বিজ্ঞাপন

বাস্তবায়ন হয়নি ‘হামিদনগর’, ৪ তলা বাড়ি পাচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠের পরিবার

December 12, 2020 | 7:59 am

মো. জাহিদুর রহমান তারিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

ঝিনাইদহ: জেলার মহেশপুর উপজেলার খর্দ্দ খালিশপুর গ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের বাড়ি। ২০০৯ সালে বীরশ্রেষ্ঠের গ্রামের নাম হামিদনগর ঘোষণা করা হলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে ৩ কোটি টাকারও বেশি বাজেটে বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের জন্য নির্মিত হচ্ছে একটি চার তলা বাড়ি। সম্প্রতি শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় চার তলা বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশনের কাজ চলছে।

বিজ্ঞাপন

বীরশ্রেষ্ঠের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার খর্দ্দ খালিশপুর গ্রামের নাম ‘হামিদনগর’ করার ঘোষণা থাকলে তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ২০০৮ সালের ৯ মার্চ শহীদ সিপাহি হামিদুর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ৪নং সেক্টর কমান্ডার বীর উত্তম (অব.) মেজর জেনারেল সিআর দত্ত। জাদুঘর উদ্বোধনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইকবাল গ্রামের নাম ‘হামিদনগর’ ঘোষণা দেন। কিন্তু এখনও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

স্থানীয় এক ঠিকাদার ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের নিয়ন্ত্রণে গত অক্টোবরের ২৬ তারিখ থেকে বাড়ির কাজ শুরু করেন। বাড়ির প্রতিটি ফ্লোরে থাকবে দু’টি ইউনিট। বিশাল এই চার তলা বাড়ি পেয়ে খুশি বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের পরিবার।

শহীদ সিপাহি বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ছিলেন চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার বড়। গত ১৬ অক্টোবর মারা যান তার সেজভাই শুকুর আলী। এর দু’বছর আগে স্ট্রোক করে মারা যান ছোট ভাই ফজলুর রহমান। এছাড়া ২০০৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মারা যান মা কায়দাছুন্নেছা। এখন জীবিত আছেন একমাত্র ভাই হামজুর রহমান ও দুই বোন। প্রতিমাসে সরকারের পক্ষ থেকে এই পরিবারকে ৩৫ হাজার টাকা ভাতা হিসাবে দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের মেজভাই হামজুর রহমান জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন তারা। অন্য কোনো সরকারের আমলে তারা এতো সুবিধা পায়নি। ২৮ অক্টোবর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি হামিদুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। চলতি বছর ছিল এই বীরের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী।

বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান কলেজ ও স্মৃতি যাদুঘরের পাশে সরকারের ৩৭ বিঘা খাস জমি রয়েছে। ২০০৮ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুর রহমান এই জমিতে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ইকো পার্ক তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। তবে তা এখনও শেষ হয়নি। দ্রুত এই কাজ শেষ করার দাবি জানান তারা।

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগোনা জেলার চাপড়া থানার ডুমুরিয়া গ্রামে ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম আক্কাছ আলী মন্ডল, মাতার নাম কায়ছুন্নেছা। ১৯৪৭-এর ভারত বিভাগের পর তাদের পরিবার যশোরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খোর্দ্দ খালিশপুর গ্রামে স্থানয়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন। পরে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের দক্ষিণ পূর্বে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই নামক স্থানে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ২৮ অক্টোবর রাতে ধলইয়ের যুদ্ধে অসীম সাহসিকতা দেখিয়ে এলএমজি চালনারত অবস্থায় শত্রুপক্ষের দুইজনকে ঘায়েল করেন তিনি। এসময় তিনিও নিজেও শত্রুর গুলিতে শাহাদৎ বরণ করেন। পরে এই বীর সৈনিকের লাশ ধলই থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিলে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্গত আমবাসা নামক স্থানে একটি মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকার আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরুপ তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

সুদীর্ঘ ৩৬ বছর পর ২০০৭ সালের ১১ ডিসেম্বর হামিদুরের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে এসে ঢাকার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করে বাংলাদেশ সরকার।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন