বিজ্ঞাপন

পিকে হালদারের মামলায় পক্ষভুক্ত শিক্ষাবিদ-মুক্তিযোদ্ধাসহ ৪ জন

January 4, 2021 | 5:10 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে) দেশে ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত জারি করা রুলের মামলায় চার জনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পক্ষভুক্ত করেছেন হাইকোর্ট।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩ জানুয়ারি) বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

পিপল লিজিংয়ের কাছে পাওনাদার এই চার জন হলেন- সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়ে শিক্ষাবিদ নাশিদ কামাল, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের মেয়ে সামিয়া বিনতে মাহবুব, খালেক মনসুর ট্রাস্টের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত-উর রহমান।

আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, `পিকে হালদারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন চারজনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদেরকে এ মামলায় পক্ষভুক্ত করেছেন। পিপল লিজিংয়ের কাছে পাওনাদার এই চারজনের আবেদন হলফনামা আকারে ৫ জানুয়ারি জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ওইদিন এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।‘

এ ছাড়া এ মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়া আরেকজন উওম কুমার নন্দীর পক্ষেও হলফনামা আকারে আবেদন জমা দিয়েছেন তার আইনজীবী।’

হাইকোর্টে আজ পিকে হালদারের মামলার তদন্ত ও গ্রেফতারের বিষয়ে দুদকের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন।

বিজ্ঞাপন

পরে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, `পিকে হালদারের বিষয়ে সুয়োমোটো রুলটি আজকে আদেশের জন্য দিন ধার্য ছিল। এবং এ বিষয়ে দুদকের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্যও আজ দিন ধার্য ছিল। আমরা প্রতিবেদন দাখিল করেছি। এর মধ্যে পি কে হালদার ও পিপল লিজিংয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন ব্যক্তি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি তাদেরকে এ মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য আদালতে অনুমতি চাওয়ার কথা বলি। পরে ক্ষতিগ্রস্ত চারজন এ মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করলে আদালত তাদেরকে পক্ষভুক্ত করে নেন।‘

একইসঙ্গে আদালত বলেছেন তাদের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আইনজীবী প্রয়োজন হবে না। আগামী ৫ জানুয়ারি উনারা আবেদন দাখিল করবেন এবং এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।`

পি কে হালদারের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, `পি কে হালদার ও পিপল লিজিংয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়ে শিক্ষাবিদ নাশিদ কামালের পেনশনের পুরো ৫০ লাখ টাকা রেখেছিলেন। এখন তিনি একটি টাকাও পাবেন কি না সে বিষয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। তার বড় চাচা সংগীত শিল্পী মোস্তফা জামান আব্বাসীর প্রায় ৩ কোটি টাকা, তার ফুফু প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী ফেরদৌসী রহমানের প্রায় ৩ কোটি টাকা। ওনাদের পরিবারের অনেকেই পিপল লিজিংয়ের টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা পিপল লিজিং বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান দেখে টাকা রেখেছিলেন।`

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের মেয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত সামিয়া বিনতে মাহবুব প্রায় ১ কোটি টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

বিজ্ঞাপন

খালেক মনসুর ট্রাস্টের প্রায় ১০ কোটি রেখে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে ওই ট্রাস্টের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম আজ এ মামলায় পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেছেন।

এ ছাড়া শওকত-উর রহমান নামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৩ লাখ টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

আমরা আদালতকে বলেছি, পি কে হালদারের মামলার যাবতীয় কাগজপত্র ইন্টারপোলের কাছে পাঠানোর জন্য ইংরেজিতে অনুবাদ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যে ইন্টারপোল রেড এলার্ট জারি করেব।`

এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে পরবর্তী তথ্য জানাতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্রসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স (বিএফআইডি) ইউনিটসহ সংশ্লিষ্টদের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

১৭ ডিসেম্বর শুনানির আগে দুদক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউ), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের আইজি, এনবিআরসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে আদালতে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

তারও আগে গত ৯ ডিসেম্বর পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত ও তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চান হাইকোর্ট। পরে এ বিষয়ে ৩ জানুয়ারি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদককে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

ওইদিন উজ্জ্বল কুমার নন্দী এবং অমিতাভ অধিকারী নামে দুই ব্যক্তি পি কে হালদারের এ মামলায় নতুনভাবে পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন করলে আদালত তাদেরকে পক্ষভুক্ত করেন।

এর আগে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পাচার ও লোপাটের অভিযোগে বিদেশে পালিয়ে থাকা পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গত ২ ডিসেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে নিম্ন আদালত।

গত ২ ডিসেম্বর পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার আড়াই মাস পরেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর ওইদিনই বিচারিক আদালত পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য গত ১৫ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালতে আবেদন করে দুদক। একই সঙ্গে বিদেশে পালিয়ে থাকা পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানায়।

এর আগে গত ১৯ নভেম্বর বিদেশে পালিয়ে থাকা পি কে হালদারকে বিদেশ থেকে দেশে আনতে এবং গ্রেফতারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ ও গোয়েন্দা বিভাগ, এনবিআর চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকা জেলা প্রশাসককে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

দুদক সে বিষয়ে ২ ডিসেম্বর লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দেয়।

এর আগে গত ১৮ নভেম্বর দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে এ রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

পি কে হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরে দুই বিনিয়োগকারীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে পি কে হালদারসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

এর মধ্যে দেশে ফিরতে পি কে হালদার এ বিষয়ে আদালতের কাছে আবেদন করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের কাছে একটি চিঠি দেন। এরপর কোম্পানিটি আদালতে আবেদন করে। গত ৭ সেপ্টেম্বর আদালত বলেছেন তিনি কখন কীভাবে আসবেন তা জানাতে। পরে গত ২০ অক্টোবর একটি আবেদন করেছে কোম্পানিটি। যেখানে নির্বিঘ্নে দেশে আসার কথা বলা হয়েছে এবং সেখানে গত ২৫ অক্টোবরের একটি টিকিটের কপিও সংযুক্ত করা হয়।

গত ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট এ বিষয়ে এ আদেশ দেন। আদেশে দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার গ্রেফতার নিশ্চিত করতে বলা হয়। পুলিশের মহাপরিদর্শক, ইমিগ্রেশন অথরিটিরি চিফ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতি এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তবে গত ২৪ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের আইনজীবী জানিয়েছেন- পি কে হালদার গত ২৫ অক্টোবর দেশে ফিরছেন না। এরপর সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) পি কে হালদারের সাক্ষাৎকার গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এমআই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন