বিজ্ঞাপন

মায়ের জন্য বদলি-হজ্ব পালন হলো না নাজিয়ার

March 13, 2018 | 10:26 pm

জোসনা জামান, স্টাফ করসপনডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নেপালে বিমান দুর্ঘনায় নিহত পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা নাজিয়া আফরিন চৌধুরী আগামী বছর মায়ের জন্য বদলি-হজ্ব পালন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই ইচ্ছে পূরণ হলো না। এর আগে ২০১১ সালে হজ্ব করেছিলেন তিনি। সারাবাংলাকে কথাগুলো বলছিলেন নাজিয়া আফরিনের বড় বোন মিলি চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘নাজিয়া যেমন সবার প্রিয় ছিল তেমনি সবাই ওর প্রিয় ছিল। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল জীবন কাটাতো সে। কেউ তার কাছে এক টাকাও পাওনা নেই। আমরা ১০ ভাই-বোনের মধ্যে ও সবার ছোট হলেও সবার আগেই চলে গেল।’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

ঢাকার সোবহানবাগের ১৪ নম্বর রোডে মঙ্গলবার দুপুরে কথা হয় তার সঙ্গে। এ সময় বাসাজুড়েই ছিল শোকাচ্ছন্ন পরিবেশ। সবাই অপেক্ষা করছেন কখন নেপাল থেকে তার লাশ শনাক্তের খবর পাওয়া যাবে।

বিজ্ঞাপন

মিলি চৌধুরী বলেন, “বিয়ের পর এখনো সন্তান হয়নি ওর। ও ভাগ্নে-ভাগ্নি, ভাইপো-ভাইজি সবাইকে নিজের সন্তানের মতোই ভালবাসত। কারো কোনো সমস্যা হলে সমাধান করে দিত। প্রতিদিন সবাইকে ফোন দিয়ে খবর নিত। যাওয়ার সময় প্লেনে উঠে আমাকে বলেছিল, ‘আপা এখুনি প্লেন ছেড়ে দেবে। দোয়া করিও। তোমার শরীরটা ভাল নেই। এবার ফিরে এসে আগামী মাসে ডাক্তার দেখাতে তোমাকে ভারতে নিয়ে যাব।’ কিন্তু তা আর  হলো না।”

নাজিয়ার সেজ-বোন সাইদা রেজা বলেন, “আমাকেও ফোন দিয়েছিল। বলেছিল, ‘নেপালে পৌঁছে ফোন করব। দোয়া করিও’।”

বিজ্ঞাপন

নাজিয়ার ভাইয়ের ছেলে ফারহান চৌধুরী বলেন, ‘ফুফু প্রতিদিন আব্বুর সঙ্গে কথা বলতেন। খোঁজ খবর রাখতেন।’

ভাগ্নি মিম ও ভাতিজা ইলমি বলেন, ‘আমরা যা চাইতাম তাই তিনি কিনে দিতেন। এমন ভাল মানুষ পাওয়া কঠিন। তিনিই আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন!”

নাজিয়া আফরিন ১৯৭০ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক, ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ভুগোল বিভাগে স্নাতক ও ১৯৯২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান হিসেবে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

বিজ্ঞাপন

‘আমি মায়ের কাছে যাব’

নেপালে বিমান দুঘর্টনায় নিহত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) কর্মকর্তা উম্মে সালমার আড়াই বছরের মেয়ে সামারা বিনতে মাসুদ বার বার কাঁদছেন আর বলছেন, ‘আমি মায়ের কাছে যাব। আমার মা কোথায়। মাকে ডাকো। আমি মায়ের কাছে যাব।’

মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) বিকেলে ঢাকার বেইলী রোডের বেইলী প্রিপারেটরি স্কুলের তিন তলার বাসায় গিয়ে  দেখা যায় এ চিত্র। তাকে কোলে নিয়ে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী উম্মে সালমার ভাসুরের মেয়ে প্রিয়া।

প্রিয়া সামারাকে শান্ত করতে জানপ্রাণই চেষ্টা চালাচ্ছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, “নেপাল যাওয়র আগের দিন চাচী আমাকে ফোন করে বাসায় আসতে বলেছিলেন। আর বলেছিলেন, ‘মেয়েটাকে দেখে রাখিও’।”

সালমার স্বামী মোহাম্মদ মাসুদ উদ্দিন ভূঁইয়া মঙ্গলবারই নেপালে গেছেন। বেইলী স্কোয়ারের বাসায় স্বামী, একমাত্র মেয়ে, বৃদ্ধ শাশুড়ি ও ননদসহ উম্মে সালমা থাকতেন।

উম্মে সালমার ননদ সামিনা আকতার বলেন, ‘সোমবার দুপুর ১২টা তিন মিনিটে আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, একটু পরেই প্লেন ছেড়ে দেবে। দোয়া করিও।

উম্মে সালমা ১৯৭৯ সালের ১১ ডিসেম্বর টাংগাইল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৫ সালে এসএসসি, ১৯৯৭ সালে এইচএসসি ও ২০০৪ সালে বুয়েট থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে সহকারী প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

জিও জটিলতা না হলে বেঁচে যেত দুটি প্রাণ: পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম মঙ্গলবার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওদের দুজনের যাওয়ার কথা ছিল রোববার। সেদিন গেলে হয়ত বেঁচে যেতেন দুটি প্রাণ। কিন্তু সরকারি আদেশ (জিও) না হওয়ায় তারা মঙ্গলবার গেছেন। সেদিনও সোয়া ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্ত জিও হাতে পেতে সকাল ১০টা বেজে যায়। তাই তারা পরবর্তী সময়ে ইউএস বাংলার ফ্লাইটে নেপালে রওয়ানা দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে জলবায়ু ও পরিবেশ সংক্রান্ত এক সম্মেলনে যোগ দিতে তারা যাচ্ছিল। বিমানে উঠে আমাকে ফোনও দিয়েছিল। বলেছিল স্যার আমরা যাচ্ছি। দোয়া করবেন।’ এ সময় ড. শামসুল আলম জানান, বুধবার জিইডি উপ-প্রধান মো. কামরুজ্জামান এবং প্রশাসন বিভাগের উপ-সচিব খলিলুর রহমান নেপালে যাচ্ছেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর শোক: মঙ্গলবার দুপুরে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের ড. শামসুল আলমের কার্যালয়ে ছুটে আসেন। সেখানে তারা বিমান দুঘর্টনার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী দুজনই গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

বিসিএস ইকনোমিক ক্যাডার এসোসিয়েশনের শোক: পরিকল্পনা কমিশনের এ দুজন কর্মকর্তা বিসিএস ইকনোসিক ক্যাডার ছিলেন। তাই এসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী জাহাঙ্গীর আলম এক শোকবার্তায় মঙ্গলবার গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা দুজনই অত্যন্ত মেধাবী, বিনয়ী, ধার্মিক ও সম্ভাবনাময় কর্মকর্তা ছিলেন। এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আত্মার শাস্তি কামনা করছি।’

সারাবাংলা/জেজে/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন