বিজ্ঞাপন

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে হত্যার হুমকি চেয়ারম্যানের, ভয়ে ঘরছাড়া পরিবার

October 14, 2020 | 6:53 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে এক গৃহবধূ ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ওই চেয়ারম্যানের নাম আবুল কালাম। তিনি রাজবাড়ি জেলার কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে মারধর, আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুরসহ চেয়ারম্যান আবুল কালামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ।

লিখিত বক্তব্যে ওই গৃহবধূ বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালামের সঙ্গে তার স্বামী রাজনীতি করেন। এই সুবাধে চেয়ারম্যান তাদের বাড়ি যাতায়াত করতেন। এক সময় চেয়ারম্যানের কু-নজর পড়ে আমার ওপর। তিনি বিভিন্ন সময়ে গোপনে আমাকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে কু-প্রস্তাব দিতে থাকেন। আমি তাতে রাজি না হয়ে বিষয়টি আমার স্বামীকে জানাই। এই কথা শুনে আমার স্বামী চেয়ারম্যানের কাছে জিজ্ঞাস করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান আমার স্বামীকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘যে কোনো উপায়ে হোক তোর বউয়ের সর্বনাশ করব।’

গত ১৬ মে রাতে আমার স্বামী ও শ্বশুর মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে আমার বাড়িতে আসে। আমি ঘরের বাইরে বের হলেই আমার মুখ, হাত-পা বেধে আমাকে পাশবিক নির্যাতনের চেষ্টা করে। এ সময় তার সঙ্গে কয়েকজন আমার হাত ও পা চেপে ধরে। চেয়ারম্যান পাশবিক নির্যাতনের চেষ্টা অব্যাহত রাখলে আমি ধস্তাধস্তি করলে মুখ বাধা গামছা খুলে যায় এবং চিৎকার শুরু করি। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এল চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে পালিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

ওই ঘটনার পর আমি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। এরপর থেকে চেয়ারম্যান আমাকে ও আমার পরিবারকে নানাভাবে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। তার ভয়ে আজ আমার পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এমনকি মাঝেমধ্যেই আমরা বাড়িতে থাকতে পারি না। চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে প্রায় সময়ই আমাদের শঙ্কিত অবস্থায় বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনসহ বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়।

এই অবস্থায় ন্যায় বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ওই নির্যাতিত ওই গৃহবধূ।

বিজ্ঞাপন

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আবুল কালাম

রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্যাতনের শিকার একাধিক ব্যক্তি সারাবাংলাকে বলেন, মদাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালামের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ রয়েছে।

এর মধ্যে গত কালুখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সাইফুল ইসলামের পক্ষে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মী বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এমনকি ওই চেয়ারম্যান নির্বাচন কমিশনের বিধি-নিষেধ সত্ত্বেও কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করতে বলেন সাইফুলকে। সাইফুল সেটি না করলে চেয়ারম্যানের কিছু সমর্থক মদাপুর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর করেন এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ করেন। পরিস্থিতি দলের আওতার বাইরে চলে যায়। দলীয় অফিস ভাঙচুর এবং নেত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের জের ধরে আওয়ামী লীগের একটা বড় অংশ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। উনিও নির্বাচনী বিধি নিষেধের বাইরে সশস্ত্র অবস্থান নেন (ওপরে ছবি)। এর ফলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা বলেন, সাইফুল ইসলাম বারবার দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে বলেন। কিন্তু আমরা নির্বাচনকে ঘিরে নিজেদের মধ্যে রক্তপাত হোক, সেটা চাইনি। সে কারনে আমরা উনার ভাষায় উনার পক্ষে শক্ত অবস্থান নিতে না পারার দোষে আসামির কাঠগড়ায়।

বিজ্ঞাপন

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন নাহার জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের অসহযোগিতার কারণে তিনি সাচিবিক দায়িত্ব পালন ও স্বাভাবিক কার্ক্রম চালাতে পারছেন না। সাইফুলের সাথে মদাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালামও যোগ দিয়ে নানাভাবে কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছেন-বলে অভিযোগ করেন ইউএনও।’

ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম মাঝে মধ্যেই ক্যাডার বাহিনী নিয়ে মহড়া দেন। তার কথার এদিক সেদিক হলেই ক্যাডার বাহিনী দিয়ে মারধর ও নির্যাতিন করেন। ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হয় না। বরং দিনের পর দিন আবুল কালাম ক্ষমতা দেখিয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। সাধারণ মানুষের আশা, সুষ্ঠু তদন্ত শেষে প্রশাসন আবুল কালামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

এ সব বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালামকে ফোন করা হলে সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ সব মিথ্যা অভিযোগ। আমাকে ফাঁসাতেই এসব ষড়যন্ত্র করছে বর্তমান সংসদ সদস্য।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন