দিন মনে রাখার মতো হয়নি মুশফিকের। কিন্তু আজ যেন সব অতৃপ্তি ধুয়েমুছে দেওয়ার জন্যই নেমেছিলেন।
তবে একটা আত্মবিশ্বাস তো লাগেই, সেটা কি দাশুন শানাকার বলে ওই ছয় থেকেই পেয়েছিলেন? অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট বলটা একরকম লাফ দিয়েই মারলেন, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের ওপর দিয়ে চলে গেল মাঠের বাইরে। পরের বলে আবার চার, মুশফিক কি বুঝতে পারছিলেন আজ কিছু একটা হতে চলেছে?
দেখতে দেখতে ২৪ বলে এসে গেল ফিফটি, কিন্তু তার আগেই এক দফা পায়ে চোট পেলেন। অন্য পাশে তখন মাহমুদউল্লাহ এসে গেছেন, মনে হচ্ছিল ম্যাচ শেষ করে আসার দায়িত্ব নিতে হবে অধিনায়ককেই। মুশফিক পরে অবশ্য জানিয়েছেন, ক্র্যাম্পি ছিল , আপাতদৃষ্টিতে এমন গুরুতর কিছু নয়। কিন্তু ওই মুহূর্তে তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল রণাঙ্গণের শেষ যোদ্ধা, একটা পা হারিয়েই যিনি বিজয় পতাকা ওড়াতে চান।
এরপর মাহমুদউল্লাহ ফিরে গেলেন, সাব্বির হয়ে গেলেন রান আউট। এক পা নিয়েই ম্যাচ শেষ করে আসার দায়িত্বটা পড়ল মুশফিকের ওপর। দুই বছর আগে এর চেয়ে অনেক সহজ সমীকরণ মেলাতে পারেননি বেঙ্গালুরুতে। সেই তুলনায় কালকের সমীকরণ ছিল রীতিমতো জটিল। শেষ ৫ ওভারে দরকার ৫৮ রান, থিসারা পেরেরার ১৮ রানের পর ৪ ওভারে হলো ৪০।
সাব্বির-মাহমুদউল্লাহ ফিরে যাওয়ার পর ক্রিজে ব্যাটসম্যান বলতে মিরাজ, তখনও জয়ের জন্য দরকার ১৮ রান। আর একটা উইকেট হারালেই ম্যাচটা চলে যাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মুশফিক একাই দায়িত্ব নিলেন, মিরাজকে খেলতে দিলেন এক বল। নুয়ান প্রদীপের বলে একটা ছয়, আর শেষ ওভারে পেরেরাকে চার মেরে জয় নিয়ে এলেন হাতের মুঠোয়। ম্যাচ শেষে মুশফিক অবশ্য শুরুটা ভালো করার জন্যই বললেন।
‘আমাদের এই জয়টা খুব করেই দরকার ছিল। স্নায়ু ধরে রাখার জন্য কৃতিত্বটা ব্যাটসম্যানদের প্রাপ্য। লিটন ও তামিম যেভাবে শুরু করেছিল, সেটা অসাধারণ ছিল। উইকেটও ব্যাট করার জন্য খুব ভালো ছিল। আপনি ক্রিকেটীয় শট খেললে যে কোনো রানই তাড়া করতে পারবেন।’
তবে এরপর স্মরণ করলেন দেশে রেখে আসা সন্তানকে, ‘আমার ছেলের বয়স মাত্র ৩৫ দিন। এই ইনিংসটা আমি ওকে উৎসর্গ করছি।’
বড় হয়ে শাহরুজ রহিম মায়ান নিশ্চয় বাবার এই কীর্তিটা বার বার দেখবে!
সারাবাংলা/ এএম/এসএন