বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা উঠছে এনইসিতে

December 23, 2020 | 11:21 pm

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে। আগামী পাঁচ বছরে ১ কোটি ১৯ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি, ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, জিডিপির ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ বিনিয়োগ ও সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রাখা হয়েছে এই পরিকল্পনায়। সার্বিকভাবে এই পরিকল্পনা নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সম্মতিতেই এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) পরবর্তী বৈঠকে (২৯ ডিসেম্বর) অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া উত্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সামনে পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। তিনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী এই পরিকল্পনা শুনে সন্তষ্টি প্রকাশ করে কিছু বিষয়ে পরামর্শও দিয়েছেন।

ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, সকাল ১১টা থেকে দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় নিয়ে পরিকল্পনাটির সারসংক্ষেপ শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘এটি অনেক ভালো পরিকল্পনা হয়েছে। আমি যেরকম চেয়েছি, সেরকমই হয়েছে।’

আরও পড়ুন- করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রণোদনা পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ

বিজ্ঞাপন

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার জানিয়েছেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সারসংক্ষেপ শোনার পর করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ) সামনে রেখে আর্থিক প্রণোদনার একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক পরিকল্পনাগুলো দেখেন প্রধানমন্ত্রী। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেন তিনি। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার স্ট্যাট্রেজি ও অ্যাকশন প্ল্যান আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরতে পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান। আগামী ২৯ ডিসেম্বর এনইসি সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে এই পরিকল্পনাটি।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, অনুমোদন পেলে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত এ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হবে।

বিজ্ঞাপন

কী থাকছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়

প্রধানমন্ত্রীর সামনে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন ড. শামসুল আলম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, পাঁচ বছরের জন্য এই পরিকল্পনায় অর্থনীতি ও সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন দিক অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থনৈতিক দিকগুলোর মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কর্মসংস্থান বাড়ানো, জিডিপি প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতি ধরে রেখে বাড়ানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে কমিয়ে আনা এবং বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানোর দিকে। আমরা আশাবাদী, আগামী পাঁচটি বছরকে সামনে রেখে যেভাবে প্রাক্কলনগুলো করা হয়েছে, সেগুলো অর্জন করা সম্ভব হবে।

৫ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে

৮ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ২২ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং পরিকল্পনার বাস্তবায়নের শেষে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

৫ বছরে ১ কোটি ১৯ লাখ কর্মসংস্থান সৃজন

ড. শামসুল আলম বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগামী পাঁচ বছরে নতুন এক কোটি ১৯ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে ৮৪ লাখ ২০ হাজার এবং প্রবাসে ৩৫ লাখ কর্মসংস্থান ধরা হয়েছে। তবে কর্মসংস্থানের এই লক্ষ্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তুলনায় ১০ লাখ কম।

জিইডির প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ২২ লাখ ৮০ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হবে— দেশীয় ১৫ লাখ ৮০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ১৬ লাখ ২০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ মিলিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি হবে ২৩ লাখ ২০ হাজার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ লাখ ৮০ হাজার— দেশীয় ১৬ লাখ ৮০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই লক্ষ্য কিছুটা কম ২১ লাখ ২০ হাজার— দেশীয় ১৪ লাখ ২০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ। আর পরিকল্পনার শেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশীয় ১৮ লাখ ১০ হাজার ও প্রবাসে সাত লাখ মিলিয়ে মোট কর্মসংস্থান ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ১০ হাজার।

বিনিয়োগ বেড়ে হবে জিডিপি’র ৩৭%

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শেষ বছরে বিনিয়োগের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে মোট জিডিপির ৩৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে অর্থবছরভিত্তিক লক্ষ্য হচ্ছে— চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে জিডিপির ২০ দশমিক ৮ শতাংশ, ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ ও ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ আসবে বিনিয়োগ থেকে।

৫ বছরে মূল্যস্ফীতি নামবে ৫ শতাংশের নিচে

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পাঁচ বছর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ৫ দশমিক ২ শতাংশ, ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি প্রাক্কলন করা হয়েছে এই পরিকল্পনায়।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন