December 30, 2020 | 4:34 pm
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: যুবসমাজ ও তরুণ-তরুণীদের ‘বিপথে’ যাওয়া থেকে ফেরাতে এবং তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য বিগো লাইভ, টিকটক ও লাইকি মোবাইল অ্যাপ নিষিদ্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে এসব অ্যাপ নিষিদ্ধে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং একইসঙ্গে কেন অ্যাপগুলো বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আবেদন করা হয়।
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান (রবিন)।
রিট দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী মো. জে আর খান (রবিন) সারাবাংলাকে বলেন, ‘রিট আবেদনটি সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষে নিয়মিত আদালত চালু হলে হাইকোর্টের যেকোনো একটি বেঞ্চে দ্রুত উপস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) বিবাদী করা হয়েছে।
রিটে বলা হয়েছে, বিগো-লাইভ অ্যাপের মাধ্যমে তরুণ ও যুবকদের টার্গেট করে লাইভে এসে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব দিয়ে এবং যৌনতার ফাঁদে ফেলে কৌশলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক তরুণ। এ অ্যাপটি মূলত একটি লাইভ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম, যেখানে একজন ব্যবহারকারী তার অনুসারীদের সঙ্গে লাইভ মুহূর্ত শেয়ার করেন। এই অ্যাপের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে আমাদের প্রতিবেশী দেশ তা নিষিদ্ধ করেছে।
রিটে আরও বলা হয়, টিকটক অ্যাপের মাধ্যমে অনেক কিশোর-তরুণ উদ্ভট রঙে চুল রাঙিয়ে এবং ভিনদেশি অপসংস্কৃতি অনুসরণ করে ভিডিও তৈরি করছেন, যাতে সহিংস ও কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট থাকে। স্বল্পবসনা তরুণীরা টিকটকের অশ্লীল ভিডিওতে নাচ-গান ও অভিনয়ের পাশাপাশি নিজেদের ধূমপান ও সিসা গ্রহণ করার ভিডিও আপলোড করছেন। উদ্বেগজনক বিষয় হলো— এসব ভিডিওতে কোনো শিক্ষণীয় বার্তা নেই। উল্টো এসব ভিডিওর মাধ্যমে তরুণ পজন্মের কাছে ভুল বার্তা চলে যাচ্ছে। বিব্রতকর, অনৈতিক ও অশ্লীল ভিডিও যা পর্নোগ্রাফিকে উৎসাহিত করায় এরই মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ায় এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অ্যাপগুলোর মধ্যে এক ধরনের শো-অফের বিষয় থাকে। এই শর্ট ভিডিও ক্রিয়েশন ও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মে গিয়ে তরুণ প্রজন্ম অশ্লীল ভিডিও ছড়াচ্ছে। এসব কাজে সম্পৃক্ত হয়ে একদিকে যেমন তরুণ সমাজ নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের পড়ালেখাও চরম হুমকির মুখে পড়ছে।
রিটকারী আইনজীবী মো. জে আর খান (রবিন) জানান, এসব অ্যাপ তরুণ প্রজন্মকে বিপথগামী করছে। নষ্ট হচ্ছে নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন তারা, হয়ে উঠছেন সহিংস। তরুণ সমাজ এসব অ্যাপের মাধ্যমে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চান এবং নিজেকে জনপ্রিয় ভাবতে শুরু করেন।
এর আগে, এ বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইনজীবী রবিন খান গত ৮ অক্টোবর জনস্বার্থে একটি নোটিশ পাঠান। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রিট দায়ের করেন তিনি।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর