বিজ্ঞাপন

‘কোভিড সত্ত্বেও বাংলাদেশ ২০২১ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে যাবে’

October 8, 2020 | 9:34 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) অভিঘাত সত্ত্বেও স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে ‍উন্নীত হতে প্রয়োজনীয় সূচকগুলো ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ অর্জন করতে সক্ষম হবে বলে মনে করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে— বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছরে ২০২১ সালে দ্বিতীয়বারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার জন্য চূড়ান্ত স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। কারণ যে তিনটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত এই স্বীকৃতি পেতে হবে, কোভিড-১৯-এর অভিঘাত সত্ত্বেও বাংলাদেশ সেই সূচকগুলো অর্জন করতে সক্ষম হবে। ফলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হয়ে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।

বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সিপিডি‘র সম্মানিত এই ফেলো এসব কথা বলেন। কোভিড সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাংলাদেশের জন্য এলডিসি থেকে উত্তরণের সূচক অর্জন করা সম্ভব বলেই এসময় মন্তব্য করেন তিনি।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত ৪০ বছরে মাত্র পাঁচটি দেশ এলডিসি থেকে বের হয়েছে। বর্তমানে ১২টি দেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার জন্য পাইপলাইনে রয়েছে। এর মধ্যে অ্যাংগোলা ও সালভাদর ছাড়া বাকি ১০টি দেশ এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভুটান, মিয়ানমার, নেপালসহ কয়েকটি দেশ রয়েছে এই তালিকায়।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এলডিসি থেকে বের হতে তিনটি সূচক রয়েছে— মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সূচক। আগামী বছরের মার্চে ফের এই তিনটি সূচকের অগ্রগতি বিবেচনায় নেওয়া হবে। কোভিড সংক্রমণের আগে আমরা এই সূচক তিনটিতে ভালো অবস্থানে ছিলাম। আগামী বছরের মার্চের আগেই এই তিনটি সূচতে কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। এরপর কোভিডের কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সেটি ঠিক কতটুকু ক্ষতি, সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এলডিসি থেকে উত্তরেণে কোনো সমস্যা হবে না।

সিপিডি’র এই সম্মানিত ফেলো বলেন, এলডিসি থেকে বাংলাদেশ যদি সত্যি সত্যি বের হয়ে যায়, তাহলে কয়েকটি খাতে বড় ধাক্কা লাগবে। বিশেষ করে রফতানির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া, কৃষি ক্ষেত্রের ভর্তুকি, মেধাস্বত্ব আইনের ব্যবহার, ওষুধ শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেসব সুবিধা পেয়ে আসছে, সেগুলো পাওয়া যাবে না কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে তা কমে যাবে। তারপরও খুশির কথা হলো— একদিকে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হচ্ছি, অন্যদিকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের দিকে যাচ্ছি। আর সমস্যা হলো— নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়ার ফলে উন্নয়ন সাহায্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। অর্থাৎ যেসব শর্তে আমরা ঋণ নিয়ে থাকি, সে শর্তগুলো আরও কঠিন হবে। অনুদান পাওয়ার সুযোগ কমে যাবে। এর ফলে আর্থিক ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার দেখা দিতে পারে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কোভিড-১৯ সত্ত্বেও জাতীয় আয় নিয়ে আমরা ভালো অবস্থানে রয়েছি। আমাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। তবে চিন্তার কারণ হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত নিয়ে। এই সময়ে কন্যাশিশুদের মাধ্যমিক স্কুলে যাওয়ার হার কমে যাবে। নারীর প্রতি নিগৃহ-নিপীড়ন, বাল্যবিবাহ বেড়ে যাবে। ফলে এই দুইটি খাতে কিছু সমস্যা হবে। স্বাস্থ্যখাতের ক্ষেত্রেও পুষ্টিহীনতার সংখ্যা বেড়ে গেছে, মানুষের আয় কমে যাওয়ায় খাবারের পরিমাণ কমে গেছে। ফলে মানুষের শারীরিক গঠনের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা হবে। তিন সূচকের মধ্যে মানবসম্পদে পুষ্টিহীনতা প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, পরিবেশগত দিক থেকেও দুর্গম ও শুষ্ক এলাকা এবং উপকূলীয় অঞ্চলে কিছু সমস্যা হয়েছে। কিন্তু তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে কৃষি খাতে গত বছর ভালো ফলন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। তবে আরেকটি ক্ষেত্রে অস্থিরতার কারণ হতে পারত, সেটি হলো রফতানি। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর— শেষ দুই মাসে রফতানির ক্ষেত্রে কিছু উন্নতি দেখা গেলে আগের কয়েক মাসের অবস্থা ভালো ছিল না। বছর শেষে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তারপরও কোভিডকে বিবেচনা করলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবস্থানে থাকবে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ সঠিক অবস্থানেই রয়েছে। ফলে এলডিসি থেকে উত্তরণে কোনো সমস্যা হবে না।

সূচকে অগ্রগতি হলেও সেটি দিয়ে অবশ্য সারাদেশকে মূল্যায়নের পক্ষপাতী নন ড. দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, মাত্র তিনটি সূচক দিয়ে একটি দেশের সামাজিক অবস্থান মুল্যায়ন করা সঠিক না বলে সিপিডি মনে করছে। আয় বাড়লেই হবে না, আয়ের বৈষম্যটাও দেখতে হবে। দেশের দায়-দেনা, রাজস্ব আহরণ, রেমিট্যান্স— এগুলো সূচকে থাকতে হবে। ফলে তিনটি মৌলিক সূচকের বাইরে ৩০টি সম্পূরক সূচক দিয়েও দেশগুলোকে মূল্যায়ন করা দরকার।

তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ ছাড়া বাকি ১১টি দেশের মধ্যে বিশেষ করে ভুটান বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। নেপাল ও মিয়ানমার কিছুটা দুর্বল অবস্থানে রযেছে। তারপরেও ১২টি দেশের কোনোটিই এলডিসি থেকে বের হতে কোভিডের কারণে বাড়তি সময় নেওয়ার কথা বলেনি।

এর আগে, গত বছরের ১৬ মার্চ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের ওই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইর্য়কে কমিটি ফর ডেভেলপমেন্টের (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক সভা শেষে বাংলাদেশকে উন্নয়শীল দেশের মর্যাদার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২১ সালের মার্চে দ্বিতীয় ধাপ অতিক্রম করতে পারলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ অনুষ্ঠানিকভাবে এলডিসি থেকে বের হয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: , , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন