বিজ্ঞাপন

বিএনপির সক্রিয় নেতা-কর্মীদের তালিকা করছে পুলিশ

March 14, 2018 | 12:54 pm

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বেগম খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়া এবং আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে বিএনপির সক্রিয় নেতা-কর্মীদের তালিকা করছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ (সিএমপি)। তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে জামায়াত-শিবিরেরও।

নগর পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে এই সংক্রান্ত চিঠি গেছে নগরীর ১৬ থানা এবং নগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তাদের কাছে। কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছেন।

সূত্রমতে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি নগর পুলিশের মাসিক অপরাধ সভায় বিএনপির সক্রিয় নেতা-কর্মীদের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। জামায়াত-শিবিরের তালিকা হালনাগাদের সিদ্ধান্তও হয়।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর পুলিশের উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেছেন, আগে বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলের ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা, মহানগর কমিটিতে কারা কারা আছেন সেই তালিকা নগর পুলিশের হাতে ছিল। এখন নিবিড় তদন্ত করে নতুনভাবে সক্রিয় নেতাকর্মীদের তালিকা করার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া একই সভায় মাদকসেবীদের তালিকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে যা নগর পুলিশের ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত বলছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

সভায় সন্ত্রাসী, বখাটে এবং উঠতি বয়সের উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের আড্ডাস্থল চিহ্নিত করে সেখানে নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্তও হয়েছিল বলে সূত্র জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্রমতে, নগর পুলিশের বিশেষ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মোয়াজ্জেম হোসেন ২২ ফেব্রুয়ারি মাসিক সভা শেষেই এই সংক্রান্ত চিঠি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেন। এতে ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তালিকা পাঠানোর কথা বলা হলেও পরবর্তীতে সময় বাড়ানো হয়।

জানতে চাইলে মোয়াজ্জেম হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ক্রাইম কনফারেন্সে তো অনেক সিদ্ধান্ত হয়। সবকিছু মনে থাকে না। তালিকার বিষয়ে কথা হয়েছিল। তবে কিসের তালিকা এখন মনে করতে পারছি না।

তবে তালিকা তৈরির জন্য নগর পুলিশের বিশেষ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপারের দেওয়া একটি চিঠির অনুলিপি সারাবাংলার কাছে সংরক্ষিত আছে।

চিঠি পাবার কথা স্বীকার করে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মহিউদ্দিন সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, কমিটির তালিকা তো আমাদের আছে। এর বাইরে বিগত সময়ে নাশকতার মামলার আসামি কারা, জেলে কারা আছে, কারা বাইরে আছে, কারা সক্রিয়, কারা এখন মিছিল-মিটিংসহ দলীয় কর্মকাণ্ডে নিস্ক্রিয় তাদের তালিকা করছি।এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়।জামায়াত-শিবিরের কারা সক্রিয় তাদের তালিকাও হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সূত্রমতে, বিশেষ শাখার তাগাদার প্রেক্ষিতে নগরীর বাকলিয়া, কোতয়ালীসহ কয়েকটি থানা থেকে বিএনপির বর্তমান ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটির পদ-পদবিতে আছেন এমন সক্রিয় নেতাদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। পদ-পদবিবিহীন সক্রিয় নেতাকর্মীদের তালিকা করার জন্য থানাগুলো সময় চেয়েছে।

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রনব চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, সক্রিয় নেতাকর্মীদের বিষয়টি তদন্ত করে বের করতে হবে। আমরা বিএনপির সভা-সমাবেশের উপর নজর রাখছি। কারা সক্রিয় তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, বিএনপি কিংবা যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের তথ্য আমাদের কাছে আছে। সমস্যা হচ্ছে জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে। কারণ তাদের প্রকাশ্য কোন কর্মকাণ্ড নেই।

সূত্রমতে, ২০১৪ সালের পর থেকে নগরীতে জামায়াত-শিবিরের তালিকা হালনাগাদ করেনি সিএমপি। তাদের সাংগঠনিক কমিটি এবং কর্মকাণ্ড নিয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে আছে নগর পুলিশ।

নগর পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, বর্তমানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলেও যে কোন সময় সহিংস কর্মসূচির দিকে এগুতে পারে বিএনপি। সঙ্গে থাকতে পারে জামায়াত-শিবির। সক্রিয় কর্মীদের নাশকতা ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের নতুন-পুরনো মামলা সচল করার পরিকল্পনাও পুলিশের আছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

জানতে চাইলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত বুঝি না। যারাই নাশকতা-সহিংসতার সঙ্গে জড়িত তাদের প্রতিরোধ করে জনগণকে শান্তিতে রাখা হচ্ছে পুলিশের কাজ। আমরা সেটাই করছি।

রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সুফিয়ান সারাবাংলাকে বলেন, পুলিশের কাজ সন্ত্রাসী-অস্ত্রধারীদের তালিকা করা এবং তাদের গ্রেফতার করে আইনের কাছে সোপর্দ্দ করা। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের তালিকা করা তো পুলিশের কাজ নয়। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুলিশের এই ধরনের কর্মকাণ্ড আতঙ্কের বিষয়।

সারাবাংলা/আরডি/এজেড

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন