বিজ্ঞাপন

করোনায় মৃত্যুঝুঁকিতে নবজাতকরা— বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গবেষণা

November 3, 2020 | 9:41 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির শুরু থেকেই বয়স্কদের এই ভাইরাসের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। নবজাতক ও শিশুদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের আশঙ্কা এবং তাদের ক্ষেত্রে কোভিডের প্রাণঘাতী হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম বলেই ধারণা করছিলেন তারা। তবে সম্প্রতি নবজাতকদের ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের কবল থেকে নিরাপদ নয় নবজাতকরাও। উপসর্গহীন থাকলেও নবজাতকরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হচ্ছে, এমনকি মৃত্যুবরণও করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে নবজাতকদের রক্ষা করার জন্য নিরাপদ জন্মস্থান ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের শেষ দিন চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর ২ ফেব্রুয়ারি চীনে নবজাতকদের মধ্যে প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। পরে আনুমানিক আরও ৭০টি নবজাতকের মধ্যে মাঝারি থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় চার কোটি ৩০ লাখ সংক্রমণ এবং প্রায় ৭৭ হাজার মৃত্যু ঘটলেও এই অঞ্চলে মাত্র দু’জন নবজাতকের সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়।

তবে সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশেই ৮৩টি নবজাতকের নমুনা পরীক্ষা করে ২৬ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে। সংক্রমিত নবজাতকদের ওপর কোভিড-১৯-এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব বিশ্লেষণের জন্য ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সে করা হয়েছে। একইসঙ্গে নবজাতকদের মায়েদের কোভিড-১৯ নমুনাও পরীক্ষা করে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

যৌথভাবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) ও রাজধানীর শিশু হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. সমীর কুমার সাহা, অধ্যাপক ডা. মো. শহিদুল্লাহ, অণুজীব বিজ্ঞানী ডা. সেঁজুতি সাহা, শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিজওয়ানুল আহসান, ভাইরোলজিস্ট ডা. কিঙ্কর ঘোষ, ডা. এ এস এম নওশাদ উদ্দিন, প্রবীর কুমার সরকার, ডা. শেখ ওয়াসেকসহ আরও বেশ কয়েকজন গবেষক যুক্ত ছিলেন এই গবেষণায়।

বিজ্ঞাপন

গবেষণার অধীনে রাজধানীর শিশু হাসপাতালে ২৯ মার্চ থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত যে নবজাতকরা চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ভর্তি হয়েছিল, কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের জন্য তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ৮৩টি নবজাতকের নমুনা পরীক্ষা করে ২৬টির শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। এদের সর্বোচ্চ বয়স ছিল আট দিন। এসব নবজাতককে কোভিড-১৯ সংক্রমণের আশঙ্কায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। এদের মধ্যে ১১ জনকে নানারকম মারাত্মক অসংক্রামক রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাত জনকে সেপসিসের শুরুর দিকে ভর্তি করা হয়, পাঁচ জনকে সেপসিসের শেষ ভাগে ভর্তি করা হয়। এছাড়াও দু’জনকে ভর্তি করা হয় নিউমোনিয়া থাকার কারণে। করোনা সংক্রমিত ২৩টি নবজাতকের মধ্যে ১২টি শারীরিকভাবে সুস্থ ছিল, আট জন মারা যায়, তিন জন এখনো চিকিৎসাধীন। যে আটটি নবজাতক মৃত্যুবরণ করে, তাদের মধ্যে দু’টির মৃত্যু হয় কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমিত হওয়ার কারণে। বাকি ছয়টি নবজাতকের নানা ধরনের কো-মরবিডিটি ছিল।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে পরবর্তী সময়ে তাদের চিকিৎসা বিষয় তথ্য-উপাত্ত এবং এক্সরে ও অন্যান্য ল্যাবরেটরি রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করা হয়। পরে জিনোম সিকোয়েন্সও করা হয়। এ ক্ষেত্রে রোগীদের ২৭ থেকে ৭৫ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ সময় নবজাতকদের অভিভাবক ও তাদের ৯ জন পরিচর্যাকারীর নমুনা পরীক্ষা করে আট জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে।

৮৩টি নবজাতকের ৩১ শতাংশ, অর্থাৎ ২৬ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়। করোনা পজিটিভ নবজাতকদের মধ্যে ১২ জনের বয়স আট দিন (৪৭%) ও ১৪ জনের বয়স ছিল পাঁচ দিন। এই নবজাতকদের হাসপাতালে ভর্তি সময়ে গড় ওজন ছিল ২ দশমিক ৯ কেজি। ২৮ জুলাই পর্যন্ত কেস ফলোআপ করা হয়। চারটি নবজাতক হাসপাতালে মারা যায়, বাকিদের জীবিত অবস্থায় ডেডিকেটেড হাসপাতালে রেফার করা হয়। এই ২২টি শিশুর মধ্যে ১২টি সুস্থ ছিল। তিনটি শিশুকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়, চার জন মারা যায়। ২০ জন মায়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে জানা যায়, তাদের মাঝে ছয় জনের কোভিড-১৯ উপসর্গ ছিল শিশু জন্মদানের আগে।

বিজ্ঞাপন

যা বলছেন গবেষক-বিশেষজ্ঞরা

শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিজওয়ানুল আহসান সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের দেশে বা বিশ্ব পরিস্থিতিও যদি বিবেচনা করা হয়, তবে শুরুর দিকে নবজাতকদের মধ্যে সংক্রমণের বিষয়টি তেমনভাবে সামনে আসেনি। অর্থাৎ নবজাতকরা যে মায়েদের কাছ থেকেই সংক্রমিত হচ্ছে, এরকম কোনো তথ্য-উপাত্ত ছিল না। পরে আমরা শিশু হাসপাতালে নবজাতক বাচ্চা যারা আসছিল, তাদের নমুনা সংগ্রহ করি। ২৯ মার্চের পর থেকে আমরা এই কাজ শুরু করি। সেখানে আমরা নবজাতকদের মাঝে সংক্রমণ দেখতে পাই। তবে তারা পরবর্তী সময়ে নেগেটিভ হয়।

তিনি বলেন, এমনিতেই নবজাতক বাচ্চারা খুবই ঝুঁকির মুখে থাকে। তাই তাদের সবার জন্য স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

শিশু হাসপাতালের এপিডেমিওলজিস্ট ডা. কিঙ্কর ঘোষ সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের জন্য বড় একটি কাজ ছিল। আমরা শিশু হাসপাতালে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির শুরুর দিক থেকেই চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছিলাম। গবেষণাতে আসলে আমরা দেখেছি নবজাতকদের জন্য কোভিড-১৯ কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। কেবল নবজাতকরাই নয়, শিশুরা আসলে এই কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকছে সবসময়েই, যা এখন আর অস্বীকার করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ ঝুঁকি এড়ানোর জন্য করণীয় একটাই— যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের পারিপার্শ্বিকতায় দেখা যায় নবজাতকের জন্মের পরে অনেকেই তাদের কোলে নিতে আসেন। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষা করা হয়। এতে করে নবজাতকদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কারণ আমরা কিন্তু এখন প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝেও অনেক কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাচ্ছি, যাদের আসলে উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যারা নবজাতকের সংস্পর্শে আসবেন, তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বাচ্চার মাকেও সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। একইসঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কেউ যদি বাইরে থেকে আসে, তবে সঙ্গে সঙ্গেই বাচ্চাকে কোলে নেওয়া যাবে না। একান্তই যদি প্রয়োজন হয়, তবে অন্তত স্বাস্থ্যবিধি মেনে হ্যান্ড স্যানিটাইজ করে, মুখে মাস্ক পরে তারপরই কেবল বাচ্চার সংস্পর্শে যেতে পারে। যত কম মানুষের সংস্পর্শে থাকা যায়, নবজাতকদের জন্য ততই ভালো।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সেন্ট্রাল ফর মেডিক্যাল বায়ো-টেকনোলজি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মারুফুর রহমান অপু সারাবাংলাকে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে আমাদের মূল উদ্বেগ বয়স্কদের নিয়েই। কেননা বয়স্ক ও অন্যান্য ঝুকিপূর্ণ রোগাক্রান্তরাই বেশি মারা যাচ্ছেন। শিশুদের ওপরে এই ভাইরাসটি বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে, সেটি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। গবেষকদের ধন্যবাদ, তারা এই বিষয়টি সামনে এনেছেন। এই গবেষণা থেকে আমরা দু’টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছি— শিশুরাও যথেষ্ট পরিমাণে আক্রান্ত হচ্ছে, যাদের অনেকেই সরাসরি করোনাভাইরাসের কারণে মারা যাচ্ছে। এছাড়া শিশুদের অনেকেরই ঝুকিপূর্ণ অন্যান্য রোগ রয়েছে, যেগুলো করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর মৃত্যুঝুঁকি বাড়াচ্ছে। সুতরাং শিশুদের দিকে আমাদের আলাদাভাবে নজর দিতে হবে এবং তাদের সুরক্ষায় বিশেষভাবে মনোযোগী হতে হবে।

জানতে চাইলে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) নির্বাহী পরিচালক ড. সমীর কুমার সাহা সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশে নবজাতকদের মাঝে কোভিড-১১ সংক্রমণের এমন চিত্র পাওয়া যাবে, এমনটি আমারা চিন্তা করিনি। ধারণা করা হচ্ছিল, শিশু, বিশেষ করে নবজাতকদের (১ থেকে ২৮ দিন বয়স) মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের সম্ভাবনা কম। কিন্তু বর্তমানে আমরা কিন্তু বাচ্চাদের মধ্যেও প্রচুর পরিমাণে জটিলতা পাচ্ছি। তবে এটা নবজাতকদের মধ্যে অনেক কম হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্য একটি বিষয় উল্লেখ করার মতো— যেসব নবজাতককে নিয়ে এই গবেষণাটি করা হয়েছে, তারা শিশু হাসপাতালে এসেছিল কিন্তু ভিন্ন কারণে।

তিনি বলেন, এই গবেষণার আওতায় যেসব নবজাতক ছিল, তাদের মধ্যে মাত্র দুই জনের শরীরে করোনার উপসর্গ ছিল। নবজাতকদের ক্ষেত্রে আমরা যদি খেয়াল করি, তাদের বয়স কিন্তু ছিল অল্প মাত্র কয়েকদিন। পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত এমন কিছু পাওয়া যায়নি যে ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন হয়েছে। ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন হচ্ছে এমন একটি বিষয়, যেখানে গর্ভবতী মায়ের কাছ থেকে সন্তানের প্রসবের মুহূর্তে বাচ্চার মাঝে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকা। এমন কোনো কিছু কিন্তু আমরা এখনো পাইনি। আমাদের দেশের বাইরেও এখন পর্যন্ত তেমন কেউ এই ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশন পায়নি। শিশু হাসপাতালে কিন্তু কোনো বাচ্চার ডেলিভারি হয়নি। তাই এ ক্ষেত্রে আমরা এই ভার্টিক্যাল ট্রান্সমিশনটি বোঝার বিষয়টি খুবই কম হয়ে ওঠে।

তিনি বলেন, আমরা যখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাবধান থাকি, তখন আমরা মাস্ক পরি। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এমন অনেক স্থান আছে যেখানে সন্তান ডেলিভারির স্থান তেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে না। অনেক স্থানে দেখা যায় একের পর এক ডেলিভারি একই স্থানে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বাসায় ডেলিভারি হয়ে থাকে, যেখানে ধাত্রীরা প্রসব করিয়ে থাকেন। সেসব স্থানেও অধিকাংশ সময়ে আসলে অনেক ক্ষেত্রেই সচেতনতার অভাবে কোভিড-১৯ বিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয় না। এ কারণেও দেখা যাচ্ছে, বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রমণটা আসছে। যেটা তাদের নাকের মধ্যে থেকে যাচ্ছে। কিন্তু অন্য কোনো কিছু করছে না। এটা একটা বিষয়।

তিনি আরও বলেন, আরেকটি বিষয় হলো আমরা দুইটি বাচ্চাকে পেয়েছি যেখানে আমরা পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি যে ভাইরাস তাদের ফুসফুসে গিয়ে সংক্রমণ করেছে। এটা আমাদের সিরিজ আকারে কাজ হয়েছে, যা আগেও পাবলিশ হয়েছে। চীনে এ বিষয়ে গবেষণা হয়েছে ফেব্রুয়ারি থেকে। আমাদের এখানে কাজ কিছুটা দেরিতে শুরু হলেও আমরা এপ্রিল-মে থেকেই কাজ করেছি।

ড. সমীর সাহা বলেন, আমরা কিন্তু এদের ক্ষেত্রে সিকোয়েন্সিংও করেছি। এ সময় আমরা দেখেছি যে হাসপাতালে আসার পরে তাদের একজন থেকে যে আরেকজনের মাঝে সংক্রমণ হয়েছে, তেমন কোনো বিষয় নেই। এক্ষেত্রে আমরা সব আলাদা সিকোয়েন্সিং পেয়েছি। এটা নিয়ে আরও বিস্তারিত কাজ করব আমরা। আমরা নবজাতকদের মায়েদের কাছ থেকে ও নবজাতকদের যারা দেখাশোনা করেছে, তাদের নমুনা সংগ্রহ করেছি। সেক্ষেত্রে আমরা তাদের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পেয়েছি, কিন্তু তারা উপসর্গহীন ছিল। এক্ষেত্রে আমরা ধারণা করছি— মা যখন নবজাতককে নিয়ে আসছেন বা শিশুকে ক্যারি করছেন, তাদের কাছ থেকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বাচ্চার মধ্যে।

তিনি বলেন, বর্তমানে আসলে আমাদের আলাদাভাবে নবজাতকদের জন্য কোভিড-১৯ ইউনিট থাকা দরকার যেটা আমরা করতে পেরেছি। এটি আমাদের একটা বিশাল অর্জন। কারণ সংক্রমণের আশঙ্কা করলেই আমরা বাচ্চাকে আলাদাভাবে আইসোলেশন করতে পারছি।

ড. সমীর আরও বলেন, নবজাতকরা এমনিতেই অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে থাকে সবসময়েই। কারণ অনেক সময় তাদের মাঝে উপসর্গ দেখা না গেলেও দেখা যায় তাদের সেলগুলো ভালোভাবে গ্রো করে না। এক্ষেত্রে ভাইরাসটা কী করছে, সেটা বিস্তারিতভাবে হয়তো আমরা ভবিষ্যতে জানার সুযোগ পাব। সুতরাং আমাদের সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। নবজাতকদের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যদি সবাই মিলে সচেতন হই তবে হয়তো আমরা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব।

আইসিডিডিআর,বি’র মাতৃস্বাস্থ্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক শামস-এল-আরেফিন সারাবাংলাকে বলেন, বাচ্চাদের যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ হয়— এটা কিন্তু স্বাভাবিক বিষয়। আমাদের দেশে প্রথমবারের মতো ড. সমীর কুমার সাহা ও তার মেয়ে ড. সেঁজুতি সাহা মিলে যে কাজটা করেছেন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে অন্তত আমরা বুঝতে পারছি নবজাতকদের কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে। যেহেতু কোভিড-১৯ সম্পূর্ণ নতুন একটি রোগ, তাই এ বিষয়ে অনেক তথ্যই এখনো অজানা। তেমনই একটা অজানা বিষয়ে কাজ করার ফলে অর্থাৎ এই গবেষণার কারণে আমরা অন্তত পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করতে পারি।

তিনি বলেন, যেহেতু নবজাতকদের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে, তাই অবশ্যই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এই ভাইরাস আমাদের আশপাশেই আছে। নবজাতক ও শিশুদের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কারণ তারা কিন্তু বড়দের মতো বলতে পারবে না উপসর্গগুলো। যেহেতু এই গবেষণায় নবজাতকদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে, তাই আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানে নবজাতকদের জন্মের সময় যে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন, তার অভাব দেখা যায়। নবজাতকদের অভিভাবকদের মাঝেও দেখা যায় সচেতনতার অভাব। আবার অনেক সময় উপসর্গহীন হওয়ার কারণেও অনেকে বুঝতে পারে না সংক্রমণের বিষয়ে। আর এতে করে নবজাতক ও শিশুদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে আসলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন