বিজ্ঞাপন

‘সেবার মনোভাব নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আ.লীগের কর্তব্য’

November 8, 2020 | 7:57 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ আদর্শ নিয়েই গড়ে উঠেছে। জনগণের সেবা করাই আমাদের কর্তব্য। সেবার মনোভাব নিয়েই মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। সেই চিন্তা নিয়েই চলবেন, এটা আশা করি।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৮ নভেম্বর) দুপুরে মাদারীপুর, ফরিদপুর ও মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের শপথ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিন সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের শপথ পড়ান। শপথ নেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা শামসুল হক ভোলা মাস্টার ও মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মুনির চৌধুরী। গত ৪ অক্টোবর উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন এ দুজন। এছাড়াও শপথ নেন মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ উপনির্বাচনে বিজয়ী মিছবাহুর রহমান। তিনি ৯৪৪ ভোটের মধ্যে ৬৭৩ ভোট পেয়ে উপনির্বাচনে জয়ী হন। শপথ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। আদর্শ নিয়েই সংগঠন গড়ে উঠেছে। জনগণের সেবা করাই আমাদের কর্তব্য। কাজেই সেবার মনোভাব নিয়েই মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। সেই চিন্তা নিয়েই আপনারা চলবেন, এটা আমরা আশা করি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘দুর্যোগ আসবে আর সেই দুর্যোগ মোকাবিলা করেই আমরা এগিয়ে যাবো। জাতির পিতা নিজেই ৭ই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন যে, আমাদেরকে অর্থাৎ বাঙালিদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। ইনশাল্লাহ আমরা এগিয়ে যাব এবং জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।’

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনে মানুষের আত্মত্যাগের কথা তুলে তিনি আরও বলেন, ‘এত মানুষের রক্ত ত্যাগের মধ্য দিয়েই কিন্তু স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। ৭৫-এর ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা ও ৩রা নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর বাংলাদেশকে একেবারে আদর্শচ্যুত করা হয়েছিল। যে লক্ষ্য, যে আদর্শ বা চেতনা নিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছিল জাতির পিতা শেখ মুজিবের ডাকে; অস্ত্র তুলে নিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় এনে দিয়েছিল, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের উপর জুলুম হয়। আবার কিছু লোক যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল তাদের সঙ্গেও হাত মিলিয়েছিল।’

এটা জাতির জন্য অত্যন্ত দুভার্গ্য দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা স্বাধীনতাই চায়নি, তারা কখনও চায় না এইদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশেষ মর্যাদা নিয়ে চলুক। এদেশে জাতির পিতার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়, ৭ই মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়। পৃথিবীর কোনো দেশ এমন কোন দৃষ্টান্ত দেখাতে পারবে না, তাদের একটা সংগ্রামের ইতিহাস, যুদ্ধ বিজয়ের ইতিহাস এইভাবে বিকৃত করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তাই করা হয়েছিল।’

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১টা বছর এদেশের মানুষ যন্ত্রণা ভোগ করেছে। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসে এবং তখন থেকেই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের জন্য কাজ করলে দেশের যে উন্নতি করা যায়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে এই পর্যন্ত রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছি বলেই বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি।’

দারিদ্র্যের হার, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ জীবনমান উন্নয়নে তার সরকারের মেয়াদে বিভিন্ন সূচকগুলোর কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা আমাদের যে পরিকল্পনা, যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছ থেকে আমরা শিখেছিলাম- আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। তার ফল এদেশের সাধারণ মানুষ পাচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের ভাগ্যের যাতে পরিবর্তন হয়, স্বাধীনতার সুফলটা যাতে সকলের ঘরে ঘরে পৌঁছায়, আমরা সেই নীতি অনুসরণ করেই দেশের কাজ করছি।’

উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে শুধু আমাদের দেশ না সারাবিশ্বই কিন্তু স্থবির হয়ে আছে। এর মাঝেও বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে।

করোনারকালে দলের নেতাকর্মীদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অগ্রণী ভূমিকার কথা স্মরণ করেন এবং যারা করোনাভাইরাস সংক্রমণে মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। পাশাপাশি এখনো যারা অসুস্থ তাদের চিকিৎসা থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবস্থা করাসহ যতটুকু সম্ভব হচ্ছে তাদের পাশে দাঁড়ানো হচ্ছে বলেও অবহিত করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের প্রতি নজর রাখার জন্য অবিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বসেই নিজের পড়াশোনার কাজটা আপাতত চালিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই অবস্থাতেও আমাদের কিন্তু চলতে হবে। যেকোনো অবস্থা মোকাবিলা করতে হবে। করোনাভাইরাসের সময়ে এলো ঘূর্ণিঝড় আম্পান, এরপর বন্যা। একে একে কিন্তু আমাদের সবকিছু মোকাবিলা করে চলতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই কিন্তু মানুষ সেবা পাচ্ছে। মানুষের পাশে আমরা দাঁড়াচ্ছি এবং দাঁড়াতে পারছি।’

গণমানুষের কথা বলার জন্যই কিন্তু আওয়ামী গড়ে উঠেছে- দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছয় দফা, ৭০ নির্বাচনের বিজয়, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়- প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম জাতির পিতা এই আওয়ামী লীগ সংগঠনকে নিয়েই জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেই এই অর্জন এনেছেন। আপনারা আজকে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। জনগণের প্রতি আপনাদের দায়িত্ব আছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা কিন্তু ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রেীকরণের জন্য বাংলাদেশের যে ১৯টি জেলা ছিল সেই জেলার মহকুমাগুলোকে তিনি জেলায় উন্নীত করেন। জনগণের সার্বিক কল্যাণেই তিনি কাজ করেছেন। কিন্তু তিনি সব কাজ শেষ করে যেতে পারেননি। আমরা সরকারে আসার পর থেকেই তিনি যে যে কাজ করতে চেয়েছিলেন সেই লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে এর গতিটা অব্যাহত রাখতে হবে।’

একদিকে যেমন করোনাভাইরাস মোকাবিলা করব, অপরদিকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নটা যাতে হয় সেদিকেও আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন