বিজ্ঞাপন

শিক্ষায় আসছে ৩ পরিকল্পনা, সংক্ষিপ্ত হচ্ছে পাঠ্যসূচি-পাঠ্যক্রম

September 13, 2020 | 10:52 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে প্রায় সাত মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কবে খুলবে তা এখন নিশ্চিত নয়। তবে আপাতত ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। এরপর বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলে কীভাবে চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ হবে। আর যদি বিদ্যালয় বন্ধই রাখতে হয়, তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরতিকালীন পাঠদানের শূন্যস্থান কীভাবে পূরণ হবে।— এসব বিষয় পর্যালোচনা করে তিন বিকল্প গাইডলাইন তৈরি করেছেন দেশের শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। সরকারের নির্দেশ পেলেই সেসব গাইডলাইন উপস্থাপন করবেন তারা।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম শেষ হবে। অক্টোবরে বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর এই সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করতে তিন বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করেছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত, অক্টোবরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে গেলে ৫০ কার্যদিবস সময় পাওয়া যাবে। এই সময়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রেখে সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, নভেম্বরে বিদ্যালয় খুলে গেলে পাওয়া যাবে ৩০ কার্যদিবস। এই সময় ধরে আরও সংক্ষিপ্ত করে সিলেবাস তৈরি করেছেন তারা। তৃতীয়ত, যদি বিদ্যালয় বন্ধই রাখতে হয় এবং অটোপাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপরের ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়, তাহলে শিক্ষাবর্ষের গ্যাপ কীভাবে পূরণ হবে সে কৌশলও নির্ধারণ করা হয়েছে।

সিলেবাস তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক শিক্ষা বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাধ্যমিক পর্যায়ের দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পাঠ্যবই বিশ্লেষণ করে আমরা একটা ইউনিফর্ম দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। যেমন- যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোকে রেখে ৫০ দিনে যা পড়ানো সম্ভব প্রতিটি বিষয়ে সেরকম একটি তালিকা তৈরি করেছি। যদি ৩০ দিন পাওয়া যায় তাহলে সে অনুযায়ী আরেকটা সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। আর যদি চলতি শিক্ষাবর্ষে বিদ্যালয় বন্ধই রাখতে হয় তবে আরেক ধরনের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আরেকটা পরিকল্পনা তৈরি করছি।’

জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল যদি না খোলা যায়, তাহলে শিক্ষার্থীদের অটোপাসের মাধ্যমে উপরের ক্লাসে উর্ত্তীর্ণ করা হবে। চলতি শিক্ষাবর্ষে যদি ৫০ কিংবা ৩০ কার্যদিবস সময় পাওয়া যায় তাহলে বাকি অংশ পরের শ্রেণিতে গিয়ে কভার করার সুযোগ থাকবে। আর যদি চলতি শিক্ষাবর্ষে পাঠদান কিংবা পরীক্ষার সুযোগ একেবারেই না পাওয়া যায় তাহলে উপরের ক্লাসে গ্যাপ পূরণ করা হবে। আর সে গ্যাপ শিক্ষকরাই পূরণ করবেন। তবে তিনি কী উপায়ে করবেন সে বিষয়ে গাইডলাইন তৈরি করা হচ্ছে। সরকার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নিলেই সেসব গাইডলাইন বা নির্দেশিকা প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার এই রিকভারি প্ল্যান বা পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে এরইমধ্যে এনসিটিবিতে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই কর্মশালায় অংশ নেন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। নভেম্বরের মধ্য বিদ্যালয় খোলা সম্ভব হলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়িয়ে বার্ষিক পরীক্ষার আয়োজন করা হবে বলে কর্মশালায় সিদ্ধান্ত হয়। আরও সিদ্ধান্ত হয় যে, বর্তমান সিলেবাসের যে অংশটুকু বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটুকু রেখে বাকিটুকু বাদ দেওয়া হবে। আর ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হলে অটোপাসের মাধ্যমে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পরের ক্লাসে উন্নীত করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু এখনও বলা যাচ্ছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে, নাকি খোলা সম্ভব হবে না। আমরা কয়েকটা পরিকল্পনা করে রেখেছি। অক্টোবরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ওপেন হলে যেটুকু সময় পাওয়া যাবে তার মধ্যে একটা শর্ট সিলেবাস তৈরি করা হচ্ছে। আবার নভেম্বরেও যদি বিদ্যালয় খুলে যায় তাহলে যে কয়েকদিন সময় থাকবে সেই হিসাব করে একটি সিলেবাস তৈরি করা হচ্ছে। সময় স্বল্পতার কারণে কারিকুলাম ও সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হচ্ছে। পুরো বছরের পাঠ পরিকল্পনা এখন রিডিজাইন করা হচ্ছে। আমরা সবধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখব। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’

মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এখন মন্ত্রণালয় থেকে দিক নির্দেশনা পেলেই তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেব।’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বেডু) মাধ্যমিকের জন্য রিকভারি প্ল্যান তৈরি করেছে। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) তৈরি করেছে প্রাথমিকের জন্য রিকভারি প্ল্যান। আর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিদ্যালয় খোলার আগে প্রস্তুতি নিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য গাইডলাইন তৈরি করে এরই মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম উল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অক্টোবরে স্কুল খোলা যাচ্ছে কি না তা এখনই বলা সম্ভব না। তবে আমাদের দুটি পরিকল্পনা আছে। একটা হলো- অক্টোবরে বিদ্যালয় খুলতে পারলে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৭ কার্যদিবস পাব। সে অনুযায়ী একটি পাঠদান পরিকল্পনা করেছি। আর দ্বিতীয় হলো- ১ নভেম্বর ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ দিন যদি সময় পাওয়া যায় সে অনুযায়ী আরেকটা পাঠদান পরিকল্পনা করে রেখেছি। সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে ন্যূনতম পাঠদানটা আমরা যাতে দ্রুত শেষ করতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর যদি স্কুল খুলতে না পারি তাহলে আপনারাই জানেন কী হবে। আমার এক কোটি ৪০ লাখ সন্তান, তাদের নিরাপত্তা তো দেখতে হবেই। বিদ্যালয় পাঠদানে প্ল্যান তৈরি করবে। আমরা সে প্ল্যানে গাইডলাইন অনুসরণ করবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই। আমরা টেলিভিশন, রেডিও এবং ফোনের মাধ্যম পাঠদান করে যাচ্ছি। ৮৪ ভাগ শিক্ষার্থী এভাবে শিক্ষাগ্রহণ করছে। যে ১৬ ভাগ রয়েছে তাদের জন্য কিছু করা বড় চ্যালেঞ্জ।’

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সেই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৮৮ কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে। ১৬ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মাত্র ৪১ কর্মদিবস পেলেও এ সময়ে তেমন পড়াশুনা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন