বিজ্ঞাপন

টেস্টে উন্নতিতে চাই বেশি বেশি ম্যাচ

November 10, 2020 | 12:01 am

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

কথায় আছে, অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাস পায়। বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্ষেত্রেও অনুরুপ ঘটনাটিই ঘটেছে। দুই দশক হলো টেস্ট খেলছে কিন্তু এখনো তাদের খেলা দেখলে মনে হয় মাত্রই বুঝি শুরু করেছে! কেন এমন হচ্ছে? বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ২০ বছর পূর্তিতে তা জানতে চেষ্টা করেছে সারাবাংলা।

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি মোটেও প্যাঁচানো নয়, একেবারে সহজ, যাকে বলে জলবৎ তরলং। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২০ বছর পরেও বাংলাদেশ স্বরুপে উদ্ভাসিত হয়ে উঠতে পারেনি কারণ, তারা বছরে খুব কম সংখ্যক ম্যাচ খেলে থাকে। আবার প্রথম শ্রেণির ঘরোয়া ক্রিকেট লিগও নিয়মিত খেলেন না। অবশ্য খেলেন না বললে ভুল হবে। তার চেয়ে বরং খেলার সুযোগ হয়ে উঠে না বলাটাই অধিক যুক্তিযুক্ত। আন্তর্জাতিক সিরিজ বা টুর্নামেন্টের ব্যস্ততায় আসলে জাতীয় দলের রাডারে থাকাদের খেলা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।

টিম টাইগার্সের সাম্প্রতিক টেস্ট সিরিজের বাস্তবতায় দেখা গেছে, বছরে তারা সাকুল্যে তিনটি সিরিজ বা ছয়টি ম্যাচ খেলে থাকে। তাও যদি দুই ম্যাচের সিরিজ হয়ে থাকে। আর যদি এক ম্যাচের সিরিজ হয়, সেক্ষেত্রে সংখ্যাটি আরো কমে যায়। ঠিক একারণেই সাদা পোষাকের ক্রিকেটে বিগত ২০ বছরেও লাল সবুজের দলে প্রত্যাশিত উচ্চতা স্পর্শ পারেনি বলে মনে মনে করছেন হাবিবুল বাশার সুমন ও মোহাম্মদ রফিকের মতো ক্রিকেট বোদ্ধারা। তাদের মতে টেস্টের উন্নতিতে চাই বেশি বেশি ম্যাচ।

বিজ্ঞাপন

২০০০ সালের ১০ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে উদ্বেধনী টেস্টে বাংলাদেশর হয়ে খেলা হাবিবুল বাশারের মতে, ‘দেখেন, আমাদের প্রথম চার বছর ছিল শেখার। আমাদর অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে যা খুবই স্বাভাবিক। তবে আস্তে আস্তে আমরা টেস্ট ক্রিকেটে ভালো খেলা শুরু করেছি। এখন কিন্তু আমাদের পারফর্মার একেবারে কম না। পারফর্মার বেড়েছে এবং বিশ্বমানের খেলোয়াড়ও দলে আছে। তবে সমস্যা হলো এখনো আমরা ধারাবাহিক হতে পারিনি। দলে এত পারফর্মার থাকার পরেও আমাদের পারফরম্যান্স ওঠানামা করে। এটা ঠিক যে আমরা বড় বড় দলগুলোকে হারিয়েছি কিন্তু দলের অধারাবাহিকতা আমাকে ভাবায়।’

‘এবার বলি আমাদের ছেলেরা কেন অধারাবাহিক। কারণ তারা বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় না। বেশি বেশি ম্যাচ খেললে আমরা অনায়াসেই এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। বেশি বেশি ম্যাচ বলতে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া প্রথম শ্রেণি; দুটোই। আগে অবশ্য উইকেট নিয়ে একটা ভাবনা ছিল যে ফ্ল্যাট উইকেট হত। এখন কিন্তু সেই সমস্যাটা নেই। প্রায় প্রতিটি ভেন্যুতেই স্পোর্টিং উইকেট হতে শুরু করেছে।’

বিজ্ঞাপন

ঐতিহাসিক সেই ম্যাচের আরেক সদস্য মোহাম্মদ রফিক বলছেন, এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ আগের জায়গাতেই আছে। এবং এই দৈন্যদশা থেকে বেরিয়ে আসতে বেশি বেশি ম্যাচ খেলার বিকল্প নেই বলে তিনিও মনে করছেন।

‘আমরা আগে যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি, আগাইনি। কেন আগের জায়গায় আছি? কারণ আমরা ম্যাচ পাই কম। বাংলাদেশের একটি সিরিজে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বেশি দেখা গেলেও টেস্ট ম্যাচ সংখ্যায় খুব কমই দেখা যায়। এই সংখ্যাটা আসলে বাড়াতে হবে। বছরে আমাদের ন্যূনতম ১২টি টেস্ট ম্যাচ খেলতে হবে। তাহলে দেখবেন এই সমস্যা আর নেই।’

তবে একথা অনস্বীকার্য সময়ের বিবর্তনে ক্রিকেটারদের মানসিকতার বদল হয়েছে। আগে যেমন কোনোরকম পাঁচ দিন পার করে দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে নামত আজ সেখানে জয়ের অভিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই নামে। মাঠের খেলায়ও তার প্রতিফলন দেখা গেছে। প্রবল বিক্রমে হারিয়ে দিয়েছে পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে। বাদ যায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজও। দাপট দেখিয়েছে বিদেশ বিভূঁইয়ে। এই তো ২০১৭ সালের কথা। শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে শততম টেস্ট জয়ের তিলক কপালে পড়ে তবেই দেশে ফিরেছে টিম বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু হালের বাংলাদেশ টেস্ট দল কেমন যেন অচেনা। দৃশ্যটি বিশেষ করে চোখে পড়তে শুরু করেছে ২০১৯ সাল থেকে। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে গত বছরের নভেম্বরে ভারত সফর থেকে। ইন্দোরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচটি দেখে মনে হয়েছে আজও বুঝি টেস্ট মেজাজটাই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সত্বায় জন্ম নেয়নি!

১৯ বছরের সুদীর্ঘ পথ চলায়ও তারা যেন টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাকরণটাই রপ্ত করতে পারেননি! টেস্ট ক্রিকেট মানেই তো ধৈর্য্যের খেলা। গেরিলাদের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা, সেশনের পর সেশন এখানে সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হয়; এই মন্ত্রটাই আজও শেখা হয়ে ওঠেনি লাল সবুজের যোদ্ধাদের! ব্যাটিংয়ে কেমন নবিশ নবিশ একটি ভাব! বোলিং, ফিল্ডিংয়ের অবস্থাও তথৈবচ।

এরপর কলকাতায় সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতেও ওই অভিন্ন দৃশ্য। বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়, এর সবই অনভ্যাসে সৃষ্ট।

লাল সবুজের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ প্রশাসন আগামীতে নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে সচেতন হবে।

সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন