বিজ্ঞাপন

গোড়ায় গলদ উদীয়মানদের

March 14, 2018 | 5:24 pm

জাহিদ-ই-হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

থানা-জেলা-বিভাগ পেরিয়ে আসা তৃণমূল উদীয়মান সেরা খেলোয়াড়রা জাতীয় পর্যায়ে লড়তে এসেছেন। যুব গেমস সেই তৃণমূলদের বের করে আনার জাতীয় ক্ষেত্র। তবে, সুষ্ঠু পরিচর্চা আর কোচিং ছাড়াই বেশিরভাগ ক্রীড়াবিদরা অংশ নিয়েছেন এই জাতীয় পর্যায়ে। তাতে করে যুব গেমসের মূল উদ্দেশ্য কতটা ফুলপ্রসু হবে তাতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

প্রশ্নটা অবান্তর নয়। যুব গেমসের আসা ক্রীড়াবিদদের পর্যবেক্ষণ করলে সহজেই একটি বিষয় পরিলক্ষিত হয় যে, জেলা-বিভাগ পর্যায়ের সেরারা আসলেই কি আধুনিক প্রশিক্ষণ পেয়েছে? নাকি সনাতনেই পড়ে আছে?

অ্যাথলেটিকস-ফুটবল-হকিসহ ২১ ডিসপ্লিন নিয়ে বাংলাদেশ যুব গেমসের এই প্রতিযোগিতা। সারাদেশ থেকে প্রায় ২৮ হাজার ক্রীড়াবিদের মধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে পা রেখেছে ২,৬৬০ জন। লড়াই করছেন ১ হাজার ১১৪টি পদকের জন্য।

বিজ্ঞাপন

দেশে প্রথমবারের মতো এতো বড় খেলাযজ্ঞে সেরারাই উঠে আসবে এমনটাই ধারণা করা যায়। তবে, তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে খেলতে আসা বেশিরভাগ ক্রীড়াবিদই ‘আনকড়া’। সনাতনী পদ্ধতিতেই অর্থাৎ খেলার আধুনিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে নেমে পড়ছে উদীয়মানরা।

বিশ্ব যখন খেলাধুলায় তরতর করে এগিয়ে চলছে, তখন সনাতনী শিক্ষায় বেরিয়ে আসা এই ক্রীড়াবিদদের আগামির পথচলা কতটুকু অগ্রসর হবে সেই বিষয়ে সন্দেহ থেকে যায়। এতে করে আধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরাই আধিপত্য বিরাজ করবে অনুমেয়ভাবেই। যুব গেমসে তাই বিকেএসপির শিক্ষার্থীদেরই দাপট।

তাতে শঙ্কাটা আরও বড়। নতুন মেধাবী খেলোয়াড় বের করে আনার পথটা বাধাগ্রস্থ হবে বলাই বাহুল্য। এতে এতো বড় আয়োজন নিয়ে প্রশ্নই উঠবে স্বাভাবিক। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে, ‘গাছের মূলে পানি না দিয়ে গাছ থেকে ফল পাবার আশা’। সেই আশাটা কতটুকু যৌক্তিক?

বিজ্ঞাপন

আধুনিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে নামানোয় প্রতিভা জেগে উঠছে না বলে মনে করেন ঝিনাইদহ জেলার প্রশিক্ষক সুরাইয়া বেগম, ‘গ্রাম পর্যায়ে আধুনিক শিক্ষাটা প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ প্রয়োজন খেলোয়াড়। এর জন্য প্রশিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তা গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। তবেই মেধাবী উদীয়মান ক্রীড়াবিদ বের করা যাবে।’

যুব গেমসের চাকতি নিক্ষেপ, দীর্ঘ লম্ফ বা উচ্চ লম্ফ খেলাটি দেখলে পরিলক্ষিত হবে, বেশিরভাগ ক্রীড়াবিদই স্টেপিংয়ে সমস্যা আছে। তাতে করে কার্যকর ফলাফল আনা সম্ভব নয় মনে করেন চাকতি নিক্ষেপে স্বর্ণজয়ী বিবি হাজেরা ইমু, ‘আমরা এখনও আগের নিয়ম বা কৌশলেই পড়ে আছি। আধুনিক প্রশিক্ষণ পেলে ফলও আসবে ভালো। কিন্তু তৃণমূলের বেশিরভাগই সেই প্রশিক্ষণটা পাচ্ছে না।’

এই উদীয়মানদের ছোট বয়সেই সেই প্রশিক্ষণটা সবচেয়ে প্রথমে নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বিভাগের প্রশিক্ষক রফিকুল্লাহ আক্তার মিলন, ‘সাফে এক ধরনের মান, এশিয়ায় এক ধরনের মান আর আন্তর্জাতিক এক ধরনের মান নিশ্চিত করতে হয়। তবে, প্রশিক্ষণ আধুনিক হতে হবে খেলোয়াড়দের। সেটা ছোটবেলায় নিশ্চিত করতে হবে ক্রীড়াবিদদের। সেজন্য উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে হবে প্রশিক্ষকদের এবং তাদের প্রান্তিক পর্যায়ে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠাতে হবে। সেটা নিশ্চিত করা গেলে মেধাবী খেলোয়াড় বা পাইপলাইনের সংকট হবে না কখনও।’

বিজ্ঞাপন

ছোট্ট বয়সে ক্রীড়াবিদরা কাঁদার মতো থাকে। যেভাবে প্রশিক্ষণ দিবেন সেটাই রপ্ত করবে। সেজন্য কাজ করতে হবে ফেডারেশনগুলোকে। তাহলে গোড়ায় গলদ অবস্থার মুক্তি হবে উদীয়মানদের। সমস্যার মূলে কাজ করতে হবে সবার। সে দ্বায়িত্বে অবহেলা থাকলে খেলোয়াড় সংকট অব্যাহত থাকবে।

জেএইচ/এমআরপি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন