বিজ্ঞাপন

তোমরাই আগামীর বঙ্গবন্ধু

March 17, 2018 | 2:08 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অথবা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কৃতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কমন প্রশ্ন— বড় হয়ে কী হতে চাও? অবলীলায় উত্তর— ডাক্তার হতে চাই! কেউ বা ইঞ্জিয়ার, কেউ পাইলট, কেউ ফ্যাশন ডিজাইনার! কেউ বা বিজনেসম্যান!

কী অবাক করা কাণ্ড! কেউ রীবন্দ্রনাথ হতে চায় না! কেউ নজরুল হতে চায় না! কেউ বঙ্গবন্ধুও হতে চায় না! সবাই যা চায়, তা এমন কিছু নয়! ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, ফ্যাশন ডিজাইনার বা বড় বিজনেসম্যান এ দেশে খুব যে অভাব আছে, তা নয়। তবে একজন বঙ্গবন্ধুর প্রচণ্ড অভাব— এ কথাটা অস্বীকার কারা জো নেই।

অথচ কোনো শিশুকেই শেখানো হয় না বা তার চিন্তার জগতে এই কথাটা ঢুকিয়ে দেওয়া হয় না— বড় হয়ে তাকে বঙ্গবন্ধু হতে হবে! রবীন্দ্রনাথ হতে হবে! অথবা কাজী নজরুল ইসলাম হতে হবে। ধরনীতে যারা আলোর দিশারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন তাদের একজন হতে হবে। ফল যা হবার তাই!— ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়াটাই জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে নিতে বাধ্য হয় শিশুরা!

বিজ্ঞাপন

আজকের এ দিনে কথাগুলো এই জন্যই প্রাসঙ্গিক যে ১৭ মার্চ কেবল জাতীয় শিশু দিবস নয়। এই ১৭ মার্চেই জন্ম নিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলার রাখাল রাজা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ ভূ-খণ্ডে যাঁর জন্ম জাতি হিসেবে আমাদেরকে গৌরবান্বিত করে, যাঁর কর্ম বাঙালি জাতিকে করেছে মহিমান্বিত!

মহাকালের ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, মহাকাল যাদেরকে বিরাট মহিমায় গ্রহণ করেছে, যাদের কর্ম যুগ যুগ ধরে শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করে গোটা মানবজাতি, তাদের শিশুকালও ছিল অন্যদের থেকে আলাদা। সৎ সাহস, মানুষের অধিকার আদায়ে স্বোচ্চার ভূমিকা, ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ে সামনের সাড়িতে এসে দাঁড়ানো, বিপন্ন মানুষের পাশে থাকা এমনকি মানুষের মঙ্গলার্থে নিজের জীবন বিপন্ন করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তও কোনো কোনো শিশুকে নিতে দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

আমাদের খোকা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাক নাম) স্কুলে পড়া অবস্থায় মানুষের অধিকার আদায়ে স্বোচ্চার ছিলেন— এটা সর্বজনবিদিত। শিশু বয়সেই অবিভক্ত বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘স্কুলের চাল (ছাদ) দিয়ে পানি পড়ে। ওটা  ঠিক করে দিয়ে যেতে হবে। সেদিন থেকেই সোহরাওর্দীর প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন টুঙ্গিপাড়ার ছো্ট্ট খোকা শেখ মুজিব।

জনহিতকর কাজের জন্য এ ধরনের সাহস কোনো কোনো শিশুর মধ্যে এখনো আমরা দেখতে পাই। পটুয়াখালীর খরস্রোতা পায়রা নদীতে ব্রিজ নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে ২০১৬ সালে আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন পটুয়াখালী সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু। আমাদের প্রধানমন্ত্রী হাতে এসে পৌঁছে সেই চিঠি। পরম গুরুত্বের সঙ্গে সে চিঠির জবাবও লেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিশ্রুতি দেন পায়রা নদীতে ব্রিজ নির্মাণের।

এই তো কয়েকদিন আগের কথা। রেললাইন ভাঙা দেখে নিজেদের গলার লাল মাফলার উড়িয়ে কোটি টাকার তেলবাহী ট্রেনকে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করল দুই শিশু।

বিজ্ঞাপন

গত ১৯ ডিসেম্বর পাশের একটি ক্ষেত থেকে বাড়ি ফিরছিল রাজশাহী বাঘা উপজেলার ঝিনা গ্রামের দুই শিশু সিহাব হোসেন (৬) ও টিটোন ইসলাম (৭)। এ সময় তারা দেখে রাজশাহী বাঘা উপজেলার আড়ানী স্টেশনের চার শ মিটার পূর্ব দিকে ঝিনা রেলগেটে লাইন ভাঙা। তখন ট্রেন আসতে দেখে গায়ের লাল মাফলার উড়িয়ে সংকেত দেয়। পরে ট্রেনটি থেমে যায়। রক্ষা পায় কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পাদ এবং কয়েকজন মানুষের মহামূল্যবান জীবন।

স্থানীয় ঝিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র সিহাব হোসেন ও টিটোনের বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তাদের দুইজনকে প্রতিমাসে এক হাজার টাকা বৃত্তি এবং এসএসসির পর উচ্চ শিক্ষা অব্যহত রাখার জন্য আরো বেশি কিছু করার প্রতিশ্রুতি দেন।

কে জানে সিহাব হোসেন ও টিটোনের ভেতর থেকে আমরা পেয়ে যেতে পারি আরেকজন বঙ্গবন্ধু। এত ছো্ট্ট হৃদয়ে দেশ ও মানুষের জন্য এত ভালবাসা যারা ধারণ করে, তারা বড় হয়ে আরো বড় কিছু করবে— সেটাই সবার প্রত্যাশা।

গত ৪৭ বছর ধরে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ শহস্র কোটিবার শুনছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ— যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়েছে বাঙালির মানসে৷

কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো পরিণত মানুষ বঙ্গবন্ধুর এই রক্তঝরা ভাষণের পুরো ১৮ মিনিট হুবহু মুখস্ত করেছেন বা হুবহু বলতে পেরেছেন বঙ্গবন্ধুর মতো করে— তা আমরা শুনিনি। অথচ শিশু এনাম হোসেন, লক্ষ্নীপুরের যিয়ান শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাষণ মুখস্তই করেনি। ঠিক বঙ্গবন্ধুর মতো করেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তা উপস্থাপন করছে। ভার্চুয়াল জগতে ইনাম হোসেন ও যিয়ানের ভাষণ শুনে মুগ্ধ হচ্ছে লাখো-কোটি বাঙালি!

শুধু ইমাম হোসেন বা যিয়ান না, প্রথমে নানা, নানি, দাদা, দাদি বা বাবা কিংবা মায়ের কাছ থেকে শোনা, তারপর ক্যাসেট বা সিডিতে শুনে শুনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ মুখস্থ করে ফেলা শিশু এখন অনেক আছে বাংলার জনপদ জুড়ে।

অনেক শিশুই এখন বঙ্গবন্ধুর মতো করে বলতে ভালোবাসে, ‘তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো৷ রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো৷ এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইনশাল্লাহ৷’

অনেক শিশুই আধো আধো বুলিতে গুনগুনিয়ে গেয় ওঠে ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত/ বঙ্গবন্ধু মরে নাই/ তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা/আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা..

সুতরাং আমরা স্বপ্ন দেখতেই পারি আগামী দুই/তিন যুগ পর এদের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে আরেকজন বঙ্গবন্ধু। সার্থক হবে আমাদের শিশু দিবস পালন। পূরণ হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন।

সারাবাংলা/এজেড/একে

 

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন