বিজ্ঞাপন

বেতন বৈষম্য: ২৬ নভেম্বর থেকে কর্মবিরতিতে স্বাস্থ্য সহকারীরা

November 20, 2020 | 12:24 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নিয়োগবিধি সংশোধন করে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের পক্ষ থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিএইসএএ)। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে তারা নিজ নিজ কর্মস্থলে কর্মবিরতি পালন করবেন।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারী— সবাই ১৬তম গ্রেডে বেতন পেয়ে থাকেন। তাদের দাবি— নিয়োগবিধি সংশোধন করে তাদের বেতন যথাক্রমে ১১, ১২ও ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করতে হবে।

শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রবিউল আলম খোকন এই ঘোষণা দেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের এই কর্মবিরতির ফলে আগামী ৫ ডিসেম্বর হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইনসহ দেশের এক লাখ ২০ হাজার আউটরিচ রুটিন টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ থাকবে।

বিজ্ঞাপন

শেখ রবিউল আলম খোকন বলেন, সত্তরের দশকে পরীক্ষামূলকভাবে এসব স্বাস্থ্য সহকারীদের শুধু বসন্ত ও ম্যালেরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব এককভাবে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য সহকারীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে দেশ থেকে বসন্ত ও ম্যালেরিয়া রোগ নির্মূল হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল চালু করা হয় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)। এ কর্মসূচির আওতায় দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ রুটিন টিকাদান কেন্দ্রের কর্মসূচি এককভাবে স্বাস্থ্য সহকারীদের ওপর ন্যস্ত করা হয়। টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাস্থ্য সহকারীরা বর্তমানে ১০টি মারাত্মক সংক্রামিত রোগের (শিশুদের যক্ষ্মা, পোলিও, ধনুষ্টংকার, হুপিং কাশি, ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া ও হামে-রুবেলা) টিকা দিয়ে থাকেন। আমাদের স্বাস্থ্য সহকারীরাই ২০১৩ সালে ২৫ জানুয়ারি ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী ৫ কোটি ২০ লাখ শিশুকে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা সফলভাবে দিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, প্রজাতন্ত্রের পদোন্নতি বিধি অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী তিন থেকে সাত বছর পর পর পদোন্নতি পান। কিন্তু একজন স্বাস্থ্য সহকারী ২০ থেকে ২৫ বছরে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক হতে পারেন না। পদোন্নতি পেলেও স্বাস্থ্য পরিদর্শক হতে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত বছর অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে এমন সময় পদোন্নতি পান যখন চাকরির বয়স বাকি থাকে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মাস। তবে পদোন্নতি হলেও বেতন বাড়ে না এক পয়সাও। উপরন্তু বদলি করা হয় অন্য জেলা বা উপজেলায়।

বিজ্ঞাপন

শেখ রবিউল আলম খোকন বলেন, তৃণমূল এ স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের অর্জনেই বাংলাদেশ আজ টিকাদানে বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। সরকার প্রধান পেয়েছেন সাত সাতটি পুরস্কার। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমুনাইজেশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভ্যাকসিন হিরো উপাধিতে ভূষিত করেন। এ সম্মাননাগুলো অর্জনের একমাত্র কারিগর স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারীরা।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে সারাদেশে যেখানে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে সরকার নিদের্শনা দিয়েছিল, সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল, সে অবস্থাতেও করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। টিকাদান ছাড়াও করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে স্বাস্থ্য সহকারীরা বিদেশ ফেরতদের তথ্য সংগ্রহ করে নিজ নিজ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও পাঠিয়েছেন।

বক্তারা বলেন, ১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দাবি পূরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই দাবি আর পূরণ হয়নি। পরে ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিব আমাদের দাবি মেনে নিয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এ অবস্থায় আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে আমরা ২৬ নভেম্বর থেকে দাবি পূরণের আগ পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করব।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিব মো. ওয়াসিউদ্দীন রানা, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিদর্শক সমিতির সভাপতি দিনেশ চন্দ্র মন্ডল, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগীয় মাঠ কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদুজ্জামান পান্না, বাংলাদেশ হেলথ ইন্সপেক্টর সেক্টরাল অ্যাসোসিয়েশসের ক্রীড়া সম্পাদক মির আব্দুল কাদের, হেলথ অ্যাসিসট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় পরিষদের সম্মনিত প্রধান উপদেষ্টা আবুল ওয়ারেশ পাশা পলাশ, কেন্দ্রীয় দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিব ওয়াসিউদ্দীন রানা, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হাসান কাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক নেজাম উদ্দীন, মুখপাত্র মো. জাকির হোসেন জগলুসহ দেশের ৬৪ জেলা কমিটির নেতা।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এআই/টিআর

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন