বিজ্ঞাপন

এবার বিদ্যুতের আলো জ্বলবে পদ্মার চরে

January 14, 2021 | 12:25 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: শতভাগ বিদ্যুতায়নের এক মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। এরইমধ্যে দেশের গ্রিড এলাকার শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে সরকার। অফগ্রিডে থাকা প্রত্যন্ত, দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন এলাকার যে এক শতাংশ বাকি রয়েছে তা আগামী মার্চের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সেই হিসেবে মুজিববর্ষেই গ্রিড-অফগ্রিড মিলে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন হবে।

বিজ্ঞাপন

এই শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে এবার অফগ্রিডে থাকা ফরিদপুরের পদ্মার চর অঞ্চলের ১০ হাজারেরও বেশি পরিবার বিদ্যুতের আলো পেতে যাচ্ছেন। দুর্গম এই চরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিতে কাজ করছে সরকার। ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফগ্রিড এলাকা পদ্মার চরে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিষয়টি তুলে ধরে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে লিখেছেন, ‘ফরিদপুরের পদ্মার চরের মানুষের মাঝে রীতিমতো উৎসব শুরু হয়ে গেছে। অনেকদিনের অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। দুর্গম এই চরের ১০ হাজারের বেশি পরিবার এবার বিদ্যুতের আলোয় নিজের ঘর আলোকিত করতে পারবে।’

তিনি আরও লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী এবং আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। দুর্গম পাহাড় থেকে চরাঞ্চল, বিল পেরিয়ে মাঠ পেরিয়ে বর্তমানে গ্রিড এলাকার শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে গেছে। এখন কাজ চলছে অফগ্রিড যেসব এলাকা রয়েছে সেখানকার মানুষের কাছে বিদ্যুতের আলো পৌঁছানোর। প্রতিটি ঘরে আলো পৌঁছাতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আমাদের বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিটা কর্মী।’’

বিজ্ঞাপন

ফরিদপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি তাদের অফগ্রিড এলাকা পদ্মার চরে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু করেছে। মালামাল বড় নৌকা করে যখন চরের ঘাটে ভিড়েছে তখন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকারকে সামনে রেখে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নে কাজ করছে। এরইমধ্যে আরইবির আওতাধীন ৪৬২টি গ্রিডভুক্ত উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতায়ন শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে ২৮৮ উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধন করেছেন। বাকিগুলো উদ্বোধনের অপেক্ষায়।

আরইবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দীন জানান, এই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কারণে অনেক এলাকার অর্থনৈতিক চিত্র বদলে গেছে। মানুষের জন জীবনে উন্নতি এসেছে।

বিজ্ঞাপন

আরইবির বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৮২ লাখ। আরইবি বলছে, দুর্গম প্রত্যন্ত চরাঞ্চলেও অবস্থিত অফগ্রিড একটি উপজেলাসহ (পটুখালীর রাঙ্গাবালি) ১ হাজার ৫৯টি গ্রামে চলমান শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ দ্রুত শেষ হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতের শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমে এই অঞ্চলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করায় বিদ্যুৎ সুবিধা পেতে যাচ্ছে এই প্রত্যন্ত এলাকার ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। যারা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেননি তাদের ঘরেও বিদ্যুতের আলো আসবে।

বিদ্যুতের আলো এখন দেশের অধিকাংশ প্রত্যন্ত অঞ্চলেই পৌঁছে গেছে। কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলা একেবারেই সীমান্তবর্তী এলাকায়। সেখানকার রামকৃষ্ণ ও চিলমারী ইউনিয়ন দুর্গম চর এলাকায় অবস্থিত। এই দুটি চর এলাকায় প্রায় ২০০ বছর থেকে মানুষের বসবাস। বিদ্যুতের আলো পৌঁছাবে এই দুর্গম চরে তা কখনো কেউ কল্পনাও করেনি।

গত রোববার (৩ জানুয়ারি) দৌলতপুরের রামকৃষ্ণ ও চিলমারী ইউনিয়নেও বিদ্যুতের আলো পৌঁছে গেল। কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য কারোয়ান জাহান বাদশা এখানকার একাংশের বিদ্যুতায়নের কাজের উদ্বোধন করেছেন।

কাজ চলছে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দেশের সবচেয়ে দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালি উপজেলায়। রাজশাহী, লালমনিরহাটের চরাঞ্চলেও নদ-নদীর তলদেশ থেকে সাবমেরিন কেবল টেনে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে আরইবি।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে। যদিও চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে নয়। সে হিসাবে চাহিদার চেয়ে অর্ধেক পরিমান বিদ্যুৎ সরবরাহের স্বক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন এর দ্বিগুণ হবে। সে লক্ষ্যে এখনি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। সূত্রে জানা গেছে, এরইমধ্যে গ্রিডভুক্ত এলাকার শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ অর্থাৎ ৯৯ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি এক শতাংশ আগামী মার্চ মুজিবর্ষেই শেষ করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/জেআর/এমআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন