বিজ্ঞাপন

খোয়াই নদী উন্নয়ন প্রকল্পে ১৫ প্রস্তাব বাদ, বাঁচবে ১৬৫ কোটি টাকা

November 2, 2020 | 11:29 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেপনডেন্ট

ঢাকা: বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে তীরবর্তী এলাকাকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা, ড্রেজিং ও পুনঃখনননের মাধ্যমে নাব্য তথা পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন— খোয়াই নদীকে ঘিরে এমন বহুমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ কারণে ‘খোয়াই রিভার সিস্টেম উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় এই প্রকল্প থেকে ১৫টি খাতের ব্যয় প্রস্তাব বাদ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এতে করে প্রকল্পের খরচ প্রস্তাবিত ব্যয়ের তুলনায় ১৬৫ কোটি টাকা কম হবে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি ‘হবিগঞ্জ জেলার  খোয়াই রিভার সিস্টেম উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি ওই সভার কার্যবিবরণী প্রকাশ পেয়েছে। কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, পিইসি সভায় এই ১৫ খাতের ব্যয় বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। ‘অপ্রয়োজনীয়’ এই খাতগুলো হলো— বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, নদী খনন ও সংরক্ষণ, ব্রিজ, পাম্প হাউজ, স্লোপ প্রতিরক্ষা কাজ, ড্রেন, ওয়ার্কওয়ে, ফেন্সিং, দুটি স্পিড বোট, সার্ভে গাড়ি, প্রজেক্টর, যন্ত্রপাতি, আইন বাবদ ব্যয়, সেমিনার ও কনফারেন্স, ম্যথমেথিক্যাল মডেল স্টাডি।

সূত্র জানায়, এক হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হবিগঞ্জ জেলার খোয়াই রিভার সিস্টেম উন্নয়ন’ প্রকল্পটি প্রস্তাব করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে খোয়াই নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ বা পুনর্বাসনের মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলা শহরসহ প্রায় ৪৭ হাজার ৭৫০ হেক্টর এলাকা বন্যা থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

এছাড়া ড্রেজিং ও পুনঃখননের মাধ্যমে খোয়াই নদীর পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসন এবং প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন অবকাঠামো ও সম্পদ রক্ষা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ৯ মার্চ পরিকল্পনা কমিশনে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৮ সেপ্টম্বর জারি করা ওই পিইসি সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য সাড়ে ৪ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে সর্বসম্মতভাবে এই ব্যয় বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ২ দশমিক ৩১ কিলোমিটার পুরাতন খোয়াই নদী খনন ও সংরক্ষণ বাবদ ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকার প্রস্তাব বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে পঁচটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য ২৪ কোটি টাকা, একটি পাম্প হাউজ নির্মাণে ১৮ কোটি টাকা, সাড়ে চার কিলোমিটার স্লোপ প্রতিরক্ষা কাজের জন্য ১৫ কোটি টাকার প্রস্তাব বাদ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পে চার দশমিক ৬৩ কিলোমিটার ড্রেন, ওয়াক ওয়ে ও ফেন্সিং নির্মাণে সাড়ে ২৭ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়। সেগুলোও বাদ দেওয়া হয়েছে। ৫০টি কমিউনিটি গ্রোথ সেন্টার ও রিক্রিয়েশন এরিয়া নির্মাণে ৩৯ কোটি টাকার প্রস্তাব বাদ দেওয়া হয়েছে। আরও যেসব প্রস্তাব বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো হলো— দু’টি স্পিড বোট কেনা বাবদ ৪০ লাখ টাকা, একটি সার্ভে ভেসেল বাবদ ২৮ কোটি টাকা, তিন সেট প্রজেক্টর ও আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ তিন লাখ টাকা। এছাড়া আইন বাবদ ২৪ লাখ টাকা, সেমিনার ও কনফারেন্স বাবদ পাঁচ লাখ টাকা। ম্যাথমেটিক্যাল মডেল স্টাডি বাবদ ৪ কোটি টাকা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশ সফরসহ অপ্রয়োজনীয় ব্যয় প্রস্তাব প্রসঙ্গে এর আগে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ সারাবাংলাকে বলেছিলেন, কিছু ক্ষেত্রে বিদেশ গিয়ে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় না, সেসব ক্ষেত্রে আমরা বাদ দিয়ে দেই। তাছাড়া একান্ত অপরিহার্য না হলে অনেক ব্যয় প্রস্তাবই অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিসহ নানা কারণে প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণে অনেক কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদীগুলোর অন্যতম হচ্ছে খোয়াই নদী। এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আথারামুড়া পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই শহরের পাশ দিয়ে হবিগঞ্জে প্রবেশ করেছে। হবিগঞ্জ জেলা শহরকে বন্যামুক্ত করতে করতে ১৯৭০-৭১ সাল থেকে ১৯৯২-৯৩ মেয়াদে খোয়াই নদী সিস্টেম প্রকল্পের আওতায় নদীর দুই তীরে প্রায় ৮০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বা ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ৫৫ কিলোমিটার অংশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং অবশিষ্ট অংশে ডুবন্ত বাঁধ তৈরি করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন খোয়াই নদী খনন না করায় এর পানি ধারণক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। ফলে খোয়াই নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই নদীর পানি সমতলের বিপৎসীমা অতিক্রম করে। নদীর দুই তীরে নির্মাণ করা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলা শহর বিপৎসীমার প্রায় ১ থেকে ২ মিটার নিচে অবস্থিত। বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে নিয়মিত মেরামতের অভাবে বর্তমানে অধিকাংশ এলাকাই বাঁধ নকশা অনুযায়ী উচ্চতায় নেই। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৯ সালে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন