বিজ্ঞাপন

নৌপরিবহনের প্রকল্পে বিদেশ সফর থেকে কমলো ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা

September 21, 2020 | 10:07 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে বিদেশ সফর থেকে কমলো ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে সাড়ে ৪ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় এ নিয়ে ভেটো দেয় পরিকল্পনা কমিশন। বলা হয়, এ খাতে সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা যাবে। সেইসঙ্গে ওই প্রশিক্ষণে শুধুমাত্র সংস্থার (বিআইডব্লিউটিএ) প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কারিগরি কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি অংশ নেবেন। এমন সিদ্ধান্ত মেনে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন প্রকল্প-১ (চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ ও সংযুক্ত নৌপথ খনন এবং টার্মিনালসহ আনুষাঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ) এর সংশোধনী প্রস্তাবে উঠে এসেছে এমন চিত্র।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বিদেশ সফর প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আামি ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছি, যাতে তারা খুঁটিনাটি বিষয়গুলো দেখেন। যদিও আমাদের জনবল অনেক ক। তারপরও তারা চেষ্টা করছেন। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য অনেক কিছুই করছে সরকার। উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যেসব ব্যয় একেবারেই না করলেই নয়, সেসব ব্যয়েই কেবল উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিদেশ সফরে বিরোধী নই। প্রয়োজন হলে অবশ্যই কর্মকর্তারা জ্ঞান অর্জনের জন্য বিদেশে যাবেন। এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু যদি অপ্রয়োজনে কেউ বিদেশ সফরে যান, সেটি অবশ্যই অপচয়। পরিকল্পনা কমিশন বর্তমানে বিষয়গুলো কঠোরভাবে দেখছে। যদি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা পরিকল্পনা কমিশনকে সন্তুষ্ট করতে না পারেন তাহলে পরিকল্পনা কমিশন কোনোভাবেই বিদেশ সফরে বরাদ্দ রাখার বিষয়ে সুপারিশ করবে না।’

সূত্র জানায়, নৌ-পরবহন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রথম সংশোধনীর প্রস্তাবসহ প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ ইতোমধ্যেই শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন শেষ করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীর্ণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

বিজ্ঞাপন

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নদীমাতৃক বাংলাদেশে অনেক নৌপথ রয়েছে। নৌপরিবহন হলো তুলনামূলকভাবে সহজ ও পরিবেশ বান্ধব এবং দেশের দূরবর্তী অংশের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম। চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ নৌ-করিডোর এবং নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালের বর্ধিতাংশকে অভ্যন্তরীণ এবং ভারতের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার রুট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ নৌযান এ করিডোরের মধ্য দিয়ে চলাচল করে এবং দৈনিক প্রায় ২ লাখ যাত্রী এসব জলপথ ব্যবহার করে। যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করার ক্ষেত্রে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, আশুগঞ্জ, চাঁদপুর এবং বরিশাল অভ্যন্তরীণ নদী টার্মিনালগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। ঢাকা-চ্ট্টগ্রাম সড়ক পথের ওপর পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ কমানোর উদ্দেশে অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলো উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দীর্ঘদিনের আলোচনায় প্রাথমিকভাবে বিআইডব্লিউটিএ বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ফান্ডের সহায়তায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটি অনুমোদিত হয় ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে।

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সই করা আর্থিক চুক্তি অনুসরণ করে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক দলিলাদি তথা প্রজেক্ট এগ্রিমেন্ট, প্রজেক্ট অ্যাপারিসেল ডকুমেন্ট (পিএডি), বিশ্বব্যাংক প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইনস, ইত্যাদি এবং প্রকৃত প্রয়োজনীয়তার মূল অনুমোদিত ডিপিপির কিছু সংশোধনীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ জন্য চট্টগ্রাম ঢাকা-আশুগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ করিডোরের উন্নয়ন এবং বিআইডব্লিউটিএর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৩ হাজার ৩৪৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় এবং ২০১৬ সালের ১লা জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে।

গত বছরের ১২ ডিসেম্বর প্রকল্পটির প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধনীর ওপর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রস্তাবিত সংশোধিত প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গ, অঙ্গের পরিমাণ নির্ধারণ, ব্যয় পুনঃপর্যালোচনা, প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর যৌক্তিকতা, প্রকল্পের দ্বৈততা পরিহার, ইআরডির মতামতের প্রতিফলন দিকগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। বিভিন্ন প্যাকেজের বিপরীতে নীতিগত সম্মতিতে বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ, কার্যক্রম বিভাগ, আইএমইডি, ইআরডি এবং বিআইডব্লিউটিএর প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেয়। সে অনুযায়ী ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, ওয়ার্কস এবং সার্ভিস প্যাকেজগুলো বিভিন্ন লটে বিভক্তকরণ, প্যাকেজের মোট সংখ্যার পরিবর্তন, নতুন আইটেমের অন্তর্ভুক্তি, কিছু প্যাকেজের ব্যয় বৃদ্ধি, প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন মেয়াদে অতিরিক্ত জনবলের সংস্থান, বিভিন্ন আইটেমের ব্যয় বৃদ্ধি, আন্তঃখাত সমন্বয়, আইটেমগুলোর পুরনো কোডগুলোকে নতুন অর্থনেতিক কোডে রূপান্তর, মার্কিন ডলারের বিনিময হার বৃদ্ধি, প্রকল্পের সমাপ্তি, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত বিষয়াদি এবং প্রকল্পের সমাপ্তিকাল বাড়াতে হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) শামীমা নার্গিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ অঞ্চলের নৌকরিডোরের সক্ষমতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন এবং এটিকে টেকসই খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে।

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন