বিজ্ঞাপন

গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন: বিদেশ সফর বাতিল হলেও বাড়ছে ব্যয় ও সময়

October 19, 2020 | 10:35 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশ সফরের প্রস্তাব বাতিল করেছে পরিকল্পনা কমিশন। মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রে মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২ কোটি টাকা। সেখান থেকে ৭০ লাখ টাকা বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, ইতো মধ্যেই বিদেশ সফরের জন্য ব্যয় হওয়া ৯৫ লাখ টাকাই বরাদ্দ ধরতে হবে। বাড়তি কোনো বরাদ্দ দেওয়া হবে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে এ খাতে নতুন কোনো বরাদ্দ ধরা হয়নি। এদিকে প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবে সার্বিকভাবে প্রকল্পটি বড় অংকের ব্যয় বাড়ছে। এমনকি বাড়ছে প্রকল্পটির মেয়াদও।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি মূল ব্যয় ছিল এক হাজার ৫৬০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এখন ৫৪৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে দুই হাজার ১০৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ। শুধু ব্যয়ই নয়, বাড়ছে মেয়াদও। ২০২২ সালের জুনে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এক বছর বাড়িয়ে করা হচ্ছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।

প্রকল্প পরিচালক এসএম আকবর হোসেন সারাবাংলাকে জানান, ২০১৮ সালে এক ব্যাচে ১০ জন বিদেশ সফরে যায়। সেসময় মালেয়শিয়া ও ভিয়েতনামে তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। অবকাঠামো খাতে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে তারা জ্ঞান লাভ করেছে। এছাড়া ২০১৯ সালে আরও ১০ জন কর্মকর্তা বিদেশ সফরে যান। তারা দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন সফর করেছিল। এসময় তারা স্থানীয় অবকাঠামো খাতে জলবায়ুর প্রভাব সংক্রান্ত বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। এসব সফরে পরিকল্পনা কমিশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলীরা অংশ নেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশন যেহেতু মনে করেছে, বৈদেশিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই, তাই আমরাও রাখিনি।’

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলায় ৫৫ দশমিক ১৪ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ১৭৪ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক এবং ১ হাজার ২৪৯ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক টেকসইভাবে উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষি-অকৃষি অর্থনীতির সঞ্চালন হবে। গ্রামীণ জনগণের জন্য গ্রাম, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের যাতায়াত সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে জীবযাত্রার মান উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্প আওতাভুক্ত এলাকার জনসাধারণের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ১৬টি গ্রোথ সেন্টার গ্রামীণ হাট-বাজার ও সাতটি বোট ল্যান্ডিং র‌্যাম্প নির্মাণের মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য বিপণন এবং নৌপথে পরিবহন সহজ হবে।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি প্রথম সংশোধনীর ওপর প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ৭ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, প্রকল্প এলাকার কিছু জনগুরুত্বপূর্ণ স্কিম, যা মূল ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি তা বর্তমানে সংশোধিত ডিপিপিতে ধরা হয়েছে। তাছাড়া কিছু সড়ক এলজিইডির অন্যান্য প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তাই সেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। কিছু সড়কে ছোট কালভার্ট ইউড্রেন প্রয়োজন, যা ডিপিপি প্রস্তুতের সময় অন্তর্ভুক্ত হয়নি যা সংশোধিত ডিপিপি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে গ্রামীণ সড়কগুলো উন্নয়ন একটি প্রধান অঙ্গ। অনুমোদিত ডিপিপিতে কিছু সড়ক সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য এবং কিছু সড়ক আংশিক দৈর্ঘ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই আংশিক সড়কগুলো পূর্ণদৈর্ঘ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের অক্টোবরে শুরু হয়েছিল। তারপর এলজিইডির রেট সিডিউল ২ বার আপডেট করা হয়েছে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। এ কারণে ডিপিপি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। রেট সিডিউল পরিবর্তনের জন্য প্রতি কিলোমিটার কাজের ব্যয়ের প্রাক্কলন সমন্বয় করা হয়েছে, যা সংশোধিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের কিছু প্রকল্প প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত যেখানে নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনে সমস্যা হওয়ায় বাস্তবায়নে সময় বেশি প্রয়োজন।

সূত্র জানায়, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ১ হাজার ৫৬০ কোটি ১৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর একনেকে মূল প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্পভুক্ত কিছু স্কিমের দৈর্ঘ্যরে হ্রাস-বৃদ্ধি, প্রকল্প এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাহিদা অনুযায়ী রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, হাট-বাজার ও বোর্ট-ল্যান্ডিং উন্নয়নের জন্য ডিপিপিভুক্ত নয় এমন কিছু স্কিম ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা, হালনাগাদ রেট সিডিউলের কারণে প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজের বাড়ানো এবং প্রকল্প মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ করার জন্য প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধিত প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।’

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন