বিজ্ঞাপন

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ‘বঙ্গভ্যাক্স’ উৎপাদনের অনুমতি গ্লোবকে

January 6, 2021 | 4:28 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন উৎপাদনের অনুমোদন পেয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৬ জানুয়ারি) প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদ সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, “গ্লোব বায়োটেক এই ভ্যাকসিনের নাম দিয়েছে ‘বঙ্গভ্যাক্স’। দেশে যেকোনো ওষুধ উৎপাদনের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমতি প্রয়োজন হয়। ২৮ ডিসেম্বর গ্লোব বায়োটেককে এই অনুমতি দেওয়া হয়। পরবর্তী ধাপে বিএমআরসি থেকে একটি ইথিক্যাল অ্যাপ্রুভালের প্রয়োজন হবে। এরপরেই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করা হবে।”

উল্লেখ্য, ১ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্লোব বায়োটেক প্রথম জানায়, তারা দেশেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে জন্য কাজ করছে। ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরই তারা এর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের কাজ শুরু করে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড ২০১৫ সালে ক্যানসার, আর্থ্রাইটিস, রক্তস্বল্পতা, উচ্চ রক্তচাপ, অটোইমিউন ডিজিজসহ অন্যান্য দুরারোগ্য রোগ নিরাময়ের জন্য বায়োলজিক্স, নভেল ড্রাগ এবং বায়োসিমিলার উৎপাদনের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক গবেষণাগার স্থাপনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে গ্লোব বায়োটেক গবেষণার পাশাপাশি কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট, টিকা ও ওষুধ আবিষ্কার সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করে। সিইও ড. কাকন নাগ ও সিওও ড. নাজনীন সুলতানার সার্বিক তত্ত্বাবধানে তারা ‘কোভিড-১৯’ প্রতিরোধে টিকা (ভ্যাকসিন) আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে।

২ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে গ্লোব ঘোষণা দেয়, প্রাণীদেহের ওপর এই ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের ট্রায়াল তারা সফলভাবে শেষ করেছে। পরবর্তী ধাপগুলো ঠিকঠাকমতো শেষ করতে পারলে ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে তারা টিকা বিপণন করতে পারবে। এদিন সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদ প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে এই ভ্যাকসিন সম্পর্কে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সফল হয়েছি। অ্যানিম্যাল পর্যায়ে এটা সফল হয়েছে। আশা করছি, মানবদেহেও সফলভাবে কাজ করবে আমাদের ভ্যাকসিন। আমরা বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে যাব। এরপর আমরা তাদের দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।

১০ সেপ্টেম্বর সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে গ্লোব বায়োটেকের ডা. আসিফ মাহমুদ বলেছিলেন, ‘আমরা এর আগে প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালে সাফল্যের কথা আমরা গণমাধ্যমে বলেছিলাম। ওই ট্রায়ালের সাফল্যের পর আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল করছি। প্রাণীদেহের ওপর এই পর্বের ট্রায়ালও প্রায় শেষ। এখন ডেটা কালেকশন চলছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ ডাটা কালেকশন শেষ হতে পারে বলে আশা করছি। এই ডাটা কালেকশন শেষ হলেই সেটি বিশ্লেষণ করে আমরা আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য আবেদন করব বিএমআরসি’র কাছে। সেখানে অ্যানিম্যাল স্টাডির তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন শেষে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য আবেদন থাকবে। অনুমতি পেলে আমরা ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (সিআরও) মাধ্যমে ট্রায়াল শুরু করব।’

বিজ্ঞাপন

সপ্তাহখানেকের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ শেষ করে বিশ্লেষণের পর মানবদেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বর মাসেই শুরু করার বিষয়ে আশাবাদী বলে জানিয়েছিলেন ডা. আসিফ।

১ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) বিভাগের প্রধান ড. আসিফ মাহমুদ সারাবাংলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, তারা তাদের ভ্যাকসিনের নাম দিয়েছেন ‘ব্যানকোভিড’, যা মূলত ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টস এম-আরএনএভিত্তিক ভ্যাকসিন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এই ঘরানার মধ্যে ‘ব্যানকোভিড’ই প্রথম ভ্যাকসিন। আর এটিই প্রাণীদেহে দ্বিতীয় ধাপে প্রয়োগ করে সাফল্য মিলেছে। কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরি পরিচালিত ‘বায়ো আর্কাইভ’ সার্ভারে তাদের এ সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধ ছাপা হয়েছে।

পরবর্তীতে ৫ অক্টোবর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের উদ্ভাবিত টিকা ‘ব্যানকোভিড’ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের সিইও ড. কাকন নাগ। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ভাবিত ব্যানকোভিড টিকাটি ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে প্রথম ও একমাত্র আবিষ্কৃত টিকা। ইতোমধ্যে অ্যানিমেল মডেল ইঁদুরে নিয়ন্ত্রিত ও পূর্ণাঙ্গ প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ব্যানকোভিড সম্পর্ণ নিরাপদ ও কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। যার বিস্তারিত ফলাফল বায়ো-আর্কাইভে (biorxiv) প্রি-প্রিন্ট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বর্তমানে কন্ট্রাক্ট রিসার্স অর্গানাইজেশনের (সিআরও) সঙ্গে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রটোকল তৈরির কাজ করছি। আশা করছি, তারা খুব শিগগিরই বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে (বিএমআরসি) ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নৈতিক ছাড়পত্রের জন্য এই প্রটোকলসহ আবেদন করবেন। বিএমআসির নৈতিক অনুমোদন সাপেক্ষে দ্রুততম সময়ে তারা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছেও প্রটোকলস ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার জন্য আবেদন করতে পারবেন।’

বিজ্ঞাপন

১৪ অক্টোবর মানবদেহে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন ‘ব্যানকোভিড’ ট্রায়ালের জন্য দেশে ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের সঙ্গে আইসিডিডিআরবি এক সমঝোতা স্মারক সই করে। ওই সময় আইসিডিডিআরবি’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আলম জানিয়েছিলেন, গ্লোব বায়োটেকের এই টিকা তিন হাজার মানুষের ওপর ট্রায়াল দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘প্রাণীদেহে ট্রায়ালের পর্যালোচনা করবে আইসিডিআরবি। তারপর মানবদেহে ট্রায়ালের জন্য মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল বিএমআরসি ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন চাওয়া হবে। সেটি পাওয়ার পর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে।’ তবে কবে নাগাদ ট্রায়াল শুরু হবে এমন প্রশ্নে নির্দিষ্ট কোনো সময় বলতে পারেনি গ্লোব বায়োটেক।

১৭ অক্টোবর দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ‘ব্যানকোভিড’কে তালিকাভুক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটির তালিকায় গ্লোব বায়োটেকের আবিষ্কৃত তিনটি ভ্যাকসিন অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন