বিজ্ঞাপন

অধ্যক্ষ নেই ১৪১ সরকারি কলেজে, নিয়োগ দিতে তালিকা সংগ্রহের উদ্যোগ

October 4, 2020 | 4:51 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সুনামগঞ্জের দিরাই ডিগ্রি কলেজে গত চার বছর ধরে অধ্যক্ষ নেই। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটির কার্যক্রম চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে। জানা গেছে, ম্যানেজিং কমিটির মধ্যকার দ্বন্দ্বে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট হাসান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজেরও অধ্যক্ষ নেই দীর্ঘদিন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই নোয়াবপুর সরকারি কলেজ। জানা গেছে, কুমিল্লা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর- এই তিন জেলার অন্তত আট কলেজে অধ্যক্ষ নেই। শুধু এই আটটি নয়, দেশে এমন প্রায় দেড়শ কলেজ রয়েছে অধ্যক্ষবিহীন। এই কলেজগুলোর শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে; আবার কোনো কোনোটির উপাধ্যক্ষও নেই।

জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেবলমাত্র রুটিন কাজগুলো করতে পারেন। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। বরং ম্যানেজিং কমিটির ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার বেশি এই পদের চেয়ে। কিন্তু অধ্যক্ষ চাইলে নিজ ক্ষমতা বলে নিয়োগ, বদলি ও বহিষ্কার থেকে শুরু সবধরনের সিদ্ধান্ত একাও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি চাইলে কমিটিকে এড়িয়ে এসব কাজ করতে পারেন। এতগুলো কলেজে অধ্যক্ষ না থাকায়, নিয়োগ, বদলি, ভবন সংস্কার, এমনকি এই করোনাকালীন দিক-নির্দেশনা দেওয়া এবং জবাবদিহিতার জায়গা নেই বললেই চলে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকবছর ধরেই দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নেই। কলেজগুলোর কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে। নিয়মিত অধ্যক্ষ না থাকায় শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম নানাভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে নেতৃত্ব সংকটে।

বিজ্ঞাপন

এবার এই সংকট দূর করতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সরকারি কলেজগুলোতে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ দিতে তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। যেসব সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নেই ৫ অক্টোবরের মধ্যে সেগুলোর তালিকা সংগ্রহে নয়জন আঞ্চলিক পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, শূন্যপদগুলোতে নিয়োগ দিতেই গত বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) আঞ্চলিক পরিচালকদের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে মাউশি। এ প্রসঙ্গে মাউশি মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘চূড়ান্ত তালিকা এলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সরকার চায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ ও উপাধাক্ষ্যের শূন্য পদ পূরণ করতে।’

জানা যায়, দেশে সরকারি কলেজের সংখ্যা ৬৩২টি। কয়েক মাস আগেও এগুলোর মধ্যে নতুন ও পুরনো মিলিয়ে দেশের ১৪১টি সরকারি কলজে অধ্যক্ষের পদ শুন্য ছিল। যার মধ্যে নতুন জাতীয়করণ হওয়া ৭৮টি অধ্যক্ষের পদ শূন্য আর পুরনো ৬৩টি কলেজে অধ্যক্ষ নেই, যা শতকরা হিসেবে ২২ শতাংশ। শুধু অধ্যক্ষের পদই নয়, তখন ২৮ কলেজের উপাধ্যক্ষ পদও শুন্য ছিল। এর বাইরে ২ হাজার ৮৭৮টি শিক্ষকের পদ খালি ছিল।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে দেশের সরকারি কলেজগুলোতে সাড়ে তিনশ’র মত অধ্যাপক রয়েছেন। আর সহযোগী অধ্যাপকের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাপকের পদ থেকেই অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। চাইলে এই অধ্যাপকদের মধ্য থেকে যেসব কলেজে কম শিক্ষার্থী সেগুলোতে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া যেত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক কলেজে এ সুযোগ থাকলেও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে তা সম্ভব হয়নি।

আইন অনুযায়ী, সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। সেজন্য অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে অনেক শিক্ষকই মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব হওয়া এই শূন্য পদের সংখ্যা দীর্ঘায়িত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গেল বছরই বেশকিছু কলেজে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে করতে নতুন বছর চলে এসেছে। পাশাপাশি শুরু হয় করোনাভাইরাস সংক্রমণ। তাই বিলম্ব হয়েছে। তবে এখন দ্রুতই অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন