বিজ্ঞাপন

ক্যাসিনোকাণ্ডের একবছর, র‌্যাবের নজরদারিতে নিয়ন্ত্রণে ক্লাব পাড়া

September 18, 2020 | 3:11 am

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। বিকেলে হঠাৎ মতিঝিলের ক্লাব পাড়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে এক দল র‍্যাব সদস্যের হানা। আকস্মিক এ অভিযানে ইয়াং মেনস ক্লাবে মিললো অবৈধভাবে পরিচালিত ক্যাসিনো। র‌্যাবের হাতে আটক হলেন ১৮২ জন।

বিজ্ঞাপন

সেই শুরু। এরপর একে একে বেরিয়ে আসে রাজধানীতে বছরের পর বছর ধরে চলে আসা ক্যাসিনোর গোপন অধ্যায়। সেই সঙ্গে উঠে আসতে থাকে মূল হোতাদের নাম। একে একে গ্রেফতারও হতে থাকেন ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত সেসব রাঘব-বোয়ালরা।

অভিযানের প্রথম দিনেই ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে ফকিরাপুলের ইয়াং মেনস ক্লাবের গুলশানের বাসা থেকে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। এরপর ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়।

চলতে থাকে শুদ্ধি অভিযান। একে একে গ্রেফতার হন গণপূর্তের ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক মো. লোকমান হোসেন ভূইয়া, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ শফিফুল আলম ফিরোজ, অনলাইন ক্যাসিনোর প্রধান সমন্বয়কারী সেলিম প্রধান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান, মোহাম্মদপুরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা ময়নুল হক ওরফে মনজু।

বিজ্ঞাপন

এ অভিযানে শুরুর পর অনেকেই গা ঢাকা দেন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতে। অনেকেই এসব দেশে আত্মগোপনে রয়েছে বলে র‍্যাব সূত্রে জানা গেছে।

দেশ-বিদেশে আলোচিত ক্যাসিনোবিরোধী এ অভিযানের একবছর পূর্ণ হচ্ছে আজ শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর)। অভিযানের একবছর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেছেন, অনেকেই ভাবছেন অভিযান থেমে গেছে। কিন্তু আমরা (র‍্যাব) স্পষ্ট করে বলতে চাই, গত বছর থেকে শুরু হওয়া ক্যাসিনোবিরোধী এ অভিযান সাম্প্রতিক সময়েও অব্যাহত রয়েছে।

র‍্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আশিক বিল্লাহ বলেন, দেশব্যপী আলোড়ন ফেলা ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে রাজধানীতে আটটি ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামে তিনটিসহ মোট ১১টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। অভিযানে প্রায় ২৭০ কোটি টাকার এফডিআর ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এসব অভিযানে ৩২টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আদালত ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে ১৪টি মামলা তদন্ত করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় র‍্যাব। ১৪টি মামলার মধ্যে ১৩টি মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। বাকি একটি মামলা আদালতের নির্দেশক্রমে চার্জশিট স্থগিত আছে।

বিজ্ঞাপন

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় র‍্যাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা ইসমাঈল হোসেন সম্রাট ও জি কে শামীমদের মতো যারা আছেন, তাদের গডফাদার বা প্রশ্রয়দাতাদেরও চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে। একবছরে এরকম কিছু দৃশ্যমান হয়নি— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মূলহোতা বা পৃষ্ঠপোষক— এরকম একটি কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমেও এসেছে। র‍্যাবের নজরে এসেছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ফৌজদারি অপরাধভিত্তিক যে বিষয়গুলো, সেগুলোতে র‍্যাব চার্জশিট দাখিল করেছে। চার্জশিট দাখিল হওয়ার পর পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। বিচার প্রক্রিয়ায় যদি এরকম কোনোকিছু উপস্থাপিত হয়, সে বিষয়ে আদালতের নির্দেশক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনলাইন ক্যাসিনো কারা পরিচালনা করছে— এ বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূলত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অনলাইনভিত্তিক ক্যাসিনো যেটি, সেটি র‍্যাবই প্রথম আলোচনায় নিয়ে আসে। ওই অনলাইন ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত মূল আসামীরা কারাগারে রয়েছে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে ছোটখাটো যে অভিযোগগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো অনলাইনভিত্তিক ক্যাসিনো হলেও ছোট গ্রুপ। বড় কিছু নয়। বিদেশি ডোমেইন থেকে মূলত এগুলো পরিচালিত হচ্ছে। এরকম বেশকিছু বিষয় র‍্যাবের নজরে এসেছে। সেসব বিষয় নিয়েও র‍্যাব কাজ করছে।

সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন