বিজ্ঞাপন

উপজেলা পরিষদের কাজে ইউএনওদের ‘খবরদারি’ প্রশ্নে রুল জারি

January 7, 2021 | 10:29 am

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: উপজেলা পরিষদে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পালন করাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৬ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

এ ছাড়া দাফতরিক কার্যক্রমে উপজেলা পরিষদের স্থানে উপজেলা প্রশাসন লিখে ইউএনওর কাজকর্ম পরিচালনা করার বিধান এবং উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

উপজেলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ১৭টি বিভাগের স্থায়ী কমিটি গঠিত হয়ে থাকে। এসব কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনওকে) সভাপতি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করা হয়ে থাকে। এ বিধান কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

দাফতরিক কাজের ক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের স্থানে উপজেলা প্রশাসন লিখে ইউএনওরা আনুষ্ঠানিকভাবে কাজকর্ম পরিচালনা করে করে থাকেন। যা সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

সংবিধানের ৫৯ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে।’ অর্থাৎ আইন অনুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসিনক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া উপজেলা পরিষদ নামক স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান স্থাপনকল্পে প্রণীত আইনের ৩৩ ধারায় বলা হয়েছে- ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা পরিষদের সচিব হইবেন।’ উপজেলা পরিষদ আইনের এই ধারাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

আদেশের বিষয়টি সারাবাংরাকে নিশ্চিত করে রিটের পক্ষের আইনজীবী হাসান এম এস আজিম বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটিতে উপজেলা চেয়ারম্যানকে পাশ কাটিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দায়িত্ব পালন করেন। আর উপজেলা চেয়ারম্যানকে ওই কমিটিতে রাখা হলেও তাদের কম গুরুত্বপূর্ণ পদে (উপদেষ্টা) রাখা হয়।’ ইউএনরা নিজেরাই উপজেলা পরিষদের স্থানে উপজেলা প্রশাসন লিখে কাজ করেন যা সাংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

‘এ ছাড়া উপজেলা আইনের ৩৩ ধারায় ইউএনরা উপজেলা পরিষদের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন। কিন্ত ওনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হওয়ায় তাদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) লিখে থাকেন তাদেরই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এর ফলে উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। আদালত এ সব বিষয়ে রুল জারি করেছেন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।’

এর আগে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি, পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ হাওলাদার, নরসিংহদীর মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু, গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিনা পারভীন, কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আজাদ এবং চট্টগ্রাম উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তারসহ পাঁচজন গত মাসে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ বিষয়ে রিট দায়ের করেন।

বিজ্ঞাপন

উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগেও আওতায় যে ১৭টি স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে। সেগুলো হলো-

আইন-শৃঙ্খলা কমিটি; যোগাযোগ ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন কমিটি; কৃষি ও সেচ প্রকল্প; মাধ্যমিক ও মাদরসা শিক্ষা কমিটি; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কমিটি; স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কমিটি; যুব ও ক্রীড়া কমিটি; সমাজকল্যাণ কমিটি; মহিলা ও শিশু উন্নয়ন কমিটি; মুক্তিযোদ্ধা কমিটি; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কমিটি; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় কমিটি; সংস্কৃতি কমিটি; বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ, পরিদর্শন ও নিয়ন্ত্রণ কমিটি; অর্থ বাজেট, পরিকল্পনা ও স্থানীয় সম্পদ আহরণ কমিটি; পরিবেশ ও বন কমিটি এবং জনস্বাস্থ্য স্যানিটেশনও ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ কমিটি।

এই ১৭টি কমিটির দায়িত্ব পালন তথা- কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিব বাছাই বা নির্ধারণ করা নিয়েই উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউএনওদের মধ্যে মূলত ভিন্নমত দেখা দেয়।

উপজেলা পরিষদকে কার্যকর ও গতিশীল করতে এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইইএনওদের মধ্যে কাজের সমন্বয় বাড়াতে এ রিট করা হয় বলে জানান রিটের পক্ষের আইনজীবী হাসান এমএস আজিম।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এমআই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন