বিজ্ঞাপন

‘এই ইসি সংবিধান-মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে’

December 19, 2020 | 4:46 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কে এম নূরুল হুদার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, অসদাচরণকারী উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে চিঠি দিয়েছেন দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। গত ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘নাগরিকসমাজ’ গণমাধ্যমের কাছে তাদের সেই দাবিগুলো প্রকাশ করেন।

বিশিষ্ট ৪২ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমান নির্বাচন কমিশন, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রক্ত এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সংবিধানের ৯৬(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে এই ইসিকে অপসারণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকগণ চিঠি দিয়ে দাবি জানিয়েছেন।

বিশিষ্ট ৪২ নাগরিকের অভিযোগ, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এই ইসি যা করেছে তা গুরুতর অসদাচরণ। সাংবিধানিক পদে থেকে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে তা অতীতের সব রেকর্ডকে হার মানিয়েছে। তাই তাদের অনিয়ম দুর্নীতি ও সমংবিধান লঙ্ঘনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত যদি তাদের আত্মসম্মানবোধ থাকে তাহলে তারা তাদের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন বলে বিশিষ্ট নাগরিকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর বঙ্গভবণে রাষ্ট্রপতির দফতরে বিশিষ্ট নাগরিকদের দাবি সংবলিত চিঠি দেওয়া হয়। চিঠি দেওয়ার পর শনিবার সকালে সাড়ে ১১টায় সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিকের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া চিঠিটি পড়ে শোনান সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সমন্বয়কারী দিলীপ সরকার। এ সময় ওয়েবিনারে সংযুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন, সুজন সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুদমার, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদসহ অনেকে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এই ইসির উচিত পদত্যাগ করা। তারা মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের রক্ত, বঙ্গবন্ধু ও সংবিধানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাই তাদের সামান্যতম আত্নসম্মান থাকলেও তাদের উচিত অন্তত তদন্ত প্রতিবেদনে নির্দোষ না হওয়া পর্যন্ত বিজয়ের মাসে সেচ্ছায় সরে দাঁড়ানো।’

তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন সংবিধান, দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাই সংবিধান লঙ্ঘন, শহীদদের রক্ত, বঙ্গবন্ধু ও সংবিধানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অবমাননা ও কলঙ্কিত করার কারণে তাদেরকে অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনা জরুরি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এই কমিশনের আমলে দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে, চলছে নির্বাচন নির্বাচন খেলা। এই খেলা বন্ধ করতে হলে তাদের অপপসারণ করে বিচারের আওতায় আনার কোনো বিকল্প নেই।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন যেভাবে অনিয়ম করছে তা অতীতের সব রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে। অতীতে অনেক কমিশন নানা কারণে বিতর্কিত হলেও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের ঘটনা এই প্রথম। এটি নজীরবিহীন ঘটনা। বর্তমান কমিশন সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানকে অবমাননা ও কলঙ্কিত করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের উচিত স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে নিজেদের আত্মসম্মানবোধের পরিচয় দেওয়া।’

আবদুল লতিফ মন্ডল বলেন, ’আমরা আশা করি বিশিষ্ট নাগরিকদের এই চিঠি নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাবেন পরামর্শের জন্য। কিন্তু বাস্তবে যা দেখেছি সেটা আদৌ প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে কি না? রাষ্ট্রপতির তাই উচিত হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও এই ধরনের দাবি ও অনুরোধ সংবলিত বিশিষ্ট নাগরিকদের এই চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা।’

বিজ্ঞাপন

ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘গত ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এই ইসি যা করেছে তা গুরুতর অসদাচরণ। তারা আর্থিক অনিয়মও করেছেন। রাষ্ট্রপতি এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তাদেরকে অপসারণ করতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘এই কমিশনের আমলে দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, গণতন্ত্র ভেঙে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রপতি তাদের অপসারণ করবেন আমরা এই দাবি জানাচ্ছি।’

শাহদীন মালিক বলেন, ‘দেশের নাগরিক হিসাবে আমাদের যা করার দরকার ছিল, আমরা করেছি। এখন সরকার যদি এত সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পরেও ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে জনগণ তার বিচার করবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী যেদিন নির্বাচন হওয়ার কথা, সেদিন নির্বাচন হতে হবে। কিন্তু এই কমিশনের আমলে তা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনের আমলে যা ঘটেছে তা নজীরবিহীন। যে নির্বাচন যেদিন হওয়ার কথা ছিল, নির্বাচন হয়েছে তার আগের দিন রাতে। নির্বাচন দিনে হওয়ার কথা ছিল, নির্বাচন হয়ে গেছে আগের দিন রাতে। ফলে এই কমিশন গুরুতরভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। তাই তাদের বিচারের আওতায় আনা দরকার।’

সারাবাংলা/জিএস/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন