বিজ্ঞাপন

পুলিশের তদন্তে শ্বাসরোধে হত্যা, ৬ বছর পর জীবিত ফিরলেন মামুন

October 1, 2020 | 7:27 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

নারায়ণগঞ্জ: অপহরণ ও খুন করার অভিযোগে গার্মেন্টসকর্মী তাসলিমাসহ তার পরিবারের সদস্যদের কারাভোগও করতে হয়েছে। তদন্ত শেষে পুলিশও বলেছিলো, ‘আসামিদের গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা গেছে শ্বাসরোধে খুন করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’ তবে ছয় বছর পর মৃত মামুন জীবিত ফিরে আসায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ২০১৪ সালে নিখোঁজ হওয়ার পর ২০১৬ সালের ৯ মে ছেলেকে অপহরণ করে হত্যার উদ্দেশে গুম করা হয়েছে অভিযোগ এনে ফতুল্লা থানায় মামলা করেন মামুনের বাবা আবুল কালাম। সেই মামলায় আসামি করা হয় গার্মেন্টসকর্মী তাসলিমা, তার বাবা রহমত উল্লাহ, ভাই রফিক, খালাতো ভাই সাগর, সোহেল ও ছাত্তার মোল্লাকে। পুলিশ ছয় জনকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নেয়।

রিমান্ড শেষে এক আসামিকে আদালতে পাঠানোর সময়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদনে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান উল্লেখ করেন, ‘তদন্তকালে জানা গেছে আসামিরা মামুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ফেলে দেয়।’ অথচ বুধবার সেই মামুনকে আদালতপাড়ায় দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগী গার্মেন্টসকর্মী তাসলিমা বলেন, ‘পুলিশকে হাজারোবার বলেছিলাম আমরা খুন করি নাই। তারপরও আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছিলো মামুনের পরিবার। আমার জেল খাটছি। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আর মিথ্যা মামলায় কেন আমাদের কারাগারে থাকতে হলো? এসবের ক্ষতিপূরণ চাই আমরা।’

বিজ্ঞাপন

তাসলিমার বাবা রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের নামে অপহরণ আর খুনের মিথ্যা মামলা দিয়েছিলো মামুনের পরিবার। আমরা নাকি তাদের ছেলেকে কেটে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসায়ে দিছি। এসব কারণে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ, একবছর ধরে জেলও খাটছি। আমরা এসবের বিচার চাই। এখন মামুন ফিরে আসার পর পরিস্কার হইছে বিষয়টা ষড়যন্ত্র ছিলো।’

এদিকে ছয় বছর পর ফিরে আসা মামুন বলেন, ‘আমাকে কেউ অপহরণ করেনি। আমি বাবা-মায়ের সাথে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। এই ছয় বছরে পরিবারের কারও সাথেই আমার যোগাযোগ ছিলো না। এখন এসে শুনি এই ঘটনা। বিষয়টি জেনেই সুরাহার জন্য আমি আদালতে ছুটে এসেছি।’

বিজ্ঞাপন

আসামিপক্ষের আইনজীবী এমদাদ হোসেন সোহেল জানান, বাদি তাসলিমার সাথে মামুনের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো বলে মামলায় বলা হয়েছিল। শুধু এর জেরেই সন্দেহের বশে তাদের নামে অপহরণ আর খুনের মামলা দেওয়া হয়েছিল। এখন মামুন ফিরে আসায় বিষয়টি একেবারেই পরিস্কার আসামিরা সম্পূর্ণ নির্দোষ। পুলিশ আর সিআইডি’র গাফিলতিতেই বিনা দোষে আসামি হয়ে কারাভোগ করতে হয়েছে তাসলিমা ও তার পরিবারের সদস্যদের। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, পুলিশ মামুনকে মৃত দেখায়নি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডিতে রয়েছে, তারাই ঘটনাটি তদন্ত করছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ জানান, এই ঘটনা ২০১৪ সালের। সেসময় এই মেয়ের সঙ্গে প্রেমের টানে ছেলেও নারায়ণগঞ্জ এসে গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। কিন্তু ছেলের পরিবার থেকে এইটা মানা হচ্ছিল না। এর দুইবছর পর ছেলের পরিবার অপহরণ আর খুনের মামলা করে। আমরা সাধারণত তদন্তে পুলিশের ১৬৪ ধারার ওপরেই নির্ভর করি। এইটার ওপরেই নির্ভর করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। এখন ৬ বছর পর বিচারিক আদালতে এসে ভিকটিম হাজির হয়েছে। এখন আদালতই বিষয়টি দেখবে। তারাই এটি শেষ করবেন। আর আমাদের ক্ষেত্রে তদন্তের কাছে যদি কারও গাফিলতি থাকে তবে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন