বিজ্ঞাপন

‘কলস আমার পূর্ণ করো’

October 23, 2020 | 3:14 am

ফারহানা হেসেন শাম্মু

শাওন আর চঞ্চল কী যে এক গান গাইলেন। তাদের গায়কী, তাদের চাহনি, তাদের হাসি— কয়েক মিনিটের গান যেন অশেষ এক মিষ্টি সিনেমা। মাত্র দুই দিন আগে ২০ অক্টোবর ইউটিউবে মুক্তি পাওয়া গানটি আমরা রাতদিন শুনছি আর শুনছি। একবার শুনলে মনে হয়, আরেক বার যেন শুনি। একে একে সবার ফেসবুক টাইমলাইন ভরে যাচ্ছে সুন্দর একটা বাংলা গানে। চরম মুগ্ধতায় ‘সংগৃহীত’ শব্দটা তেমন চোখেও পড়েনি।

বিজ্ঞাপন

কোথায় পাবো হার কলসি, কোথায় পাবো দড়ি
তুমি হও যমুনা রাঁধে, আমি ডুইবা মরি।

চঞ্চলের সেই দুষ্টু হাসিতে ডুবে মরতে মরতে ইন্টারনেটে সার্চ দিচ্ছিলাম ‘হার কলসি’র ‘হার’ শব্দটির বানান জানতে। তারপরই বাধলো বিপত্তি।

ফেসবুকের কমেন্ট সেকশনটি অনেকটা কয়লাখনির মতো। পুরোটুকু কয়লায় পুরু থাকলেও তাতে একটু হলেও তথ্যের হীরক চমক থাকেই। দেখলাম সরলপুর ব্যান্ডের গান এটি। হতেই পারে। কিন্তু এই মিষ্টি গানে পিঁপড়ে ধরে আইন আদালত পাইরেসি অ্যাক্টে ঠকঠক করছে জেলের শিক, সর্বত মঙ্গল রাঁধে নিয়ে চুরির কেলেঙ্কারি— মরলাম, মরলাম — এতো পুরােই হার কলসি বেঁধে ডুবে মরার মতোই তথ্য।

বিজ্ঞাপন

‘ডার্ক লাইফ ম্যাটার’ বিবেচনায় গানের কথার জন্য গীতিকারের বিরুদ্ধে মামলা হলেও বুঝতাম। কৃষ্ণকে কেমন হাসিতে বধ করে রাঁধা বললো—কালো মানিক হাত পেতেছে চাঁদ ধরিতে চায়‘!! তাই বলে ১০৩ ধারা?

শেরপুরের একটি ব্যান্ড সরলপুর। ২০০৮ সালে বকশিগঞ্জের কোনো এক সাধুর কাছ থেকে নাকি তারা এই গানের ৩০ ভাগ লিরিক সংগ্রহ করেছিলেন। তাদের দাবি— বাকিটা তাদের রচনা। ২০১৮ সালে গানের পূর্ণস্বত্ত্ব সংগ্রহ করেন ব্যান্ডের প্রধান তরিকুল ইসলাম তপন। সেই ২০১২ সাল থেকে ‘অপ্রকাশিত গান’ হিসেবে তারা লালন করছেন এই গান। বিদেশে শুনিয়েছেন। ২০১৮ সালে সুমি মির্জা গেয়ে খ্যাতি পাওয়ার পর মামলা করেছেন, তার আগে যাযাবরও গেয়েছেন সম্ভবত বিনা বাধায়। কিছুই জানতাম না। কিন্তু এখন তো কানে কানে মনে মনে কোটি দর্শকের কাছে পৌঁছে দিয়ে শাওন চঞ্চলকেই শুনতে হচ্ছে,

কালো মানিক হাত পেতেছে, চাঁদ ধরিতে চায়
বামুন কি আর হাত বাড়ালে চাঁদের দেখা পায়?

বিজ্ঞাপন

ইউটিউবকে শাওন চঞ্চলের গানটা নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। সরলপুরের গাওয়া গানটা শুনলাম। সেই বাউল আর বেঁচে নেই। বাংলার বাউলদের স্বত্ব কেনার সাধ-সাধ্য কোনটাই নেই। ৩০ ভাগ কিংবা ৭০ ভাগের ন্যায্য দাবি কার এ কথা কোনদিন জানা যাবে না। তবে উনি বেঁচে থাকলে হাতাহাতির বদলে গোঁড়াতেই হাত মিলিয়ে হয়ত গানটাকে নিষ্কণ্টক করা যেতো।

হুমায়ুন আহমেদের শবদেহটার কথা মনে হলো। নুহাশপল্লীর ভেতরে না বাইরে কোথায় থাকবে তার দেহ? ঠিক তেমনি যেন আরেকটা অসামান্য সৃষ্টির মালিকানা নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে। এইবারও যে সাধুর হাতে সবটুকু সমাধান, তিনিই নেই।

কীর্তন গানের সুরে সুরে কানাই বলেছিলো, মরবে না মরবে না রাঁধে, মন্ত্র ভাল জানি/দুই এক খানা ঝাড়া দিয়া বিষ করিবো পানি।

আশা করি এই বিষ সহসাই জল হবে কোনো এক সমঝোতার মধ্য দিয়ে। এই গানের অমরত্ব চঞ্চল-শাওন-আইপিডিসি আমাদের গান আর পার্থ বড়ুয়ার হাতে। এইটুকু ন্যায্য কিংবা অন্যায্য কিন্তু সত্য।

বিজ্ঞাপন

কলস আমাদের পূর্ণ হোক।

সারাবাংলা/আইই

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন