বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন্দর: কমেছে কনটেইনার পরিবহন, অগ্রগতি ধরে রাখাতে সংশয়

January 3, 2021 | 10:38 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার পরিবহন কমেছে। একইভাবে কমেছে বন্দরে জাহাজ আসার পরিমাণও। তবে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন সামান্য বেড়েছে। কিন্তু কনটেইনার পরিবহন কমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর বৈশ্বিক তালিকার ৫৮ ব্যস্ততম বন্দরের অগ্রগতি ধরে রাখতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭ টিইইউস। ২০১৯ সালে হয়েছিল ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ টিইইউস। ২০১৮ সালে ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬ এবং ২০১৭ সালে ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ২২৩ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর।

সদ্যসমাপ্ত বছরে আগের বছরের চেয়ে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার পরিবহন কমেছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ২১০ টিইইউস। কনটেইনার পরিবহন কমেছে প্রায় আট শতাংশ। চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে শতাংশের হারে কনটেইনার পরিবহন সবচেয়ে বেশি কমেছে ২০২০ সালে। এর আগে ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের পর প্রায় ছয় শতাংশ কনটেইনার পরিবহন কমেছিল চট্টগ্রাম বন্দরে।

১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার পরিবহন শুরু হয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কনটেইনার পরিবহনেও সার্বিক অগ্রগতি আসে গত এক দশকে। বৈশ্বিক তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানও গত এক দশকেই ওপরের দিকে যেতে শুরু করে।

বিজ্ঞাপন

গত এক দশকে ৩০ ধাপ এগিয়ে লন্ডনভিত্তিক শিপিং–বিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো এই সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্টের বৈশ্বিক তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান এখন ৫৮তম। ২০১৯ সালে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দর এগিয়ে গিয়েছিল ছয় ধাপ। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরের মধ্যে ৬৪তম।

কিন্তু বৈশ্বিক তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের এই অগ্রগতি ধরে রাখা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে আছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। যদিও তাদের মতে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাবে বিশ্বজুড়েই বন্দরগুলোতে জাহাজ ও কনটেইনার পরিবহনের পরিমাণ কমেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার পরিবহন আট শতাংশ কমলেও প্রতিবেশি দেশ ভারতের চেন্নাই ও মুম্বাই বন্দরে কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারত, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুরসহ প্রতিবেশি বন্দরগুলোর তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ভালো। বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতিতে আমদানি-রফতানি উভয়ই কমেছে। করোনার সংক্রমণ শুরুর পর তো চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রফতানি উভয় জাহাজ হ্যান্ডলিংই প্রায় একমাস বন্ধ ছিল। এখন বৈশ্বিক পরিস্থিতির ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবে আমদানি-রফতানি বাড়বে। তখন চট্টগ্রাম বন্দরেও জাহাজ ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়বে। আমাদের কোনো সমস্যার কারণে তো কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমেনি। এক্সপোর্ট ভলিউম কম হওয়ায় কমেছে।’

বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান অক্ষুন্ন থাকবে কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আশা করছি আমাদের অবস্থানের কোনো হেরফের হবে না। বরং আরও ওপরে উঠবে। কারণ ভারত, শ্রীলঙ্কার অবস্থা তো আমাদের চেয়েও খারাপ। নিশ্চয় বিশ্ব পরিস্থিতির একটা মূল্যায়ন করেই চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান বিবেচনা করা হবে।’

জুনিয়র চেম্বারের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ এলিট সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে কোনো সমস্যার কারণে তো কনটেইনার বা জাহাজ হ্যান্ডলিং কমেনি। সামগ্রিকভাবে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কমে গেছে। সেটার প্রভাব পড়েছে। এখন সরকারের উচিৎ হবে দেশের কোন কোন খাতের রফতানি কমে গেছে সেটা চিহ্নিত করে ইনিশিয়েটিভ নেওয়া যে কীভাবে সেটা বাড়ানো যায়। রফতানি যখন বাড়বে তখন জাহাজ ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংও বাড়বে।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে তিন হাজার ৭২৮টি। ২০১৯ সালে এর চেয়ে ৭৯টি জাহাজ বেশি হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল। সেবছর জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল তিন হাজার ৮০৭টি।

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালেও জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল সদ্যসমাপ্ত বছরের চেয়ে ১৯টি বেশি। সেবছর জাহাজ হ্যান্ডলিং হয় তিন হাজার ৭৪৭টি। ২০১৭ সালে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩৭০টি।

জাহাজ হ্যান্ডলিং কমলেও ২০২০ সালে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন বেড়েছে। সদ্যসমাপ্ত বছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন হয়েছে ১০ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার ৭২৪ মেট্রিকটন। ২০১৯ সালে হয়েছিল ১০ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৭৩৬ মেট্রিকটন। ২০১৮ সালে ৯ কোটি ৬৩ লাখ ১১ হাজার ২২৪ মেট্রিকটন এবং ২০১৭ সালে ৮ কোটি ৫২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪৮ মেট্রিকটন পণ্য পরিবহন করা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনটেইনারে তৈরি পোশাক, ওষুধ, ইস্পাতসহ বিভিন্ন শিল্পপণ্য ও ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়। আর বাংলাদেশ যেসব পণ্য রফতানি করে তার পুরোটাই কনটেইনারের মাধ্যমে হয়।

বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাবে দেশের পোশাক শিল্পখাতে ধস নেমেছে। রফতানি কমেছে তৈরি পোশাক খাতে। এর প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক প্রবৃদ্ধিতেও।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন