বিজ্ঞাপন

ভারি বৃষ্টিপাতে বগুড়ায় তলিয়ে গেছে ১১শ হেক্টর জমির ফসল

September 30, 2020 | 8:58 am

আমজাদ হোসেন মিন্টু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

বগুড়া: পাহাড়ি ঢলের পাশাপাশি সপ্তাহজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বগুড়ায় সব নদ-নদীর পানি ফের বেড়ে গেছে। এতে করে জেলার বিভিন্ন এলাকার ফসল তলিয়ে গেছে পানিতে। এসব ফসলের মধ্যে যেমন রয়েছে আউশ, আমন ও রোপা আমন, তেমনি বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, বিশেষ করে মরিচ। শুধু তাই নয়, জেলার ধানের বীজতলাগুলোও এখন পানির নিচে। সব মিলিয়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ এক হাজার ১০৬ হেক্টর। এর মধ্যে রোপা আমনের ক্ষেতই তলিয়েছে এক হাজার হেক্টরেরও বেশি।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা ও বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নতুন করে যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি বেড়েছে। এতে করে নদী এলাকার আউশ, আমন ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মোট ১১০৬ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার তথ্য জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শাহাদুজ্জামান সারাবাংলাকে জানান, পানি বেড়ে জেলায় ১০২৫ হেক্টর রোপা আমন, ৪৫ হেক্টর মাশকালাই, ৩২ হেক্টর সবজি ও চার হেক্টর মরিচের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ১১০৬ হেক্টর জমির ধান ও অন্যান্য ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে।

শাহাদুজ্জামান বলেন, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী, ধুনট, শেরপুর, শাজাহানপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় পানিতে তলিয়ে যাওয়া ক্ষেতের পরিমাণ বেশি। পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যাবে বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা জানান, বৃষ্টি ও নদীর পানিতে তাদের চাষ করা আমন ধান ও শাকসবজি এবং চরাঞ্চলের কৃষকদের আউশ, মরিচ, রোপা আমন, বীজতলা, শাকসবজি ও গাইনজা ধানের আবাদ তলিয়ে গেছে। উপজেলার সারিয়াকান্দি পৌরসভার দক্ষিণ হিন্দুকান্দি, ছাগলধরা, ডোমকান্দি, নারচি নিজ বরুরবাড়ী, হাটশেরপুর ইউপির হাসনাপাড়া, শাহানবান্দা ছাড়াও চর এলাকার বোহাইল, কর্নিবাড়ী, কাজলা, চালুয়াবাড়ী, হাট শেরপুর ও সদর ইউনিয়নের নিচু এলাকার প্রায় সব ফসলি জমি এখন পানির নিচে।

সোনাতলা উপজেলায় যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রায় ১৬৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নদীর পানি আরেক দফা বেড়ে যাওয়ায় ফের চাষের সব জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ চলছে।’

বিজ্ঞাপন

নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতা মাজগ্রাম ইউনিয়নের নাগর নদে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানি বৃদ্ধি হওয়ায় গুলিয়া, পারশন, পারঘাটা, সারাদিঘর এলাকায় মাঠের আমন ধান ডুবে যাচ্ছে। দিন দিন পানি বাড়তে থাকায় ও গুলিয়া দূর্নার খালে বাঁধ ধ্বসের কারণে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে করে কৃষকদের দিন কাটছে হতাশায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে, নাগর নদে পানি বেড়ে এখন বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নন্দীগ্রাম উপজেলার পারঘাটা গ্রামের কৃষক হযরত আলী ও মাফু মিয়া বলেন, শুধু আমরা নই, এই এলাকার অনেক কৃষকের স্বপ্ন আর আশা ডুবিয়ে দিয়েছে বন্যা। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জমির রোপা আমন ধান নিয়ে আমরা এখন দিশাহারা। ফসল তুলতে না পারলে সারাবছর খাব কী?

নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষি অফিসার মো. আদনান বাবু বলেন, নন্দীগ্রাম উপজেলায় এবার ১৯ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৮০ হেক্টর জমির ধান প্লাবিত হয়েছে। তবে নাগর নদে আর যদি পানি না বাড়ে, তাহলে হয়তো রোপা আমন ধানের আর ক্ষতি হবে না।

এদিকে, চলতি বছর এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো কৃষকের ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে নন্দীগ্রামের কৃষকদের মতো দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অন্যান্য উপজেলার কৃষকরাও। এ পরিস্থিতিতে তারা সরকারি সহায়তা চান। কৃষকরা বলছেন, পানির কারণে কতটুকু ফসল ঘরে তুলতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা না পেলে তাদের পথে বসতে হবে। সরকার সহায়তা করলে হয়তো কোনামতে নতুন করে আবার চাষাবাদের সাহস করতে পারবেন তারা।

বিজ্ঞাপন

কৃষকদের এমন দাবির পক্ষে মত সোনাতলা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ আহমেদেরও। তিনি বলেন, চলতি বছরের চার দফা বন্যায় কৃষকের সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পর কৃষকদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব পাঠানো হবে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন