বিজ্ঞাপন

নেইমারের রেকর্ড গড়া হ্যাটট্রিকে পেরুর বিপক্ষে ব্রাজিলের জয়

October 14, 2020 | 8:04 am

স্পোর্টস ডেস্ক

পেরুর বিপক্ষে মাঠে নামার আগে নতুন এক রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছিল নেইমার জুনিয়রকে। এক গোল করতে পারলে ছুঁতে পারবেন কিংবদন্তি রোনালদো দ্য লিমাকে আর দুই করতে পারলে তাকে টপকে বনে যাবেন ব্রাজিলের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। পেরুর রাজধানী লিমাতে হ্যাটট্রিক করে ব্রাজিলকে জেতালেন ২-৪ গোলের ব্যবধানে আর সেই সঙ্গে ব্রাজিলের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতাও বনে গেলেন হালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার।

বিজ্ঞাপন

ব্রাজিলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল করে শীর্ষ স্থান দখল করে আছেন কিংবদন্তি পেলে। সেলেকাওদের জার্সিতে তার গোল সংখ্যা ৭৭টি। আর রোনালদো লিমার এতদিন ৬২ গোল করে ধরে ছিলেন দ্বিতীয় স্থান। পেরুর বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ৬১ গোল করে তৃতীয় স্থানে ছিলেন নেইমার। ম্যাচে প্রথমে এক গোল করে নেইমার স্পর্শ করেন এই কিংবদন্তীকে, দ্বিতীয় গোল করে টপকে যান রোনালদো লিমাকে আর হ্যাটট্রিক করে পেলের রেকর্ড ৭৭ গোলের আরও কাছে চলে যান এই সুপারস্টার।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বের সকল মহাদেশের বিশ্বকাপ বাছাই স্থগিত হলেও দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব শুরু হয়েছে। ক্লাব ফুটবলের বিরতিতে আন্তর্জাতিক ফুটবল মাঠে গড়িয়েছে গত সপ্তাহে। আর কনমেবল চালিয়ে যাচ্ছে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ বাছাই। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় ম্যাচে পেরুর মুখোমুখি ব্রাজিল। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা ব্রাজিলের সহজ জয়ই ধরে নিয়েছিল অনেকে। তবে ম্যাচের স্কোরলাইন যাইই বলুক না কেন ব্রাজিলের জন্য ম্যাচটি সহজ ছিল না।

বিজ্ঞাপন

ম্যাচের শুরুতেই ব্রাজিলের জালে বল জড়ান পেরুর ফরোয়ার্ড আন্দ্রে কারিল্লো। খেলা তখন চলছে মাত্র ৬ মিনিটের পেরুর ফরোয়ার্ড কারিল্লোর নেওয়া দুর্দান্ত ভলিতে পরাস্থ ব্রাজিল গোলরক্ষক ওয়েভারটন। এরপর সমতায় ফিরতে মরিয়া ব্রাজিল ১৪তম মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিল তবে পেরুর গোলরক্ষক পেড্রো গাল্লিজের অবিশ্বাস্য সেভে সে যাত্রায় রক্ষা পায় পেরু। তবে খুব বেশি সময় লিড ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। ম্যাচের ২৮ মিনিটে পেনাল্টি স্পট থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান নেইমার। আর সেই সঙ্গে স্পর্শ করেন রোনালদো লিমার ব্রাজিলের হয়ে করা ৬২ গোলের রেকর্ড। আর যৌথভাবে বনে যান সেলেকাওদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা।

ম্যাচের ২৬ মিনিটে নেইমারের উদ্দেশে উড়ে আসে একটি ক্রস, তবে বলটি ধরতে ব্যর্থ হন নেইমার। কেননা বল ধরতে গেলে তার জার্সি ধরে ডি বক্সের ভেতরেই ফেলে দেন পেরুর মিডফিল্ডার ইয়োশিমার ইয়োটান। আর সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারে। স্পট কিক থেকে ম্যাচের ২৮তম মিনিটে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান নেইমার।

এর মিনিট তিনেক পরে আরও গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়েছিলেন নেইমার। তবে ভিএআরের মাধ্যমে রেফারি দেখেন রিচার্লিসন আগে থেকেই অফসাইডে ছিলেন আর বাতিল করে দেন গোলটি। ম্যাচের ৪১ মিনিটে দলকে প্রথমবারের মতো এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন রবার্তো ফিরমিনো। বাঁ প্রান্ত থেকে রেনান লোদির দুর্দান্ত এক ক্রস আসে ফিরমিনোর উদ্দেশে, মাথা ছোঁয়াতে পারলেই বল জালে কিন্তু তিনি মাথা ছোঁয়াতে পারলেও বল রাখতে পারেননি গোলপোস্ট বরাবর। বল চলে যায় গোলপোস্টের বাইরে আর ম্যাচে এগিয়ে যাওয়ার সহজ সুযোগটাও হাতছাড়া হয়। এভাবেই ১-১ সমতায় শেষ হয় প্রথমার্ধ।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয়ার্ধের ৫৯ মিনিটে রেনাতো টাপিয়ার গোলে দ্বিতীয়বারের মতো ম্যাচে লিড নেয় পেরু। তবে খুব বেশি সময় লিড এবারেও ধরে রাখতে পারেনি তারা। গোল হজমের মাত্র মিনিট পাঁচেক পর ব্রাজিলকে সমতায় ফেরান রিচার্লিসন। কর্নার থেকে নেইমারের দেওয়া বলে মাথা ছোঁয়ান রবার্তো ফিরমিনো আর বল পাঠিয়ে দেন দ্বিতীয় পোস্টে দাঁড়িয়ে থাকা রিচার্লিসনের দিকে। আর সেখান থেকে বল জালে জড়াতে একদম ভুল করেননি এই ফরোয়ার্ড। বল জালে জড়িয়ে রিচার্লিসন নাম লেখান স্কোরশিটে আর সেই সঙ্গে দলকেও ফেরান সমতায়।

খেলা শেষ ১০ মিনিটে গড়িয়েছে আর তখনই ড্র’র জুজু তাড়া করছে ব্রাজিলকে। তবে তখনও যে নেইমার শো বাকি রয়েছে, বাকি রয়েছে রেকর্ড গড়ার। ম্যাচের ৮১ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর ব্রাজিল ফরোয়ার্ড এভারটন রিবেইরোকে ফাউল করলে ম্যাচের দ্বিতীয় পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। আর প্রায় দুই মিনিট ধরে ভিএআর’র সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি নিশ্চিত করেন রেফারই। স্পট কিক থেকে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন নেইমার আর দলকে এগিয়ে নেন দ্বিতীয়বারের মতো। এই গোলে নেইমার রোনালদো লিমার ৬২ গোল টপকে ৬৩ স্পর্শ করেন।

এদিকে নেইমারের গোলের পর বেঞ্চে থাকা পেরুর গোলরক্ষক কার্লোস চাকেদাকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। তবে ঠিক কি কারণে তাকে লাল কার্ড দেখানো হয় তা খোলাসা হয়নি ম্যাচের মধ্যকার সময়ে। এর মিনিট তিনেক পর রিচার্লিসনের মুখে হাত দিয়ে আঘাত করায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় পেরুর ডিফেন্ডার কার্লোস জাম্ব্রানোকে।

বিজ্ঞাপন

খেলার নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে চলছিল অতিরিক্ত সময়। ঘড়ির কাঁটা টিকটক করতে করতে ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তখনও নেইমারের হ্যাটট্রিকটা বাকি। গোটা ম্যাচ জুড়ে দুর্দান্ত খেলা নেইমারের তখনও রেকর্ড গড়া বাকি। ম্যাচের ৯৪ মিনিটে এভারটন রিবেইরোর চিপ শট পেরু গোলরক্ষক গাল্লিজের মাথার ওপর দিয়ে গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসে। আর ফিরে আসা বল পেয়ে যান নেইমার, ডি বক্সের ভেতর থেকে নেইমার সহজেই বল পাঠিয়ে দেন জালে। আর পূর্ণ হয় তার হ্যাটট্রিক। সেই সঙ্গে ব্রাজিলের নিশ্চিত হয় পেরুর বিপক্ষে ২-৪ গোলের জয়। এটি ব্রাজিলের হয়ে নেইমারের ৬৪তম গোল ছিল।

দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে এখন পর্যন্ত দুই ম্যাচে দুই জয় নিয়ে শীর্ষে আসছে ব্রাজিল। অন্যদিকে দুই ম্যাচে দুই জয় পেলেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় দুইয়ে আছে আর্জেন্টিনা। তিনে অবস্থান করেছে কলম্বিয়া, প্যারাগুয়ে, ইকুয়েডর, উরুগুয়ে এবং চিলি আছে যথাক্রমে তিন, চার, পাঁচ, ছয় এবং সাতে।

সারাবাংলা/এসএস

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন