বিজ্ঞাপন

পরিণত ক্রিকেট আচরণ এমনটাই হওয়া উচিত

March 18, 2018 | 8:33 am

।। রফিকউল্লাহ রোমেল, ম্যানেজিং এডিটর ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : কিছু বিষয় বোধ করি পরিস্কার হয়নি শুক্রবার (১৬ মার্চ) বাংলাদেশ – শ্রীলঙ্কা ম্যাচের ক্রিকেট আলোচনার পর। সব কিছু সবার কাছে অনুপূংখরূপে পরিস্কার করা খুব কঠিন। যদি পাঠক শ্রোতা এই ভূমের হন আর আলোচনাটি ফেসবুকে হয়ে থাকে। তবুও চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।

সাকিব আল হাসান এ ম্যাচে যেই কাজটি করেছেন সেটি আইন সম্মত নয়, কোনোভাবেই নয়। এর মাঝে কোন “যদি” “কিন্তু” নেই। আইসিসি বা অন্য কোনো সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট সংস্থা যদি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ডাকবারও কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

ব্যবস্থা নেওয়া বলতে “ডিমেরিট” পয়েন্ট থেকে শুরু করে আইসিসি বাইলজের নির্দেশিত যে কোনো ব্যবস্থা হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

আমরা এক্ষেত্রে শুধু “আশাই” করতে পারি যে অন্তত আজকের (রোববার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে শুরু) খেলায় যেন চরম কোনো ঘটনা না ঘটে। এসব ক্ষেত্রে অনেক ধরনের ঘটনা হয়। খেলা শুরুর এমনকি ঘণ্টাখানেক আগেও সমন আসতে পারে।

ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান খেলার পরপরই ক্ষমা চেয়েছেন। প্রেস কনফারেন্সে পেশাগত আচরণ দেখিয়েছেন। এমনকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সর্বোচ্চ ম্যানার দেখিয়ে আনুষ্ঠানিক বার্তায় ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। আমার বিশ্বাস ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে পেশাগত আচরণই করেছে।

পরিণত ক্রিকেট আচরণ এমনটাই হওয়া উচিৎ। বোর্ড বা চুক্তিভুক্ত খেলোয়াড়রা ফ্যান রি-অ্যাকশনের কথা মাথায় রেখে কাজ করবে, করবে আইন ও নীতি অনুযায়ী। যা হয়েছে, তাতে একটা ম্যাচিউরড অ্যাটিচিউড আছে নিঃসন্দেহে। এত কিছুর পরেও সাকিব ব্যান হয়ে গেলে সেটা খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনাই হবে – বটমলাইন!

বিজ্ঞাপন

এবার আসল কথায় আসি। ’৭১ সালে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়, তার ঠিক শুরুটা পুরোপুরি আইন মেনে হয়েছে বলা কঠিন। সেটা একটা ‘কু আইনের’ বিরুদ্ধে আইনসম্মত অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের সূচনা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুক্তি সংগ্রাম আইন মেনে হয় না। কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধ করে, তারা আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মতো যুদ্ধ করেই বেড়ায় না শুধু।

বিশ্ব ক্রিকেটে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত নতুন কিছু নয়। সেটা ইচ্ছাকৃত হোক বা না হোক। ভারতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মানেই একসময় কিংবদন্তি ছিল। অস্ট্রেলিয়রা পিছিয়ে ছিল না। ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে একটু একটু করে। এলিট প্যানেল আসে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এলিট প্যানেল যুগেও বাংলাদেশ এর ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। এক অশোকা ডি সিলভার কারণে অনেক সম্ভাবনা জাগানিয়া ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে। বগুড়ার স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে প্রথম হারানোর ম্যাচেও ঘটে যেতে পারত উল্টো ঘটনা। এমনকি আমাদের নিজেদের আম্পায়াররাও আমাদের বিরুদ্ধে কিছু উল্টো পাল্টা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আর গত বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া ঘটনা তো ইতিহাসের অক্ষয় অংশ হয়ে রইবে…।

এখন লিমিটেড ওভারের টি-টোয়েন্টি খেলায় একটার বেশি ওভার দ্য শোলডার বল করা যায় না। করলেই দ্বিতীয়টা পরিস্কার নো বল। সেই পরিস্কার নো বলটা যখন আম্পায়ার ডাকতে ভুল করেন, তখন সেটা মেনে নিয়েই খেলা চালাবেন না একটা আউট অফ দ্য বক্স মাইন্ড গেম প্লে করবেন – সাকিব আল হাসান এই জায়গাতেই একটা রোল প্লে করেছেন।

তিনি ব্যাপারটা মেনে নেন নাই। মেনে না নেয়ার উদাহরণ ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটে অনেক আছে। যেই গাভাস্কার এই ঘটনায় সাকিবের শাস্তি চেয়েছেন, তিনি নিজেই অনুরূপ আচরণ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলায় এলবিডব্লুর শিকার হয়ে।

বিজ্ঞাপন

সব সময় সব অভব্য আচরণের বিরুদ্ধে সবাই একভাবে প্রতিবাদ করতে পারে না। সাকিবের স্টাইল বা কোহলির স্টাইলের সাথে মাশরাফি বা ধোনির স্টাইলের মিল নাই। বিশ্ব ক্রিকেটের খুব ঠান্ডা প্রকৃতির ক্যাপ্টেন মিসবাহর ও লাইন ক্রসের উদাহরণ আছে। এই যে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার – এটা শুধু বাংলাদেশের বেলায় হয় না। জিম্বাবুয়ের হয়। আফগানিস্তানের হয়। আয়ারল্যান্ডের হয়। অনেক অনেক বেশি সাউথ আফ্রিকার সাথেই হয়। কিন্তু ব্রডকাস্টার/মিডিয়া কাভারেজ, ফ্যানবেজ আর ক্রিকেট বোর্ডের মাসলের কারণে সেগুলো হয়ত কোনদিন ঠিক মত সামনেই আসে নাই। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা ভিন্ন। এদেশের ক্রিকেট খেলা মানেই কোটি কোটি গ্লোবাল টিভি দর্শক। আর সব ক্রিকেট মিডিয়ার অনিবার্য চোখ।

এমন একটা জায়গায় একটা স্টেটমেন্ট তৈরি করতে পারা বা একটা ম্যাসেজ দিতে পারা ক্রিকেট ইকোসিস্টেমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাতে করে আম্পায়ারের ভুলের ব্যাপারগুলো অনেক বড় হয়ে সামনে আসবে। যতবার সাকিবের শাস্তির জন্য শুনানি বা আপিল হবে (আপিল হবে না মনে হয় এই ক্ষেত্রে) ততবার এই ভুলের বিষয় সামনে আসবে। ততবার মিডিয়ায় এটা হেডলাইন হবে। ততই বেশি ক্রিকেট নিয়ন্ত্রকদের টনক নড়ার কথা। তাতে শুধু বাংলাদেশ ই নয়, ক্রিকেট বিশ্বের যারাই ভুল/বাজে আম্পায়ারিং এর স্বীকার, তাদের সবার উপকার হবে।

সাকিবের এই কথিত “বেয়াদবি” বা উদ্ধত আচরণ তাঁর নিজের জন্য নয়। নিজের ব্যক্তিগত কারণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উদ্ধত আচরণ সাকিব এর আগে করেননি এমন নয়। কিন্তু শুক্রবার ঘটনাটি পুরোপুরি দলের জন্য, দলের স্বার্থে আর দলের হয়ে। এমন মিডিয়া ফ্ল্যাশি আচরণ সাকিব ছাড়া অন্য কেউ করতে পারতেন না হয়ত। আর এমন আচরণ না করলে সাকিবকেও ঠিক সাকিব মনে হত না। ব্যাপারটা তার নিজের জন্য আত্মঘাতি হতে পারে। কিন্তু এই আত্মঘাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের পুরো ঠকে যাবার কিছু নেই।

অবশ্যই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি মোটেই কাম্য নয়। অধিনায়ক হিসেবে তো নয় ই। তবুও এমন মাইন্ড গেম খেলতেও একটা লেভেল লাগে। যেই লেভেলটা আমাদেরকে এখন জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, এমনকি সাউথ আফ্রিকা থেকেও মাঝে মাঝে পৃথক রাখবে।

সাকিব আর বাংলাদেশ দলের জন্য শুভ কামনা রইল। ফ্যানরা যৌক্তিক সীমারেখায় সাকিবের পিছনে থাকুক। দিন শেষে পারফরম্যান্স আর ফলাফলটাই থাকে শুধু, আদবী – বেয়াদবী নয়।

সেই কঠিন পরীক্ষায় জয় এখন অনিবার্য।

আপডেট: সাকিবকে ম্যাচ ফির ২৫ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে। সাকিব আপিল করেন নি। অপরাধ স্বীকার করেছেন। তাই আর শুনানির দরকার হয়নি।

সারাবাংলা/টিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন